×

অন্যান্য

ডিপ্রেশন কেন হয়? জেনে নিন মুক্তির উপায়

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২১ পিএম

ডিপ্রেশন কেন হয়? জেনে নিন মুক্তির উপায়

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্বপ্রথম এর চিকিৎসার প্রয়োজন। ছবি : সংগৃহীত

কোনো বিষয়ে কষ্ট পেলে বা চিন্তা করতে থাকলে সেই চিন্তা দেহের স্বাভাবিক কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। ভারসাম্য ব্যাঘাত ঘটায় দেহের হরমোনের। আমরা নিজেরাই আমাদের জীবনের চাহিদাকে সবক্ষেত্রে এতটাই বেশি করে ফেলি যে তার তুলনায় প্রাপ্তি কম হলেই সেটাই আমাদের মানসিক অবসাদ এ পরিণত হয়, আর দিনের পর দিন এটা চলতে থাকলে সেটা ডিপ্রেশন এ রূপান্তরিত হয়।

যে কেউ ডিপ্রেশনের কবলে পড়তে পারে। তবে সবার ডিপ্রেশনের কারণ এক নয়। মানুষের জীবনযাত্রা যেমন আলাদা ঠিক তেমনই ডিপ্রেশনও আলাদা। একজন ব্যক্তি অট্টালিকার উপরে বসে থাকলেও তার জীবনে ডিপ্রেশন উঁকি দিতে পারে। আবার একজন নুন ভাত খেয়েও শান্তিতে দিন যাপন করতে পারে। তাই ডিপ্রেশন এর সঙ্গে অর্থের কোনো সম্বন্ধ নেই।

কি কি কারণে ডিপ্রেশন জীবনে প্রবেশ করে?

অপমান বোধ

যদি কোনো ব্যক্তি অন্য একজনের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত অপমানিত হয় তাহলে যখন তার মনের মধ্যে চরম আঘাত লাগবে তখন সে ডিপ্রেশন এ ভুগবে। এটা দেখা দেয় যারা একটু লাজুক ধরনের মানুষ, যাদের আত্মমর্যাদাটা অন্যের কথার ওপরে নির্ভর করে, নিজেকে সব সময় অন্য সবার থেকে কম ভাবে, যারা নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে তাদের ডিপ্রেশন এ ভোগার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়।

একাকিত্ব

কোনো মানুষ যদি অনেক লোকজন পছন্দ করে, কোলাহল পছন্দ করে, কিন্তু কোনো কারণে সে যদি পরে একাকী জীবন যাপন করতে বাধ্য হয় কিংবা অন্য কারো কথায় আঘাত পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয় সে তখন নিজেকে অসহায় বোধ করে এবং একাকিত্বের যন্ত্রণা তার মনে অসহ্য হয়ে কাটার মতো বিঁধতে থাকে আর পরবর্তীতে সেটাই ডিপ্রেশন এ পরিণত হয়। কিংবা যারা দিনের পর দিন একা থাকে বিশেষ কারো সঙ্গে মেশে না তারা ও অনেক সময় নিজেকে পৃথিবীর মধ্যে অসহায় ব্যক্তি মনে করে ডিপ্রেশনে ভোগে।

বংশগত কারণ

কিছু কিছু পরিবারে এমন অনেক ব্যক্তি থাকেন যারা তাদের বংশের বোঝা বয়ে ডিপ্রেশন এর শিকার হন। এদের সব বিষয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। একটা সহজ সরল কথাও সহজ ভাবে না ভেবে জটিল আকার তৈরি করে, ফলে নার্ভে সব সময় চাপ সৃষ্টি হয়। এভাবে চলতে চলতে একটা সময়ের পরে মনে ডিপ্রেশন বাসা বাঁধে। এমন অনেক পরিবারই আছে যাদের বংশে একজন না একজন ডিপ্রেশনের শিকার হয়।

বর্তমান জীবনে কোনো বড় পরিবর্তন এলে

মানুষের জীবন সব সময় এক নিয়মে চলে না। চলতি পথে এমন অনেক সময় আসে যেই সময়টা পুরো জীবনেরই মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এই সময়ে যারা নিজেকে সামলাতে জানে তারা অনেক দৃঢ় এগিয়ে যায় কিন্তু যারা এই ধাক্কা সামলাতে না পারে তারা ডিপ্রেশন এ চলে যায়। ধরুন কেউ একজন কোনো বড় অফিসে চাকরি করে, কোনো একটি কারণে তার চাকরিটা চলে গেল। এই সময় তার আগের জীবন যাত্রায় পরিবর্তন আসবে, তার পরিবারের বিলাসিতা বন্ধ হবে, তার চলার ধরণ পাল্টে যাবে, ফলে এই সময় সে যদি নিজেকে শক্ত করে না ধরে থাকতে পারে তাহলে তার মনে ডিপ্রেশন আসাটা কেবল সময়ের অপেক্ষা। তাই জীবনে হঠাৎ যদি কোনো বড় পরিবর্তন আসে তাহলে তাকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

