স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ার পর যা বলেছিলেন জেল পালানো কয়েদিরা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ০৪:৩৫ পিএম
বগুড়া কারাগারের মূল ফটকের সামনে ১০০ মিটার দূরেই করতোয়া নদী। কারাগারের কনডেম সেলের ছাদ ফুটো করে করতোয়া নদীর তীর ধরে পালাচ্ছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি। কারাগার থেকে উত্তর দিকে প্রায় আধা কিলোমিটার পথ নদীর পাড় ধরে এগিয়ে যান তাঁরা। গন্তব্য ছিল নির্মাণাধীন শহরের ফতেহ আলী সেতুর পাশে বাঁশের সাঁকো। সাঁকো পার হয়ে সাবগ্রাম দ্বিতীয় বাইপাস সড়কে গিয়ে দূরপাল্লার বাস ধরবেন।
বাঁশের সাঁকো পার হওয়ার আগেই বাগড়া দেয় ফতেহ আলী বাজারের পাশে থাকা একদল কুকুর। রাতের অন্ধকারে মানুষের উপস্থিতি টের পেয়েই ঘেউ ঘেউ করতে থাকে কুকুরের দল। আওয়াজ পেয়ে এগিয়ে আসেন কয়েকজন যুবক। একজনের হাতে স্ক্রু ড্রাইভার, অন্যজনের পরনে জেলখানার কয়েদির ট্রাউজার। শরীর ঘামে আধভেজা। একজনের হাতে ব্যাগে সিগারেটের অনেক প্যাকেট। এসব দেখে যুবকেরা সেখানে এসে চারজনকে নানা প্রশ্ন করতে শুরু করেন। এ সময় চারজন নিজেদের রাজমিস্ত্রি বলে পরিচয় দেন।
গেল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টা ৫৬ মিনিটের দিকে বগুড়া জেলা কারাগারের ছাদ ফুটো করে বিছানার চাদরকে রশির মতো ব্যবহার করে কারাগারের প্রাচীর টপকে পালিয়ে যান মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২৭ জুন ভোর ৪টা ১০ মিনিটের দিকে বগুড়া শহরের চেলোপাড়া চাষীবাজারের মাছের আড়ত এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে। এর আগে তাঁদের ধরে ফেলেন কয়েকজন যুবক। এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এসব তথ্য।
স্থানীয়রা জানান, কুকুরের দল ঘেউ ঘেউ করলে তাঁরা ভাবেন, চোর এসেছে। তখন সাঁকোর কাছে চলে আসেন তাঁরা। এসে দেখেন, চারজন বাঁশের সাঁকো পার হয়ে সাবগ্রাম যেতে চাইছেন। লোকজনের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়ে তাঁরা বলেন, শহরের বনানী এলাকায় একজন ঠিকাদারের কাজ করছিলেন। বনিবনা না হওয়ায় ঠিকাদার তাঁদের মারধর করেছেন। এ জন্য রাতে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। সাবগ্রাম বাজারে গিয়ে গাড়ি ধরবেন, কিন্তু এসব কথা সন্দেহজনক মনে হয়েছিল তাঁদের। পরে ওই চারজনকে শহরের চাষীবাজার-সংলগ্ন পার্কে আটকে রেখে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পরিমল চন্দ্র দাসকে খবর দেন লোকজন। তখন পৌর কাউন্সিলর আটক ব্যক্তিদের পুলিশে দিতে বলেন। অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে চারজন স্বীকার করেন, তাঁরা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, কারাগার থেকে পালিয়েছেন। ছেড়ে দিতে বলেন তাঁদের। বিনিময়ে ৫০-৬০ প্যাকেট সিগারেটও দেন। পরে কাউন্সিলর পরিমল চন্দ্র দাসের নির্দেশে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। সদর ফাঁড়ি পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করে রাতেই ডিবি কার্যালয়ে নেয়।
কারাগারের কনডেমড সেলের ছাদ ফুটো করে চার আসামি পালানোর ঘটনায় বগুড়া কারাগারের জেলার ফরিদুর রহমান বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেছেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কয়েদিদের আজ সন্ধ্যায় আবার বগুড়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।