রাসেল ভাইপার ধরতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার প্রত্যাহার

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪, ১০:২২ পিএম

ছবি : প্রতীকী
রাসেলস ভাইপার সাপ জীবিত অবস্থায় ধরতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা প্রত্যাহার করেছে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ। রবিবার (২৩ জুন) ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ আলী আশরাফ পিয়ার স্বাক্ষরিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
এর আগে ২০ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংক্রান্ত আলোচনাসভায় জেলার নেতারা জনস্বার্থে রাসেলস ভাইপারের প্রাদুর্ভাব ও করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক ও সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ইশতিয়াক আরিফ ঘোষণা দেন, যদি কেউ নিজেকে রক্ষাকারী পোশাক সম্বলিত হয়ে এবং সাবধানতা অবলম্বন করে জনস্বার্থে রাসেলস ভাইপার জীবিত অবস্থায় ধরতে পারেন তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।
এ ঘোষণার পরে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়ে। পুরস্কার পেতে বিভিন্ন জায়গায় সাপ মারার উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের দুর্গম চরের ৩৮ দাগ এলাকায় শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে জমিতে ঘাস কাটার সময় একটি রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পেয়ে সেটি লাঠি দিয়ে মেরে ফেলেন ওই গ্রামের মুরাদ মোল্লা (৪৩) নামে এক কৃষক। এরপর তিনি সাপটি পদ্মা পাড়ি দিয়ে সিঅ্যান্ডবি ঘাটে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন আবু ফকিরের অফিসে নিয়ে যান। আবু ফকির তখন সাংবাদিকদের জানান, মুরাদ মোল্লাকে সভাপতি ঘোষিত পুরস্কার দেয়া হবে।
তবে জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা এই পুরস্কার ঘোষণার পরে বন বিভাগ থেকে এটি আইনসিদ্ধ নয় বলে সমালোচনা করা হয়। এরপর অবশ্য জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়- জীবিত অবস্থায় রাসেল ভাইপার ধরতে পারলে পুরস্কার দেয়া হবে।
শনিবার সকালে পদ্মার চর থেকে একটি জীবিত রাসেল ভাইপার সাপ ধরেন রেজাউল নামে এক যুবক। সন্ধ্যায় পাতিলের মধ্যে একটি জীবিত সাপ নিয়ে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে হাজির হন সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের কাদেরের বাজার এলাকার রেজাউল নামে এক ব্যক্তি।
রেজাউল বলেন, নেতারা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। এজন্য রিস্ক নিয়ে ধরছি। এখন বন বিভাগে জমা দিতে আসছি। তবে রবিবার দুপুরে ফরিদপুরের বন বিভাগের অফিসে সাপটি নিয়ে গেলে তাকে সাপসহ ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়।
আরো পড়ুন : রাসেলস ভাইপারের প্রাদুর্ভাব কমাতে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা
ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া বলেন, ‘এ ধরনের পুরস্কার ঘোষণা করাই তো অবৈধ। মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা। আমরা এটা প্রমাণ করতে যাবো কেন? ওই কৃষকের উচিত হবে যেখান থেকে সাপটি ধরেছে ওই স্থানে ছেড়ে দেয়া।’
এদিকে রবিবার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক পুরস্কারের ঘোষণা প্রত্যাহারের বিষয়টি জানিয়ে সবাইকে রাসেল ভাইপার সাপ মারা বা ধরার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানান। তিনি ফেসবুক পোস্টে বলেন, জীবিত বা মৃত কোনো প্রকার রাসেল ভাইপারের জন্য কোনো পুরস্কার নেই। বর্তমানে রাসেল ভাইপার একটি আলোচিত বিষয়, পাশাপাশি জনগণের জন্য হুমকি স্বরূপ। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক বিধায় যে কোনো পুরস্কার বা কৌতূহলবশত এ সাপ নিয়ে অতি উৎসাহী হবেন না। জীবিত বা মৃত কোনো প্রকার রাসেল ভাইপারের জন্য কোনো পুরস্কার নেই।
তিনি লিখেন, সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না। প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করুন অথবা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে অবহিত করুন।
সভাপতির ফেসবুক স্ট্যাটাসের পরে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ আলী পীয়ার স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২০ জুন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তক্রমে রাসেল ভাইপার সর্প সম্পর্কিত একটি ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। যা প্রকৃতপক্ষে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন পরিপন্থি। বিষয়টি বন ও পরিবেশ আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধায় জেলা আওয়ামী লীগ সর্বসম্মতভাবে রাসেল ভাইপার সংক্রান্ত ঘোষণাটি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।