বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সুযোগ আছে জার্মানিতে

আহমেদ শাকিল
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২০ পিএম

আহমেদ শাকিল, শিক্ষার্থী, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ ডামস্টাড, জার্মানি
ইউরোপের অন্যতম সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ হলো জার্মানি। আর এই সমৃদ্ধ অর্থনীতির যোগানদাতা হিসেবে রয়েছে বিশ্বখ্যাত বড় বড় সব কোম্পানিগুলোর নাম। বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ, ফলক্স ভাগেন, মার্ক, সিমেন্সের দেশ জার্মানি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উদ্যমী তরুণ-তরুণীরা স্বপ্ন দেখে এসব খ্যাতনামা কোম্পানিগুলোতে ওয়ার্ক স্টুডেন্ট, ইন্টার্নশীপ ও ফুল টাইম জব করার। এই কারণেই জার্মানির শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে রয়েছে অনেকের কৌতূহল।
সেই কৌতূহলের জায়গাটা আরও পাকাপোক্ত করার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রয়েছে জার্মানির টিউশন ফি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। একজন বিদেশী শিক্ষার্থী নামমাত্র সেমিস্টার ফি প্রদানের মাধ্যমে সহজেই পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারে। মজার ব্যাপার হলো, পার্ট টাইম কাজের মাধ্যমে পড়াশুনার পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থী নিজের ছোট ছোট শখগুলোও পূরণ করতে পারে। আর অর্জনের ঝুলিতে জমা হয় বিশ্ব মানের সব অভিজ্ঞতা, আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলো ভ্রমণের সুযোগ তো রয়েছেই। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্যও জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে।
জার্মানিতে পড়ার জন্য যা যা খেয়াল রাখতে হবে
মাস্টার্স শ্রেণিতে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই। সাধারণত জার্মানিতে বিদেশি যে কোন ছাত্র পড়তে আসতে হলে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ জার্মানির একটি ব্যাংকে এক বছরের জন্য ব্লক করে রাখতে হয়, এটাকে বলা হয় ব্লক একাউন্ট। এটা মূলত শিক্ষার্থীদের নিজস্ব খরচ পরিচালনার জন্য এক বছরের একটা গ্যারান্টি মাত্র যার একটা নির্দিষ্ট অংশ প্রতি মাসে শিক্ষার্থীদের নিজ একাউন্টে চলে আসে। এই ব্লক একাউন্টের পরিমাণ বর্তমানে ১১,৯০৪ ইউরো, কিন্তু যারা স্কলারশিপ পান তাদের এই ব্লক একাউন্ট করা লাগেনা।
সাধারণত জার্মানিতে দুই ধরনের শিক্ষা বৃত্তি ব্যাপক জনপ্রিয় একটি হল ইরাসমাস মুন্ডাস এবং আরেকটি হলো ডিএএডি। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদের বিভিন্ন শিক্ষা বৃত্তি চালু রয়েছে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে ভর্তি হওয়ার পর সেগুলোর আবেদন করতে হয়। সাধারণত দুই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে একটি হল হকশুলে বা ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস আর অন্যগুলো হল বিশ্ববিদ্যালয় অথবা টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথমটির শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটাই ব্যবহারিক ও তুলনামূলক ভাবে সহজ যাতে থাকে বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ, আর দ্বিতীয়টি তাত্ত্বিক ও তুলনামূলক ভাবে একটু কঠিন।
সাধারণত দুটি সেমিস্টারে ভর্তি নেয়া হয়। সামার সেশন ও উইন্টার সেশন; তবে উইন্টার সেশনেই বেশিরভাগ বিষয়ে ভর্তির সুযোগ থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যাবতীয় কাগজপত্র অনলাইনে আপলোড করে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। এক্ষেত্রে দুইভাবে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায় একটি হচ্ছে ইউনিসিস্টের মাধ্যমে। আরেকটি হচ্ছে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে। কিভাবে আবেদন করতে হবে তার সকল তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া থাকে।
জার্মানিতে যদিও ব্যাচেলর কোর্সে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক কম কেননা ব্যাচেলর কোর্সের বেশিরভাগ বিষয় জার্মান ভাষায় পড়ানো হয়। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো হয় এমন অনেক বিষয় রয়েছে যাতে বিদেশি শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারে। তবে, বাংলাদেশ থেকে এইচএসসি পাশ করে জার্মানিতে আসতে হলে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ২৫% ক্রেডিট শেষ করা শেষ হলে আবেদন করা যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যাচেলর ও মাস্টার্সে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা ৬ মাসের একটি সেমিস্টারের জন্য জার্মানির ও ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসার সুযোগ পায়। দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বরাবরের মতোই এই সুযোগটি থেকে বঞ্চিত। তবে সরকারিভাবে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও এ সুযোগটি পেতে পারে। এতে শিক্ষার্থীরা ছয়মাসে এমন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে যা তাদেরকে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিতে ব্যাপক সহায়তা করতে পারে।
একটা বিষয় হচ্ছে, ইংরেজিতে পড়ানো হয় এমন কোর্সের সংখ্যা মাস্টার্স লেভেলে অনেক বেশি। মাস্টার্স শ্রেণিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও জার্মানিতে অনেক বেশি। তাই বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি। পিএইচডি আবেদন করার জন্য মূলত শিক্ষার্থীরা যেসব বিষয়ে আগ্রহী সেসব বিষয়ের ডিপার্টমেন্ট সুপারভাইজর অথবা প্রফেসরদের সাথে পরামর্শ সাপেক্ষে আবেদন করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা চুক্তি সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন।
সমৃদ্ধ ভবিষ্যত ও নিজেকে বিশ্বের সামনে উপস্থাপনে আগ্রহ থাকলে প্রস্তুতি নিন জার্মানিতে পড়তে আসার। বিদেশের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখুন।
লেখক: আহমেদ শাকিল, শিক্ষার্থী, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ ডামস্টাড, জার্মানি