সীমান্তে নতুন করে চরম উত্তেজনা, ভারতের রাষ্ট্রদূতকে তলব

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:২৩ পিএম
শূন্যরেখার কাছাকাছি কাঁটাতারের বেড়া দেয়াকে কেন্দ্র করে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ফের চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর জেরে রোববার বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে ব্যাখ্যা চেয়েছে ঢাকা। এর পরদিনই ১৪ জানুয়ারি দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নূরুল ইসলামকে ডাকল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর আগে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার সীমান্তে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়।
বিকালে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকের পরে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মা সাংবাদিকদের বলেন, অপরাধশূন্য সীমান্ত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যাতে চোরাচালান, মানবপাচার ও অপরাধীদের চলাচল রোধ করা সম্ভব হয়।
প্রণয় ভার্মা জানান, নিরাপত্তার জন্য বর্ডার ফেন্সিংয়ের ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে একটি সমঝোতা আছে। দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এর জন্য যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। আমরা আশা করি, যে সমঝোতা হয়েছে সেটি বাস্তবায়ন হবে। অপরাধ প্রতিরোধের জন্য দু’পক্ষের মধ্যে সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে বলে আমরা আশা করি।
নিয়ম অনুযায়ী সীমান্তে শূন্যরেখার দেড়শ গজের মধ্যে বেড়া দেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু ২০১০ সালে ভারত বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী দহগ্রামে শূন্যরেখা বরাবর বেড়া দেয়ার অনুমোদন পায় ভারত। এতদিন সেই বেড়া না দিলেও ৫ই অগাস্টের পর এই বেড়া দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ভারত। বাংলাদেশ সীমানা বেড়ার কাছে কৃষি কাজ, ক্ষেত খামারে কাজ করতে গিয়ে সমস্যা এবং বাধার মধ্যে পড়তে হয় বলে জানান স্থানীরা।
সীমান্তে নিরাপত্তা এবং নজরদারির জন্য বিএসএফ রাতের আঁধারে সীমানাজুড়ে আলোকিত করতে উচ্চ ক্ষমতার বাতি জ্বালায়। এছাড়া ক্যামেরা দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের নজরদারি করা হচ্ছে বলেও সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা উল্লেখ করেন। ভারতের বিএসএফ কর্তৃক ব্যবহৃত বাতি এবং ক্যামেরা নিয়েও আপত্তি আছে সীমান্তে বসবাসকারী স্থানীয়দের।
এদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সীমান্ত সুরক্ষিত করার জন্য কাঁটাতারের বেড়া, সীমান্তে বাতি ও প্রযুক্তিগত ডিভাইস স্থাপন এবং গবাদি পশু পাচার রোধে বেড়া দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভারত প্রত্যাশা জানিয়েছে, বাংলাদেশ আগের সমস্ত বুঝাপড়া বাস্তবায়ন করবে এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধ মোকাবেলায় একটি সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
গত ১১ বছরে বাংলাদেশের সীমান্তগুলোয় শুধু বিএসএফের গুলিতেই প্রাণ হারিয়েছে ২৮৯ বাংলাদেশি। বাংলাদেশ-ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো দেশের সীমান্তে এমন হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় না। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের এই পরিস্থিতির নেপথ্য কারণ হিসেবে বিগত ক্ষমতাসীনদের নতজানু অবস্থানকে দায়ী করেছেন বিশ্লেষকরা।