আসাদের পতনে যতটা লাভ হলো ইসরায়েলের

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৬ পিএম
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকে ওই অঞ্চলে জোর সামরিক তৎপরতা শুরু করেছে ইসরাইল। ইতোমধ্যেই গোলান বাফার জোন ‘সাময়িকভাবে’নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পাশাপাশি সিরিয়াজুড়ে বিমান হামলাও চালিয়েছে তারা। সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর একটি দল দামেস্কের ২৫ কিলোমিটার কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তবে, দামেস্ক অভিমুখে এগোনোর এই খবর নাকচ করেছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ।
আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হবার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একে ‘মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ঐতিহাসিক দিন’ বলে মন্তব্য করেছেন। অবশ্য তার বক্তব্যে সতর্কতার সুরও শোনা গেছে। তিনি বলেন, যারা ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিতে বাস করতে চায় সেই সিরিয়ানদের প্রতি শান্তির হাত বাড়িয়ে দেবে তার দেশ।
নেতানিয়াহু বলেন, সিরিয়ার নতুন শক্তির সঙ্গে প্রতিবেশীসুলভ ও শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনই আমাদের ইচ্ছে। কিন্তু এটি না হলে ইসরাইলের নিজেকে রক্ষার স্বার্থে যা করার তাই করবো। আসাদ পরিবারের পাঁচ দশকের শাসনের অবসান আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির জন্য কী বয়ে আনবে তা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে।
বাশার আল আসাদ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ শক্তির জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হতো ইরান এবং হিজবুল্লাহকে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরাইলে হামাস হামলা চালালে গাজা যুদ্ধের সূচনা হয় যা এক পর্যায়ে লেবাননেও ছড়িয়ে পড়ে। যার প্রভাব পড়ে আসাদের সহযোগী হিজবুল্লাহর ওপর। হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হন।
বছরব্যাপী লড়াইয়ের পর গত ২৭শে নভেম্বর হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। সেদিনই বিস্ময়করভাবে হামলা করে দ্রুত আলেপ্পো দখল করে নেয় সিরিয়ার বিরোধী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম। এর ১২ দিনের মাথায় ক্ষমতা ও দেশ ছাড়তে হলো সিরিয়ার শাসক আসাদকে।
সিরিয়া ইস্যুতে ইসরাইলের লাভকে বিবেচনা করতে হবে তার আঞ্চলিক শত্রু ইরানের ক্ষতির মাপকাঠিতে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানই একমাত্র দেশ, যারা ইসরাইলের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করতো। সিরিয়ায় ইরানের উপস্থিতি ইসরাইলের জন্য অস্বস্তির বিষয় ছিল।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের একটি প্রক্সি নেটওয়ার্ক সক্রিয়। সিরিয়ায় সেই নেটওয়ার্কেরই মিত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করছিলেন বাশার আল আসাদ। তাই আসাদের পতনে ইসরাইল সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে। কারণ, এর মধ্য দিয়ে তারা ইরানকে নিষ্ক্রিয় করতে পারছে। সিরিয়ার এই পরিবর্তনে ইরানের আধিপত্য একটি বড় ধাক্কা খেলো। আর এই সুযোগে সিরিয়ার এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে ইসরাইল কৌশলগতভাবে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছে।