একই আঙ্গিনায় মসজিদ ও মন্দির, ১৮৮ বছরে ঘটেনি অপ্রীতিকর ঘটনা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৩ পিএম
একই উঠোনে ভিন্ন দুই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি ঠাঁই দাঁড়িয়ে মসজিদ ও মন্দির। এক পাশে ধূপকাঠি, অন্য পাশে আতরের সুঘ্রাণ। এক পাশে উলুধ্বনি, অন্য পাশে জিকির। ধর্মীয় সম্প্রীতির এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত লালমনিরহাট শহরের পুরান বাজার জামে মসজিদ ও কালীবাড়ি কেন্দ্রীয় মন্দির। ১৮৩৬ থেকে ১৮৮ বছর ধরে চলছে এই দুটি ধর্মীয় উপাসনালয়। যে যার মতো ধর্ম পালন করে চলেছেন এখানে।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্তরা-১৩ নং সেক্টরের একই মাঠে ঈদের জামাত ও পূজা নিয়ে বিরোধিতার স্লোগানের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। কিন্তু পুরান বাজার এলাকায় একই আঙ্গিনায় দুই ধর্মের মানুষ ইবাদত উপাসনা করলেও কখনই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
দুর্গাপূজার সময় ঢাক ঢোল ও বাদ্য যন্ত্র বাজানো নিয়ে যেন কোনও সমস্যা না হয় সেজন্য প্রতিবারই পূজা শুরুর আগে মসজিদ ও মন্দির কমিটি বসে করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। আজানের সময় থেকে নামাজের জামায়াত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরের মাইক-ঢাকঢোল বন্ধ থাকে। নামাজ শেষ হলে মন্দিরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়। এমন সম্প্রীতি আর সৌহার্দে্যর উদাহরণ শতবছরের।
স্থানীয়রা জানায়, ১৮৩৬ সালে দুর্গামন্দির প্রতিষ্ঠার আগে এখানে কালীমন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কারণে পুরানবাজার এলাকাটি অনেকের কাছে ‘কালীবাড়ি’ নামেও বেশ পরিচিত। কালীমন্দির প্রতিষ্ঠার বেশ কয়েক বছর পর বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও ব্যবসায়ীরা নামাজ আদায়ের জন্য ওই মন্দিরের পাশেই একটি ছোট নামাজের ঘর তৈরি করেন। পরে নামাজের ঘরটিই ‘পুরান বাজার জামে মসজিদ’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
ওই জামে মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ধর্মীয় সম্প্রীতির এক জ্বলন্ত উদাহরণ এই মসজিদ মন্দির। পুরান বাজারে একসঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠান। আমরা তাদের সব কাজে সহযোগিতা করি। তারাও আমাদের সহযোগিতা করেন। নামাজের সময় মন্দিরের ঢাকঢোল বন্ধ রাখা হয়। এটি আমাদের জন্য অনেক গর্বের বিষয়। এর আগে মন্দির ও মসজিদ পরিদর্শন করে গেছেন কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতও।
কালীবাড়ি কেন্দ্রীয় মন্দিরের সভাপতি ও প্রধান পুরোহিত শংকর চক্রবর্তী জানান, ১৮৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এলাকার নামকরণও করা হয় কালীবাড়ি। একইসাথে পূজা ও নামাজ আদায় হলেও সামান্য বিশৃঙ্খলাও হয় না এখানে। জন্মের পর থেকে এভাবেই চলতে দেখেছেন তিনি।
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ। যার অনেক নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে দেশের নানা প্রান্তে। এমনই একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে লালমনিরহাট জেলা শহরের পুরাণ বাজার এলাকার এই মসজিদ ও মন্দির।