জাতীয় দল থেকে তামিমের অবসর
ধন্যবাদ জানিয়ে বিসিবির বার্তা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

জাতীয় দলে না ফেরার সিদ্ধান্তেই অটল থাকলেন তামিম ইকবাল। পরশু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে আছি অনেক দিন ধরেই। সেই দূরত্ব আর ঘুচবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার অধ্যায় শেষ।’ অনেকটা নাটকীয়ভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দিলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল। দুদিন আগেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্কোয়াডে তাকে পাওয়া নিয়ে অপেক্ষার কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তাদের সেই অনিশ্চয়তা কেটেছে তামিমের অবসরের ঘোষণায়। তাকে দেশের ‘সবচেয়ে সুন্দর’ ওপেনিং ব্যাটার উল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে বিসিবি।
নিজেদের অফিসিয়াল ফেসবুক পোস্টে দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা বার্তা দিয়েছে সাবেক টাইগার অধিনায়কের জন্য। বিসিবি লিখেছে, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ওপেনিং ব্যাটসম্যানের অবসর ঘোষণায় অসাধারণ একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়ে গেল।’ বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন কোনো ভূমিকায় কি দেখা যাবে প্রায় দেড় যুগ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা তামিমকে? ক্রিকেট ধারাভাষ্যে তার অপার সম্ভাবনা। সঙ্গে এ-ও জানা গেছে, তামিমের সবচেয়ে বড় ইচ্ছা দেশের ক্রিকেট প্রশাসনে সম্পৃক্ত হওয়ার। তবে এ ব্যাপারে তামিমের মুখ থেকে এখনো কিছু শোনা যায়নি।
তামিমের বয়স প্রায় ৩৬ হয়ে গেছে। ক্যারিয়ারের দিগন্তে এসে যা হয়, মাঠের খেলা চালিয়ে যেতে তার লড়াই ছিল ফিটনেস আর ফর্মের সঙ্গে। বাংলাদেশের ক্রিকেট একসময় যে তামিমকে নিয়ে সাহসী ভাবনা ভাবতে পারত, সে সময় গত হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই।
তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এই পড়তি সময়েও বাংলাদেশের ক্রিকেট অপেক্ষায় ছিল তামিমের। ব্যাটসম্যান বা ওপেনার তামিমের অস্তিত্বটা এখানেই আরেকবার স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দেড় বছরের বেশি সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার পরও এটা বলার উপায় নেই যে এই দীর্ঘ সময়ে আর কোনো ওপেনার তামিমের জায়গা নিতে পেরেছেন। খেললে ওপেনিংয়ে এখনো তিনিই হতেন এক নম্বর পছন্দ।
কিন্তু সে সম্ভাবনা আর নেই। রাতে তামিম ফেসবুক পোস্টে জানিয়ে দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর নয়। তার অধ্যায় শেষ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় আসর সামনে রেখে বাংলাদেশ দল বা বিসিবিকে আর দোদুল্যমানতায় রাখতে চাননি তিনি। বলে দিয়েছেন ‘বিদায়’। তামিমের বিদায়ের ঘোষণা আর সবার মতো বিসিবিও প্রথম জেনেছে তার ফেসবুক পোস্ট থেকে। বিপিএলের মধ্যে ৮ জানুয়ারি গ্র্যান্ড সিলেট হোটেলে নির্বাচকরা আলোচনায় বসেছিলেন তামিমের সঙ্গে। উদ্দেশ্য, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি তথা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে তামিমের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানা।
তামিম তখনই বলে দিয়েছিলেন, তিনি আর খেলবেন না জাতীয় দলে। তারপরও নির্বাচকদের অনুরোধ আরেকবার ভেবে দেখার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের বলেন, পরিবার ও শুভাকাক্সক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে জানাবেন ফিরবেন কিনা। জাতীয় দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন আর তামিমের দীর্ঘদিনের সতীর্থ মাহমুদউল্লাহও সেদিন তাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিলেন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে। গতকাল নিজেদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে তামিমের ছবি গ্রাফিক্স করে কাভারে রেখেছে বিসিবি। সঙ্গে একটি পোস্টও দিয়েছে তারা। ক্যাপশনে লিখেছে, ‘বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ওপেনার তামিম ইকবালের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়ের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটেছে এক অসাধারণ অধ্যায়ের। অগণিত স্মরণীয় মুহূর্ত আর দারুণ সব সেঞ্চুরিতে আপনি ক্রিকেটভক্তদের হৃদয়ে চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন।’
‘অসম্ভবের বিপক্ষে লড়াই করে জয় ছিনিয়ে আনা, আমাদের বিশ্বাস করতে শেখানো, স্বপ্নপূরণের অনুপ্রেরণা দেয়া, নতুন করে আশা জাগানো এবং আমাদের আবার স্বপ্ন দেখতে শেখানোর জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।’
দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটার হিসেবেই বিদায় নিলেন তামিম ইকবাল। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান (৮৩৫৭) তার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি (২৫টি) সেঞ্চুরির মালিক তিনি। তার ঝুলিতে আছে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি (১৪)। তিনিই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৫০ ছাড়ানো ইনিংস (১১৯টি) আছে তার নামের পাশে। এছাড়া দেশের অসংখ্য জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
তামিমের বিদায়বেলায় তার সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। গতকাল রাতে তামিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে চেয়েছিলাম তামিম আরো কিছুদিন খেলুক। কিন্তু নিজের অবস্থা সম্পর্কে সেই সবচেয়ে ভালো জানে। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে দীর্ঘদিন ধরে সার্ভিস দিয়ে গেছে তামিম। অনেক ম্যাচ আমাদের জিতিয়েছে। বোর্ড সভাপতি হিসেবে আমি তার এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই।’ ক্রিকেট ছাড়ার পর তামিমের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বিসিবির আপাতত তেমন কোনো ধারণা নেই। তবে তিনি হয়তো আরো কিছুদিন ঘরোয়া ক্রিকেট চালিয়ে যেতে চাইবেন। পাশাপাশি বিসিবির নির্বাচনে অংশ নেয়ারও প্রস্তুতি নেবেন বলে শোনা যাচ্ছে। বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ আছে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর অনেক পরিচালক পদত্যাগ করায় ও অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় শূন্যপদগুলোতে নির্বাচনের একটা সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলো পুনর্গঠনের কাজ শেষ না হওয়ায় সেই সম্ভাবনা এখন কম।
কাজেই গঠনতন্ত্র মেনে বিসিবিতে আসতে চাইলেও তামিমকে অপেক্ষা করতে হওয়ার কথা আগামী অক্টোবর পর্যন্ত।
নির্বাচন ছাড়া তিনি বোর্ডে আসতে পারেন কেবল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনোনীত পরিচালক হয়ে, যে মনোনয়ন নিয়ে এখন বিসিবির পরিচালনা পর্ষদে আছেন সভাপতি ফারুক আহমেদ ও নাজমূল আবেদীন।