ভোরের কাগজের ৩৪ বছরে পদার্পণ: সংকটেও সম্ভাবনার হাতছানি

ইখতিয়ার উদ্দিন
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১৮ এএম

ছবি: ভোরের কাগজ
প্রিয় বাংলাদেশ এখন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে; যার ছায়া পড়েছে ভোরের কাগজের ওপরও। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে নানামুখী সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে দেশের সংবাদমাধ্যম। ভোরের কাগজও এর ব্যতিক্রম নয়। হঠাৎ করেই সরকারি বিজ্ঞাপন প্রাপ্তিতে ধস নামায় পত্রিকার আর্থিক সংকট তীব্র হয়েছে। সম্পাদক শ্যামল দত্ত কারারুদ্ধ। অন্য কর্মীরাও নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন ও হচ্ছেন। এই সুযোগে একটি মহল ভোরের কাগজের কর্তৃত্ব দখল ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তাদের প্ররোচনায় কর্মীদের একটি অংশ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সবমিলিয়ে ঐতিহ্যবাহী জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয়ার এক হীন প্রয়াস দৃশ্যমান।
এই সংকটের ঘূর্ণাবর্তের মধ্যেই প্রতিষ্ঠার তেত্রিশ বছর পেরিয়ে ৩৪-এ পা রাখলো ভোরের কাগজ। বলতে দ্বিধা নেই যাত্রা শুরুর পর থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে সংবাদমাধ্যমটিকে। কখনো বিজ্ঞাপন বন্ধ বা কমানো হয়েছে। কখনো হামলা মামলার শিকার হতে হয়েছে। আবার কোনো কোনো সময় প্রভাবশালী মহল থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই দমে যায়নি ভোরের কাগজ। সব রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই প্রবল বিক্রমে অব্যাহত রেখেছে অগ্রযাত্রা।
আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ভোরের কাগজ কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর প্রতি অনুরক্ত নয়। ভোরের কাগজ মুক্তচিন্তার দৈনিক, মুক্তপ্রাণের প্রতিধ্বনি। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে স্বাধীন ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাই আমাদের প্রত্যয়। আমরা সবসময় সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতে বদ্ধপরিকর। ভোরের কাগজ এদেশের গণমানুষের কথা বলে এসেছে নিরন্তর। আমরা জনগণের আকাঙ্খাকে নির্মোহভাবে তুলে ধরেছি পত্রিকার পাতায়। সত্য ও ন্যায়ের পাশে থেকেছি জন্মলগ্ন থেকেই। এটাই আমাদের পথচলার মূলমন্ত্র। হয়তো এ কারণেই বারবার অপশক্তির চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে ভোরের কাগজ।
এতসব বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা পিছু হটিনি। লক্ষ্যে অবিচল থেকে, সব বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে ভোরের কাগজ আজ এদেশের আপামর জনগণের মুখপাত্র। সারা দেশ এবং রাষ্ট্রীয় সীমানার বাইরে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছেন আমাদের অগণিত পাঠক, লেখক ও সুহৃদ। ভোরের কাগজ এখন সবার আস্থা ও ভালোবাসার প্রতীক।
অগ্রযাত্রা ৩৪ বছরে এসে বড় রকমের হোঁচট খেলো ভোরের কাগজ। বিগত দিনে নানা রকম বিপদ-বিপত্তি মোকাবিলা করতে হলেও এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি কখনো। সম্পাদক শ্যামল দত্তের নেতৃত্বে যখন একটি পরিবার হয়ে কাজ করছিল ‘টিম ভোরের কাগজ’; তখনই এলো অভাবনীয় আঘাত। এবারের সংকট একেবারে অভিনব ও বিস্ময়কর। তবে আমরা হাল ছাড়িনি। প্রতিকূলতা সামাল দিয়ে আবারো ঘুরে দাঁড়াবো। কারণ আমাদের রয়েছেন দক্ষ কাণ্ডারী ও একঝাঁক সাহসী নাবিক। ভোরের কাগজের প্রকাশক সাবের হোসেন চৌধুরী আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব। একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে তার ভাবমূর্তি সর্বজনবিদিত। তিনি আমাদের সাহস দিয়েছেন, প্রেরণা যুগিয়েছেন। ভোরের কাগজের প্রতি নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের পাশে আছেন এক দৃঢ়চেতা বটবৃক্ষ হয়ে। আর আছেন উদ্যমী সংবাদকর্মীরা, যারা ‘জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়’।
কাজেই থামবে না ভোরের কাগজ; আমরা এগিয়ে যাবো দৃঢ়চিত্তে, সফল পদক্ষেপে, এটাই আমাদের অঙ্গীকার। তেত্রিশতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই লগ্নে আমাদের সব পাঠক লেখক ও শুভাকাঙ্খীকে জানাই অফুরন্ত শুভকামনা ও ভালোবাসা। সেই সঙ্গে সবার প্রতি আবেদন রইলো দুঃসময়ে আমাদের পাশে থাকুন। আপনাদের সমর্থন ও সহযোগিতা আমাদের প্রেরণার বাতিঘর।
লেখক : বার্তা সম্পাদক, ভোরের কাগজ