আইয়ুব-এরশাদ-হাসিনার বিরুদ্ধে মুখে মুখে ফিরেছে যেসব স্লোগান

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫১ পিএম
সময়ের প্রয়োজনে, দাবির প্রয়োজনে মিছিল ও সমাবেশ থেকে স্লোগান জন্ম নেয়। আর স্লোগানকে বলা হয় আন্দোলনের ভাষা। যা হয়ে ওঠে আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতীক। আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্লোগান বদলেও যায়। নতুন আন্দোলন তৈরি করে নতুন স্লোগান, যুক্ত হয় পুরোনো রেশ।
জুলাইয়ের শুরু থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশ। যত দিন গড়ায় পরিস্থিতি ততই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে গড়ায় ছাত্র–জনতার আন্দোলন। ১৪ জুলাই দিবাগত রাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় মাঝরাতে স্লোগান উঠেছিল ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার- কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।
মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের স্লোগানটিও তেমন। এর আদি স্লোগান হলো—তুমি কে, আমি কে-বাঙালি, বাঙালি। লেখক–গবেষক সিদ্দিকুর রহমান স্বপন তার বাংলাদেশের গণআন্দোলন: স্লোগান প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার বইয়ে বলেছেন- ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে তখনকার পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বে ১১ দফার দাবি আদায়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল পূর্ব পাকিস্তান। আর ওই আন্দোলনে স্লোগান উঠেছিল- তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি।
১৯৬৮ সালের দিকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের মিছিলে এই স্লোগান শোনা যেত। স্লোগানটির সূচনার দুই প্রশ্নের আবেদন সাড়ে পাঁচ দশকের বেশি সময় পরে এসে একটুও কমেনি। বরং ক্ষোভ ও ব্যঙ্গের সুরে নতুন উত্তর নিয়ে ছাত্র–জনতার আন্দোলনের এক সন্ধিক্ষণে ফিরে এসেছিল। ১৯৬৯, ১৯৯০ আর ২০২৪ সালের তিনটি গণ–অভ্যুত্থানের আলোচিত স্লোগানগুলো একনজরে দেখে নেওয়া যাক।
পাকিস্তানে তখন আইয়ুব খানের শাসন চলছে। বরাবরের শোষণ–বঞ্চনা, শেখ মুজিবসহ বাঙালি রাজনীতিবিদ, সামরিক কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে করা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাসহ নানা কারণে ফুঁসে উঠেছিল পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। ছাত্র–জনতার ব্যাপক আন্দোলনে পতন ঘটেছিল এক দশকের আইয়ুবশাহির।
১৯৬৯ সালের ছাত্র–জনতার আন্দোলনে বিভিন্ন সভা–সমাবেশে-তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ। জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালো। আইয়ুব–মোনায়েম ভাই ভাই, এক দড়িতে ফাঁসি চাই স্লোগান শোনা যেত। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের স্লোগান ছিল ‘জেগেছে জেগেছে, বাঙালি জেগেছে। বীর বাঙালি জেগেছে, রক্তসূর্য উঠেছে। পুলিশ তুমি যতই মারো, বেতন তোমার একশ বারো প্রভৃতি।
মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভা–সমাবেশে তার কর্মীরা স্লোগান ধরতেন- ভোটের আগে ভাত চাই, নইলে এবার রক্ষা নাই। মোরা করেছি পণ হতে দেবো না নির্বাচন। লেখক–সাংবাদিক আবু সাঈদ খান তাঁর স্লোগানে স্লোগানে রাজনীতি বইয়ে এ সব তথ্য পাওয়া যায়।
১৯৬৯ সালের গণ–অভ্যুত্থানে আরেকটি আলোচিত স্লোগান হলো-তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা। তিনি আরও বলেন, শেখ মুজিবের মুক্তি উনসত্তরের গণ–আন্দোলনের মূল দাবিতে পরিণত হয়। এ জন্য স্লোগান দেওয়া হতো— জেলের তালা ভাঙব, শেখ মুজিবকে আনব।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৯০ সাল ছিল ব্যাপক গণ–আন্দোলনের বছর। গদিতে তখন সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরশাদ পতনের আন্দোলনে ব্যাপক জনপ্রিয় স্লোগান ছিল- জনতার দাবি এক, এরশাদের পদত্যাগ। এক দফা এক দাবি এরশাদ তুই কবে যাবি। এই মুহূর্তে দরকার,তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আর এরশাদের পতনের পরপর স্লোগান উঠেছিল ‘এই মাত্র খবর এলো, এরশাদ পালিয়ে গেল।
২০২৪ সালের ছাত্র–জনতার আন্দোলনে ‘চাইলাম অধিকার হয়ে হয়ে গেলাম রাজাকার। আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম। দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ। আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই। একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার। যে হাত গুলি করে, সে হাত ভেঙে দাও। অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন। আমার ভাই কবরে, খুনিরা কেন বাইরে। জাস্টিস জাস্টিস উই ওয়ান্ট জাস্টিস। দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত এমন স্লোগান শোনা যায়।
এবারের আন্দোলনে শ্লেষাত্মক প্ল্যাকার্ড ও দেয়াললিখনে কিছু স্লোগান দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। যেমন ‘তবে তাই হোক বেশ, জনগণই দেখে নিক এর শেষ। অনাস্থা অনাস্থা, স্বৈরতন্ত্রে অনাস্থা। উই ওয়ান্ট জাস্টিস। চেয়ে দেখ এই চোখের আগুন, এই ফাগুনেই হবে দ্বিগুণ। আমরা আমজনতা, কম বুঝি ক্ষমতা। হাল ছেড় না বন্ধু বরং কণ্ঠ ছাড় জোরে।