বিচারাঙ্গন নিয়ন্ত্রণ করা আনিসুল হকের সেই বান্ধবী এখন কোথায়?

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫৩ এএম
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ছোঁয়ায় বিচারাঙ্গনের অঘোষিত ‘নিয়ন্ত্রক’ হয়ে উঠেছিলেন এক রহস্যময় নারী। যাকে অনেকেই আনিসুল হকের বান্ধবী বলে জানে। তার নাম অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম। উচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালত সবখানেই তার বিচরণ ছিল বলে জানা যায়। এ ছাড়া গড়ে তুলেছিলেন বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণের নিজস্ব সিন্ডিকেট। গুরুত্বপূর্ণ মামলায় প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো রায় ও জামিন করিয়েছেন অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার দুর্ধর্ষ আসামিদের।
অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম একাধারে একজন আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী ও ব্যাংকার। আইন অঙ্গনে পরিচিত সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে। তাদের ঘিরে নানা মুখরোচক গল্পও হতো আড়ালে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালত, জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একক আধিপত্য ছিল এই নারীর।
ফলে মন্ত্রী ও তার বান্ধবী তৌফিকা মিলে আদালত অঙ্গনের নিয়োগ ও পদায়নের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সব আদালতেই জনবল নিয়োগ হয়েছে মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী। কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ করার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে। এসব নিয়োগ ও তদবির বাণিজ্যের টাকা কালেকশন করেছেন মন্ত্রীর এই বান্ধবী তৌফিকা।
স্ত্রী-সন্তানবিহীন সাবেক এই মন্ত্রীর আস্থাভাজন ও ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত তৌফিকা করিম। তাকে করা হয় আনিসুল হকের মালিকানাধীন সিটিজেন চার্টার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও একটি বেসরকারি টিভির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান। আইনজীবীদের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা করদাতা হয়েছেন এই নারী। পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও। সাবেক এই মন্ত্রী ও তার বান্ধবী ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও লুটপাট করে দেশ-বিদেশে গড়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ।
ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেপ্তার হয়েছেন আনিসুল হক। আর তৌফিকা করিম চলে গেছেন আত্মগোপনে। তবে এই নারী দেশ ছেড়ে কানাডায় তার ছেলের কাছে পালিয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। সেখানেই রয়েছে তার বিপুল সম্পদ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আনিসুল হকের বাবা অ্যাডভোকেট সিরাজুল হকের চেম্বারে জুনিয়র হিসেবে কাজ করতেন তৌফিকা করিম। সিরাজুল হক মারা যাওয়ার পর তৌফিকা হয়ে যান আনিসুল হকের জুনিয়র। ২০১৪ সালে আইনমন্ত্রী হন আনিসুল হক। এ সময়ে বিচারাঙ্গনে মন্ত্রী ও তার এই বান্ধবীর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই।
ঢাকার বোট ক্লাবের ঘটনায় নায়িকা পরীমণির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া নাসির উদ্দিন, ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির দুর্নীতির মামলায় চিশতি পরিবারের জামিন, গুলশানের চাঞ্চল্যকর মুনিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন উল্ল্যেখযোগ্য মামলায় অর্থবাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে আনিসুল ও তার বান্ধবী তৌফিকার বিরুদ্ধে। বিপুল অর্থের বিনিময়ে এ মামলা থেকে অব্যাহতি পান আসামিরা।
তৌফিকা আইনপেশার সূত্রে স্ত্রী বিয়োগের পর আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। যদিও তৌফিকার স্বামী-সন্তান রয়েছে। আনিসুল হকের কল্যাণে ২০১৯ সালে তিনি বেসরকারি উদ্যোক্তা সম্মননাও নেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে ২৬ জুলাই তৌফিকা দেশ ছেড়ে কানাডা পালান বলেও গুঞ্জন রয়েছে।