৪০০ কোটির সম্পদ দুর্নীতির অভিযোগ বিটিভির মাহফুজার বিরুদ্ধে

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৭ পিএম
দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) সাবেক জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মাহফুজা আক্তারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। শিল্পী, কলাকুশলী, ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ, সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ ও অনুষ্ঠান না বানিয়েই বিলের কোটি টাকা তুলে নিয়ে সাড়ে ১৫ বছরে দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।
জানাযায়, চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক সুজিত রায় গত বছরের ৭ মার্চ সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে একটি অভিযোগ জমা দেন। দুদক অভিযোগটি গ্রহণ করে বিভাগীয় তদন্তের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। একই বছরের ১৯ মার্চ সংগীত শিল্পী অসিত রঞ্জন বিশ্বাস এবং শিল্পী সমাজের পক্ষে সংগীত শিল্পী রুবেল মিয়া মহাপরিচালক বরাবর বিভিন্ন অভিযোগ দেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মাহফুজা আক্তারের সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করেন। অভিযোগে জানা গেছে, মাহফুজা আক্তার বিটিবির চট্টগ্রাম কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকাকালীন ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে অবৈধভাবে নিজেই ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে মোট ৬৩৯টি অনুষ্ঠান প্রযোজনা করেন। অসংখ্য অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচার না করে নির্মাণ দেখিয়ে মোট ৭৯ লাখ ৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া তিনি এক কোডের টাকা আরেক কোডে ব্যবহার দেখিয়ে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।
অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থ বছরেও পিপিআর-এর নিয়ম না মেনে দৈনিক ২৫ হাজার টাকা করে ক্রয় দেখিয়ে ৪৭ লাখ ৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। চট্টগ্রাম কেন্দ্রে যোগ দেওয়ার পরই বিভিন্ন ফার্নিচার এবং পর্দা ক্রয় দেখিয়ে ২১ লাখ ৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। গত ১২ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিটিভির সাবেক জিএম মাহফুজা আক্তারকে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। সংস্থাটি বলছে, ২১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর মধ্যে বিটিভির শিল্পী সম্মানী খাত থেকে তিন কর্মকর্তার যোগসাজশে ১৩ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগটির তদন্ত চলছে।
তদন্তে আরো জানা যায়, মাহফুজা আক্তার কানাডার ৩ মিলিয়ন ডলার দিয়ে একটি বাড়ি কিনেছেন। এ ছাড়া ঢাকা ও রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে প্রায় শত কোটি টাকার সম্পদ। এর মধ্যে রাজধানীর ভাটারায় আছে আট তলা একটি বাড়ি, গুলশান-নিকেতনে ৩ হাজার বর্গফুটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, রংপুরের মিস্ত্রিপাড়ায় সাত কাঠা জমিতে ছয় তলা বাড়ি, নিউ জুম্মাপাড়ায় আরও দুটি একই ধরনের বাড়ি।
মাহফুজা আক্তার ২০২২-২৩ অর্থবছরে অনুষ্ঠান নির্মাণের নামে বাজেটের অতিরিক্ত ১৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অনুমোদন না নিয়েই খরচের নামে আত্মসাৎ করেন। বিভিন্ন নাটকের প্রযোজক হয়ে ভুয়া নামে চেক ইস্যু করে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১ কোটি ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।