ক্ষমতা ব্যবহার করে যেভাবে ব্যাংক খাতের মাফিয়া হয়েছিলেন নজরুল

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫০ এএম
দেখতে দরবেশের মতো মনে হলেও বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো ধ্বংসের মূল কারিগর ছিলেন এই নজরুল ইসলাম মজুমদার। শেখ হাসিনার শাসনামলে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম কঠিন করে তুলেছিলেন এই ব্যাংক খাতের স্বঘোষিত পিতৃপুরুষ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শুরু হয় নজরুল ইসলাম মজুমদারের ক্ষমতার অপব্যবহার। একটানা ৭ মেয়াদের অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক (বিএবি)র চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থেকে ব্যাংক খাতের মাফিয়া হয়ে উঠেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। তার দীর্ঘ ১৬ বছরে মুদি দোকানের মতো গড়ে তোলেন নতুন নতুন ব্যাংক।
ব্যাংক উদ্যোক্তাদের অভিভাবক হলেও তার সামনেই চলেছে ব্যাংক লুটের মহা উৎসব। সেদিকে না তাকিয়ে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে কম কিছু করেনি নজরুল ইসলাম মসজুমদার। বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে ত্রাণ তহবিলে সহায়তার নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যাংক ক্ষাতে করেছেন লাগামহীন চাঁদাবাজি। অনেককে বাধ্য করতেন ত্রান সহায়তা দিতে। তার এমন কর্ম কাণ্ডে অনেকে বিরক্ত হলেও বন্ধ রাখতেন মুখ। আড়ালে তাকে ব্যাংক ক্ষাতের দরবেশ নাম দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
নজরুল ইসলাম মজুমদার এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও অন্যতম উদ্দ্যেক্তা পরিচালক। নিজে চেয়ারম্যান হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকটিতে কায়েম করেছেন পরিবার তন্ত্র। তার স্ত্রী নাসরিন ইসলামও এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। ২০২৪ সালের ১৮ মার্চ এক্সিম ব্যাংকের সাথে একিভূত হতে সমঝোতা স্বারক সই করেছে ৪র্থ প্রজন্মের ব্যংক পদ্মার সাথে। এরপর এ নিয়ে কোন অগ্রগতি শোনা যায়নি।
বস্ত্র ও তৈরী পোশাক খাত নাসা গ্রুপেরও চেয়ারম্যান তিনি। প্রতিষ্ঠানটি নামে বেনামে এক্সিম ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ঋন। কোন ব্যাংক ঋন দিতে না চাইলে নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে দিতেন চাপ। ক্ষমতা ধরে রাখতে আরেক রাঘব বোয়াল দরবেশ খ্যাত সালমান এফ রহমানের সাথেও ছিলো ভালো সখ্যতা।
একটি জাতীয় দৈনিকে ২০২০ সালে রিপোর্টে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও নাসা গ্রুপের কর্ণধার শীর্ষস্থানীয় এই ব্যবসায়ীর নামে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার, অনিয়ম, আমদানি-রপ্তানী ব্যবসার আড়ালে অর্থ হাতিয়ে নেয়া এবং পাচারের অভিযোগ পাওয়া যায়। ক্ষমতা ক্ষমতার অপ-ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকার ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন এই মাফিয়া নজরুল।
সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অবৈধ সম্পদ অর্জন কর ফাঁকি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে জাতিয় রাজস্ব বোর্ডের ইন্টেলিজেন্স সেল। তালিকায় থাকা ৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার এবং সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিকিউরিটি ও এক্সচেঞ্জ, সঞ্চয় অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ২২ আগস্ট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। পর্যায়ক্রমে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরেুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রায় ১৩ টি ব্যাংকে নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা গ্রুপ ও তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ রয়েছে। এরমধ্যে ৮টি ব্যাংক থেকে সীমার অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছেন তিনি। রপ্তানির আবেদনে ঋণ নিলেও তা ব্যবহার করেছেন ভিন্ন খাতে। এসব ঋণের শত শত কোটি টাকা তিনি নিজে উত্তোলনও করেন। ২০২০ সালের মধ্যে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের মধ্যে কমপক্ষে ২১০ কোটি টাকা যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।