‘গুলি করলে একটা মরে’ বলে ভাইরাল কে এই ইকবাল

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৩২ এএম

ছবি: সংগৃহীত
গুলি করে মানুষ মারার নৃশংসতায় এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেন পুলিশের সাবেক উপকমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন।
দেয়ালে দেয়ালে এখন শোভা পাচ্ছে গ্রাফিতি। যাতে লেখা– ‘গুলি করি, মরে একটা। একটাই যায় স্যার। বাকিডি যায় না।’ ফেসবুকও সয়লাব হয়েছে এই দেয়ালচিত্রে।
কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলন ঘিরে মানুষ মেরে ফেলার মতো কঠিন কাজ করেও বাক্যগুলো যিনি অবলীলায় বলেছেন, তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের সদ্য সাবেক উপকমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন।
ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালানোর একটি ভিডিও দেখিয়ে সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ওপরের কথাগুলো বলেছিলেন ইকবাল। সে সময় মন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে আগ্রহ নিয়ে এটি দেখেন সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাংগীর আলম ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ইকবালকে বলতে শোনা যায়, ‘গুলি করে করে লাশ নামানো লাগছে স্যার। গুলি করলে মরে একটা, আহত হয় একটা। একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না। এইটা হলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের এবং দুশ্চিন্তার বিষয়।’ মোবাইল ফোনে থাকা ভিডিওতে লাশ দেখিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘এই যে ডেডবডিটা নামাইছি স্যার। কোমরে বেল্ট আর নিচে প্যান্ট ছিল।’
মানুষ হত্যার ঘটনার বর্ণনার সময়ও ইকবালের চেহারায় বিন্দুমাত্র অস্বস্তি দেখা যায়নি। তার সহকর্মী একাধিক একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২৭তম বিসিএসের পুলিশ কর্মকর্তা ইকবাল সদ্য সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন।
কক্সবাজারের টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কে তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে ২০২০ সালের জুলাইয়ে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। সে সময় ইকবাল কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন। এ ঘটনায় জেলার পুলিশ সুপারসহ অন্যদের সঙ্গে তাকে বদলি করা হয়।
ইকবাল ১৯৮১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর মনোহরদী থানার খিদিরপুর ইউনিয়নের পীরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষক বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন।
ইকবাল গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্যানতত্ত্বে স্নাতকোত্তর করেন। পরে মৌলভীবাজার জেলায় বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি শুরু করেন ইকবাল।
২০০৮ সালে তিনি ২৭তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হন। শুরুতে ডিএমপির কন্ট্রোল রুমে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগ দেন। পরে হাবিবুর রহমানের আস্থাভাজন হয়ে ওঠলে সিলেট মহানগর পুলিশের এসি হন ইকবাল। ২০১৬ সালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদোন্নতি পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বদলি হন। প্রায় ২ বছর পর কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি হন। পুলিশে দক্ষতা ও সাহসিকতার স্বীকৃতি বিপিএম (সেবা) পদক পেয়েছেন তিনি।
এর আগে ২০০১ সালে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়ে ডিবির স্পেশাল অ্যান্ড সাইবার ক্রাইম ইউনিটের (দক্ষিণ) উপকমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। তবে হাবিবুর রহমান ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর গত বছরের ৯ নভেম্বর ইকবাল ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার যেসব স্থানে বড় জমায়েত হয়, তার মধ্যে অন্যতম ওয়ারী বিভাগের আওতাধীন যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া ও কদমতলী। আন্দোলন দমাতে প্রাণপণ চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে ডিসি ইকবালের বিরুদ্ধে। এসব এলাকায় সহিংসতা ও পুলিশের গুলিতে বহু প্রাণহানি হয়।
ইকবালের ব্যাচমেট, নিম্ন পদবি ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, আন্দোলন দমনে ডিএমপির যেসব কর্মকর্তা ‘অতি বল প্রয়োগ’ করেছেন, ইকবাল তাদের মধ্যে অন্যতম। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন না হলে তিনি হয়ে উঠতেন আরো ক্ষমতাধর। ৫ আগস্টের ঘটনায় ইকবালকে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।
সম্প্রতি তার বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর সোমবার রাতে ডিবি হেফাজতে নেয়া হয় ইকবালকে। মঙ্গলবার দিনভর আটকের খবর আলোচনায় ছিল। তবে পুলিশের কাছ থেকে তাকে হেফাজত কিংবা আটকের বিষয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ইকবালের ব্যক্তিগত ফোনটিও পাওয়া যায় বন্ধ।
আরো পড়ুন: আজ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ২০তম বার্ষিকী
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি, দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ইকবাল তাদের হেফাজতে নেই। আটকের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।