ড্রেনের ময়লা রাস্তায় দুর্ভোগ-দূষণ বাড়ছে

মুহাম্মদ রুহুল আমিন
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক মৌচাক-মালিবাগ। ফরচুন শপিং কমপ্লেক্স ও মৌচাক মার্কেটসহ একাধিক শপিং কমপ্লেক্স রয়েছে এই এলাকায়। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অসংখ্য মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে সড়কটি দিয়ে। ব্যস্ততম এই সড়কটি হয়ে রামপুরা, মগবাজার, রাজারবাগ ও কাকরাইল এলাকার অসংখ্য মানুষ এবং যানবাহন চলাচল করে প্রতিনিয়ত। এলাকাটির মূল সড়কে বেশ কিছু স্থানে ৫দিন আগে ড্রেন পরিস্কার সিটি করপোরেশনের ক্লিনাররা। তারা ড্রেনের ময়লা তুলে রেখেছেন সড়কের ওপরই। অথচ কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব ময়লা সরিয়ে নেয়ার কথা থাকলেও তারা তা করেননি। ফলে ম্যানহোলের সামনেই দিনের পর দিন পড়ে থাকছে এসব ময়লা। পঁচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চারপাশে। নাকে রুমাল বা টিস্যু চেপে হাঁটতে দেখা যায় পথচারীদের। আর মারাত্মক বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের।
এরকমই ড্রেনের ময়লার স্তূপ দেখা গেল মৌচাক মার্কেটের বিপরীত পাশে মা রাধুনী হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁ ও স্বাদ রেস্তোরাঁর ঠিক সামনের অংশে। গত বুধবার সিটি করপোরেশনের এক দল ক্লিনার ড্রেন থেকে ময়লা তুলে স্তূপ করে ফেলে রাখেন ম্যানহোলের পাশেই। তারওপর ফুটপাতও ভাঙাচোরা। ময়লার স্তূপ রাখা হয়েছে হোটেলের ঠিক প্রবেশ দুয়ারে আর দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে। ময়লার স্তূপ পার হওয়ার ফলে কাস্টমারও কমে গেছে হোটেল দুটিতে। মা রাধুনি হোটেল ও রেস্তোরার মালিক সুনীল কুমার দত্ত ভোরের কাগজকে জানান, ৫ দিন আগে ড্রেন পরিস্কার করে ময়লা এখানেই ফেলে রেখেছেন সিটি করপোরেশনের লোকজন। তারা বলেছে ৪ দিন পর ময়লা নিয়ে যাবে। কিন্তু ৫ দিন হয়ে গেলেও ময়লা নেয়ার কোনো খবর নেই। তিনি জানান, হোটেলের সামনে ময়লার স্তূপ রাখায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। স্তূপের ওপরের দিকটা প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখলেও নিচের ময়লা যনবাহনের চাকার সঙ্গে পিস্ট হয়ে পুরো সড়কে ময়লা ছড়াচ্ছে। বাতাসের সঙ্গে ধুলো মিশে মানুষের কাপড় চোপড় নোংরা করছে। প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা থাকায় শক্ত ভেবে রাস্তা পার হতে গিয়ে পথচারীদের কারো কারো ময়লার স্তূপে পা ডুবে যাচ্ছে। পরনের কাপড় নোংরা হয়ে যাচ্ছে। একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কাস্টমারও খুব একটা আসছে না। দ্রুত তিনি এই ময়লার স্তূপ সরানোর দাবি জানান।
আরো পড়ুন: বুধবার ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
শুধু মৌচাকের এই সড়কটিই নয়, দুই সিটি করপোরেশনের প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই এভাবে ড্রেনের ময়লা ফেলে রাখা হয়েছে স্তূপ আকারে। সেসব ময়লা আবার ড্রেনের মধ্যেই পড়ছে। শাহজাহানপুর মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড়ের দিকে যেতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের দেয়াল ঘেঁষে নতুন ড্রেন তৈরির কাজ চলছে কয়েক মাস ধরে। গতকাল দেখা গেল কাজ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু ড্রেনের যেসব ময়লা বা মাটি খোঁড়া হয়েছে, সেগুলোর একটি অংশ এখনো ওভাবেই পড়ে আছে। এসব ময়লা শুকিয়ে ধুলো হয়ে গেছে। সামান্য বাতাস কিংবা যানবাহনের চাকার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। ধুলো ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের পুরো এলাকায়। উড়ন্ত ধূলিকণায় পরিণত হয়ে দূষিত করছে ঢাকার বাতাস। ঢাকার অন্য এলাকায়ও এভাবে ড্রেনের ময়লা ফেলে রাখা হয়েছে। আর সেখান থেকে বায়ু দূষণের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। যা ঢাকার আবহাওয়ার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের স্বাস কষ্ট জনিত রোগ বাড়ছে। এসব শুকনো ধুলি উড়ে গিয়ে শহরের বাসা-বাড়ি ও দোকান-পাটও নোংরা করছে।
এমনিতেই বিশ্বে বায়ু দূষণের শীর্ষে যেসব শহর রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা সবসময়ই তালিকার ওপরের দিকে থাকে। গত রবিবারও বায়ু দূষণে ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (আইকিউএয়ার) সূচক থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
আরো পড়ুন: আ.লীগের আমলে বঞ্চিত ৭৫৪ জনকে পদায়নের সুপারিশ
সরজমিন দেখা যায়, ঢাকার খিলগাঁও, তালতলা, মাদারটেক, সিপাহীবাগ, পল্টন, রামপুরা, গ্রিন রোড, সেগুনবাগিচা, মগবাজার ওয়ারলেসহ ঢাকার প্রতিটি এলাকাতেই এখন ড্রেন খনন ও পরিস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। আগে সেগুলো দ্রুত সরিয়ে নেয়া হলেও এখন কাজে ঢিলেমি করছেন দুই সিটির বর্জ্য সংশ্লিষ্ট কর্মীরা। ফলে বায়ু দূষণের প্রভাব পড়ছে এই শহরে। এসব বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামের বক্তব্য জানতে চাইলে, পরে কথা বলবেন জানিয়ে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। জানতে চাইলে সংগঠনটির সহসভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব ভোরের কাগজকে বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে বর্তমানে জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ মেয়র ও কাউন্সিলর নেই। নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলররা এসব কাজের একটা মনিটরিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করেছিলেন। যার ফলে ড্রেন থেকে ময়লা তুলে পাশে রাখা থেকে ক্লিনাররা বিরত থাকতেন। এই সিস্টেমটাকে এখন কার্যকর রাখার দায়িত্ব প্রশাসকদের। তা নাহলে ড্রেনের ময়লাগুলো আবার ড্রেনেই ফেরত যাবে। আরেকটা হলো সেই ময়লাগুলো শুকিয়ে জীবাণু হয়ে যায়; তখন শুধু ধূলি দূষণ নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই দুটি অপরাধে প্রশাসকরা অপরাধী হবেন- যদি এখনি তারা এই বিষয়ে ব্যবস্থা না নেন। তিনি আরো বলেন, আরেকটি বিষয় হলো নির্মাণ সংক্রান্ত উপকরণ অর্থাৎ নির্মাণকাজ ঢেকে না করার যে প্রবণতা, সেটার বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করতে হবে। স্পষ্ট কথা ঢাকাকে দূষণের দুই নম্বরে রাখা ঠিক হবে না। কারণ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশু ও বৃদ্ধরা প্রচণ্ড রকমভাবে এই মুহূর্তে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তাই ড্রেনের পাশে ময়লা রাখা ও নির্মাণ কার্যক্রম উন্মুক্ত রাখা, দুটোর বিষয় অভিযান পরিচালনা করা জরুরি ভিত্তিতে দরকার।