বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার নেপথ্য কারণ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০২ পিএম
হাসিনা সকোরের পতনের পর বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর বৈরি অপপ্রচার ও অপতৎপরতা শুরু হয়েছে। এসব কার্যক্রমের ফল হিসেবে সোমবার দেশটির ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের ওপর হামলা আসে। এই হামলায় ভিয়েনা কনভেনশনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে।
ভিয়েনা কনভেনশনের শর্ত অনুযায়ী, ভারতে অবস্থিত সব কূটনীতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব নয়াদিল্লির ওপর বর্তায়। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এই ঘটনাটি একইসঙ্গে একটি বিপদজনক ও উসকানিমূলক আচরণ হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে, যা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে আরও টানাপড়েন সৃষ্টি ও সার্বিকভাবে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি তৈরি করেছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এটি একটি পরিকল্পিত ও সমন্বিত বাংলাদেশ-বিরোধী প্রচারণা। ইতোমধ্যে ভারত এ ঘটনাটিকে 'দুঃখজনক' হিসেবে অভিহিত করেছে। তবে, এ ক্ষেত্রে নয়াদিল্লিকে চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থাকলে অথবা সক্রিয় ভূমিকা পালন না করলে সমস্যা যে আরো গভীর হবে যা সহজেই বোঝা যায়।
জানা গেছে, সোমবারের হামলার নেপথ্যে ছিল হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামে একটি সংগঠন। এটি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সহযোগী সংগঠন। প্রায় ১৫০ বিক্ষোভকারীর একটি দল মিশনের ভেতর ঢুকে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতির মধ্যেই পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে এবং সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণ ক্ষতিগ্রস্ত করে। একই দিনে ঐ সংগঠনটির নেতৃত্বে অপর এক দল বিক্ষোভকারী মুম্বাইয়ে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের কাছে অবস্থান নেয় বলে জানা যায়।
এগুলোর সঙ্গে ঢাকায় সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘিরে পরিচালিত সহিংসতার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এই গোলযোগের মধ্যে যে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে, তা হলো, এটি একটি আইনি বিষয়, যার সঙ্গে তার ধর্মবিশ্বাসের কোনো যোগসূত্র নেই। কিন্তু এই ঘটনাটিকে বাংলাদেশে চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা বয়ানের সর্বশেষ উপাখ্যান হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ফায়দা লোটার চেষ্টা চালাচ্ছে।
স্পষ্টতই, এই ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতির স্বার্থ জড়িয়ে আছে বলে মনে করছে অনেকে। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবৃতি, যেখানে তিনি 'সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত' করতে বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠাতে কেন্দ্রকে উদ্যোগ নিতে বলেন। মূলত এই পরিস্থিতি থেকে ভারতের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদরা স্থানীয় পর্যায়ে বাড়তি সমর্থন আদায়ের এবং ভারতের নিজস্ব সমস্যাগুলো থেকে জনসাধারণের মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে নেওয়ার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করছে।
আমরা ভারত সরকারকে সাম্প্রতিক সময়ের সহিংস বিক্ষোভের ঘটনাগুলোর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার ও আমাদের কূটনীতিক মিশন ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরী বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। একইসঙ্গে, ফ্যাক্ট-চেকিং উদ্যোগের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে অপতথ্যের প্রচার-প্রচারণা খণ্ডন করতে হবে, যা শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে চলমান রয়েছে। এছাড়াও ভারতের নেতাদের বাংলাদেশ বিষয়ে আপত্তিকর কথাবার্তা বন্ধ না দুই দেশের সম্পর্কের আগুনে আরও ঘি ঢালার সামিল।