
প্রিন্ট: ০১ জুন ২০২৫, ০৭:০৫ পিএম
আরো পড়ুন
শেখ হাসিনার বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কেন বিমান পাঠায়নি ভারত, জানা গেল কারণ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৮ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
শেখ হাসিনাকে অনেকেই গত এক দশক ধরে ‘আয়রন লেডি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর, বাংলাদেশে এমন একজন প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবেন, তা হয়তো অনেকেরই ভাবনায় ছিল না। বাংলাদেশের ইতিহাসে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর কোনো নেতা এভাবে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়নি।
৫ আগস্ট, ২০০৭ তারিখে শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা প্রতিবেশী দেশ ভারতে পাড়ি জমাতে বাধ্য হন। তবে তার দেশত্যাগের আগে রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত একাধিক নাটকীয় ঘটনা ঘটে।
৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত তিনি বারবার ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করেন। শেখ হাসিনা ভারতীয় কর্মকর্তাদের বলেন, ঢাকার কোনো বিমানে চড়তে তিনি নিরাপদ বোধ করছেন না। বিশেষভাবে নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালকে তিনি একাধিকবার জানান, আমি দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমার সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। জনগণ ও সেনাবাহিনীও আমার বিরুদ্ধে চলে গেছে। আমার প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছাড়তে হবে, তাই যদি ভারত বিমান পাঠায়, তবে আমি নিরাপদে দেশত্যাগ করতে পারব।
তবে হাসিনার অনুরোধ সত্ত্বেও ভারতীয় পক্ষ থেকে বিমান পাঠানো হয়নি। ভারত কেন বিমানের ব্যবস্থা করেনি, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা রয়েছে।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, দোভাল হাসিনাকে বলেন, আমরা দেখছি কী করা যায়। দিল্লিতে তখন একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক বসে, এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়া হয়। পরে বলা হয়, ভারতীয় সরকার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়, হাসিনাকে তাদের বিমান দিয়ে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশকে বলুন তারা নিজ দায়িত্বে হাসিনাকে দিল্লি পাঠানোর ব্যবস্থা করুক। ঢাকায় পরিস্থিতি তখন অত্যন্ত অস্থির হয়ে উঠেছিল। জনতার তীব্র ক্ষোভের মধ্যে গণভবন দখল হওয়ার আশঙ্কা ছিল। সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও উদ্বেগ ছিল। এমন পরিস্থিতিতে, হাসিনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সেনাবাহিনীর জন্য খুবই কঠিন ছিল এবং বিশাল জনদল মোকাবিলা করতে গিয়ে অনেক প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল।
এদিকে, আতঙ্কিত হাসিনা দেশ ছাড়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। তিনি সেনা কর্মকর্তাদের কাছে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। যে কোনো উপায়ে আমাকে দিল্লি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক, বলে তিনি চাপ দেন। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এই বিষয়ে তার সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং পরে সবাই একমত হন যে, হাসিনাকে বিদেশে পাঠানো উচিত। এরপরেই বাংলাদেশ সরকার নিজ বিমানে হাসিনাকে দিল্লি পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
তবে প্রশ্ন হলো, ভারত কেন তার বিমান পাঠায়নি? কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, ভবিষ্যতের রাজনীতির কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ভারতীয় নেতারা যুক্তি দেন যে, হাসিনাকে যদি ভারত নিজ বিমান দিয়ে নিয়ে যায়, তা হলে আন্তর্জাতিক মহলে নানা প্রশ্ন উঠবে। এমনকি, অন্য দেশগুলোও মনে করতে পারে যে, ভারত তার নিরাপত্তা জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীকে এমনভাবে উদ্ধার করেছে, যা রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের জনগণ ইতোমধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব পোষণ করে থাকায়, এটি ভারতীয় সরকারের জন্য একটি বড় ঝুঁকি হতে পারতো।
এছাড়া, আরেকটি কারণ ছিল—ভারত প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে, বাংলাদেশই তাদের প্রধানমন্ত্রীকে বাধ্য করেছে দেশ ছাড়তে।
একটি দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার যখন হাসিনাকে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়, তখন ভারত কর্তৃপক্ষ তাদের হুঁশিয়ারি দেয়, যদি তারা হাসিনাকে দ্রুত না পাঠায়, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। হাসিনা দেশ ছাড়ার আগে একটি তিন পৃষ্ঠার লেখা প্রস্তুত করেন। তিনি তার প্রেস টিমের একজন সদস্যের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেন, তবে সেই সদস্য বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন। হাসিনা ওই লেখাটি ভ্যানিটি ব্যাগে করে নিয়ে যান দিল্লি। দিল্লি পৌঁছানোর পর, রাত ১২টার দিকে তিনি তার কয়েকজন বিশ্বস্ত সহকর্মীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন এবং ওই লেখার প্রসঙ্গটি ওঠে, তবে তার বিস্তারিত বিষয় এখনো জানা যায়নি।