ডিপ্রেশন এর লক্ষণ-

হতাশা, রাগ, দুঃখ, সব সময় মন খারাপ হওয়া ভাব, মনে সংশয়, দোদুল্যমানতা, বিরক্তি, খিদে ও ঘুম ভীষণ কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া, কারো সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে না করা, শব্দ বা আলোতে বিরক্তি, হঠাৎ করে প্ল্যানিং ছাড়াই দেহের ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া, মাথা ব্যথা, সব কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগা, কোনো কিছুতেই আনন্দ না পাওয়া বা মনোনিবেশের অভাব, সারা গায়ে, হাতে পায়ে ও পেটে  ব্যথা অনুভব করা, ক্লান্তি, নিজেকে সব কিছু থেকে সরিয়ে নেয়ার প্রবণতা।

এর মধ্যে যে কোনো পাঁচটি বা ততোধিক লক্ষণ যদি আপনার মধ্যে দু’সপ্তাহের ও বেশি সময় ধরে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া আপনার জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে। কারণ এই সব সমস্যা বেশি দিন ধরে পুষে রাখা মানে রোগকে আরো জটিল করা। অর্থাৎ মাইনর ডিপ্রেশন টার্ন করতে পারে মেজর ডিপ্রেশনে। অবশ্য ডিপ্রেশন কে কোনো অর্থেই কিন্তু জটিল রোগ বলা উচিত হবে না। বরং এটাকে বলা যেতে পারে অসুবিধা। এটা মন খারাপ থেকে তৈরি হওয়া শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা থমকে যেতে পারে, কমতে পারে জীবনের মান।

মেজর ডিপ্রেশন

যখন ডিপ্রেশন এর লক্ষণগুলো অত্যন্ত প্রকটভাবে দীর্ঘদিন ধরে বহাল তবিয়তে থাকে অথবা কিছু দিন পর পরই দেখা দেয় তখন তাকে মেজর ডিপ্রেশন বলে। মেজর ডিপ্রেশন থেকেই আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়।

মাইনর ডিপ্রেশন

মাইনর ডিপ্রেশন জীবনের কোনো একটা সময়ে কোনো দুঃখজনক ঘটনা বা পরিবেশের কারণে দেখা দেয়। এই সময় কাছের মানুষের সান্নিধ্য ভীষণ প্রয়োজন হয়।

অ্যাটিপিকাল ডিপ্রেশন

এটা মেজর ডিপ্রেশনেরই একটা ধরণ। যদিও এক্ষেত্রে ওষুধ এবং সাইকোলজিকাল কাউন্সেলিং এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। এই সময় মানুষের সঙ্গে কথা বলা উচিত। মনোরম পরিবেশে যাওয়া দরকার তাহলে কিছুটা হলেও মন থেকে ডিপ্রেশন চলে যাবে।

অবসাদগ্রস্ত মানুষ জনের রক্তে ভিটামিন-ডি এর অভাব থাকলেও ডিপ্রেশন আসে। তবে ভিটামিন - ডি এর সঙ্গে ডেফিশিয়েস এর মধ্যে অবসাদ বা ডিপ্রেশন সম্পর্ক নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন।

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়-

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্বপ্রথম এর চিকিৎসার প্রয়োজন। এবং সঙ্গে আরো বেশি করে প্রয়োজন কাছের কোনো মানুষের, যে তাকে খুব ভালো করে বোঝে, জানে, এবং মনের যত্ন নিতে পারবে এমন কোনো প্রিয় মানুষ তাকে একটু সঙ্গ দিলে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া খুব সহজ হয়ে উঠবে। এছাড়াও মেডিসিন, দেহের ওজন বাড়তে দেবেন না, পুষ্টিকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত।

মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়াটা কোনো সমস্যা নয়, সমস্যা হলো মানসিক অবসাদের কবলে পড়া। যখন মানুষ নিজেকে নিয়ে নিজে খুশি না হয়, নিজের খুশির ভার তুলে দেয় অন্যের হাতে, নিজের ভালো থাকাটা নির্ভর করে অন্যের ওপরে তখনই মানুষ ডিপ্রেশন এ ভোগে। কারণ আপনি তো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। আপনাকে কেউ কম ভালোবাসলে আপনি কষ্ট পান, আপনাকে কেউ দেখতে খারাপ বললে আপনি দুঃখ পান, কেউ আপনার থেকে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে গেলে আপনার নিজেকে অপরাধী মনে হয়। তার মানে আপনার হাতে কিছু নেই, আপনি জীবন নির্ভর করেন অন্যের ইচ্ছা অনুসারে তাহলে আপনাকে একবার নয় বারবার ডিপ্রেশন এ ভুগতে হবে। তাই ডিপ্রেশন এর হাত থেকে রেহাই পেতে চাইলে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করুন।

আরো পড়ুন : খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

জয়ার চোখে নিজের সেরা পাঁচ সিনেমা

জয়ার চোখে নিজের সেরা পাঁচ সিনেমা

নির্বাচনের তারিখ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হয়নি: সিইসি

নির্বাচনের তারিখ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হয়নি: সিইসি

৮ হাজার পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ, আবেদন শুরু

৮ হাজার পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ, আবেদন শুরু

ভারতে রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ৩৪

ভারতে রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ৩৪

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App