যে কৌশলে গরিবদের জমি কেড়ে নিতেন বেনজীর

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৪, ১০:৫২ এএম
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে প্রায় ৬০০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। এসব জমির প্রায় সবই ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। তারা বলছেন, জমি বিক্রি ছাড়া তাদের কোনো উপায় ছিল না। ভয় দেখিয়ে, জোর করে এবং নানা কৌশলে তাদের কাছ থেকে জমিগুলো কেনা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে গিয়ে জমি বিক্রি করা হিন্দু পরিবার জানিয়েছে, তাদের জমি কিনতে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়োজিত রেখেছিলেন বেনজীর আহমেদ। বেনজীর পরিবারের রিসোর্টের নির্মাণকাজের তদারক করতেন পুলিশ ও র্যাবের কিছু সদস্য। তাদের দিয়ে তরমুজ চাষসহ কৃষিকাজও করানো হয়েছে। মাঠপর্যায়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্দেশ দিলে কিছু করার থাকে না।
বেনজীর আহমেদ এসব জমি কেনা ও রিসোর্ট গড়ার কাজটি করেছেন আইজিপি ও র্যাবের মহাপরিচালক থাকার সময়ে। দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, জমি বিক্রেতাদের একজন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বড়খোলা গ্রামের সরস্বতী রায়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি কেন জমি বিক্রি করেছেন? প্রশ্ন শুনেই বিলাপ শুরু করেন সরস্বতী। তিনি বলেন, ‘কত কষ্ট হইরা, সুদে টাহা নিয়া জমিটুক কিনছিলাম। হেই জমিটুক দিয়া আসা নাগছে।’ জমি কে নিয়েছে? সরস্বতী বলেন, ‘বেনজীর নিছে।’ বেনজীর কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বড় পুলিশ’ বলে শুনেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও তিন মেয়ের নামে এখন পর্যন্ত ৬২১ বিঘা জমির খোঁজ পাওয়া গেছে, যার ৫৯৮ বিঘা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ও মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায়। উপজেলা দুটি পাশাপাশি। আর বেনজীর পরিবারের জমিও দুই উপজেলার সীমান্তঘেঁষা এলাকায়। ওই এলাকার গ্রামগুলো হিন্দু অধ্যুষিত।
বেনজীর আহমেদ সেখানে সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক নামে একটি রিসোর্ট করেছেন। এই রিসোর্টে মানুষকে থাকার জন্য কক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়।রিসোর্টটি পড়েছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম বৈরাগীরটোলায়। ওই গ্রাম ও পাশের ডোমরাশুর গ্রামে জমি বিক্রেতা পরিবারগুলোর ২৭ সদস্যের সঙ্গে কথা হয়। তাদের মধ্যে ২৫ জনই বলেছেন, তারা জমি বিক্রি করতে চাননি, বাধ্য করা হয়েছে। তাদের ভয় দেখিয়েছেন পুলিশের পরিদর্শক তৈমুর ইসলাম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈরাগীরটোলা গ্রামের এক জমি বিক্রেতা বলেন, তার তিন বিঘা পৈতৃক সম্পত্তি জমি কিনে নিয়েছে বেনজীরের পরিবার। তিনি বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা তৈমুর ইসলাম বেনজীরের পক্ষে জমির মালিকদের কাছে যেতেন। গিয়ে বলতেন, ‘আমি ভালো অফিসার (কর্মকর্তা), তাই আপনাদের কিছু টাকা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। যদি বিক্রি করতে রাজি না থাকেন, তবে জমিও যাবে, টাকাও পাবেন না।’
জমি বিক্রেতারা জানান, যাঁরা বিক্রি করতে রাজি হতেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে আরেক কৌশল নিতেন বেনজীরের লোকেরা। সেটি হলো ওই জমির আশপাশের জমি কিনে নিয়ে সেখানে যেতে বাধা দেওয়া। এর ফলে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হতেন সাধারণ মানুষেরা। কোনো কোনো হিন্দু পরিবারের জমির সবটুকুই বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়। তেমন একজন রাজৈরের বড়খোলা গ্রামে ষাটোর্ধ্ব সরস্বতী রায়।