ইংল্যান্ডের সাউথপোর্টে শিশুদের নাচের ক্লাসে ছুরি হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার একজন ‘উগ্র ইসলামপন্থি অভিবাসী’ বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সাউথপোর্ট অঞ্চলে দাঙ্গা শুরু হয়। গুজব ছড়িয়ে দাঙ্গাকে ইন্ধন দেয়ার অভিযোগে সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।

স্টারমার বলেছেন, অনলাইনে সহিংসতার প্ররোচনাকে নিষিদ্ধ করে এমন আইনগুলো সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলেন, বিশৃঙ্খলা কখনোই বৈধ প্রতিবাদ হতে পারে না। এগুলো অপরাধমূলক বিশৃঙ্খলা আর এগুলো স্পষ্টতই উগ্র ডানপন্থীদের বিদ্বেষমূলক উস্কানি থেকে হয়েছে।

তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করে তিনি বলেন, আমি বড় বড় সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলোকে এবং সেগুলো যারা পরিচালনা করেন তাদের বলতে চাই, সহিংস বিশৃ্ঙ্খলাগুলোর উস্কানি অনলাইন থেকেই শুরু হয়: এটিও একটি অপরাধ। এগুলো আপনাদের প্রাঙ্গণে ঘটছে আর সবখানেই আইন সমুন্নত রাখতে হবে।

সাউথপোর্টের ওই নাচের ক্লাসে ছুরি হামলায় তিন মেয়ে শিশু নিহত ও আরো নয় শিশু আহত হয়। এ ঘটনায় আরো দুই পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিও আহত হন। এ ঘটনায় পুরো যুক্তরাজ্য শঙ্কিত হয়ে ওঠে।

ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় আইন অনুযায়ী প্রথমে পুলিশ তার নাম প্রকাশ করেনি। এই সুযোগে সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন একজন ‘উগ্র ইসলামপন্থি অভিবাসী’। এই গুজবকে কেন্দ্র করে সাউথপোর্টে পুলিশের ওপর হামলা ও একটি মসজিদে আক্রমণ করে অভিবাসনবিরোধীরা। এ দাঙ্গা ও বিক্ষোভ পরপর দুই দিন ধরে চলে।

আরো পড়ুন : ২ শিশু নিহত, আহত ৯

প্রচারণাকারী গোষ্ঠী ‘হোপ নট হেইট’ একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মঙ্গলবার সাউথপোর্টে যে দাঙ্গা হয়েছে তা ব্যাপক গুজব ছড়ানোর ফল এবং অনলাইনে এর অধিকাংশই ছড়িয়েছে কট্টর ডানপন্থি একাউন্টগুলো থেকে। ওই গুজবে বলা হয়, সন্দেহভাজন একজন শরণার্থী অথবা অভিবাসী। চ্যানেল থ্রি নাও ওয়েবসাইটেও এই মিথ্যা দাবি চলে আসে আর তাতে বলা হয়, সন্দেহভাজন একজন নথিবিহীন অভিবাসী সে একটি ছোট নৌকা দিয়ে ইংল্যান্ডে এসেছে। পরে চ্যানেল থ্রি নাও ওই তথ্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে জানায়, তাদের প্রকাশিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর ও ভুল ছিল।

সংবাদমাধ্যম রয়টার্স বলছে, ফেসবুক, এক্স, ইনস্টাগ্রাম ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে এই গুজব অন্তত এক কোটি ৫৭ লাখ বার দেখা হয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে এক বিচারক আদেশ দিয়ে বলেন, গণমাধ্যম ওই সন্দেহভাজনের নাম অ্যালেক্স রুডাকুবানা হিসেবে বলতে পারে। তার জন্ম হয়েছে ওয়েলসের কার্ডিফে আর আগামী সপ্তাহে তার বয়স ১৮ বছর হবে বলে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ ।