×

শেষের পাতা

নারী-পুরুষ সমতা নিশ্চিত করতে অভিন্ন পারিবারিক আইন জরুরি

Icon

সেবিকা দেবনাথ

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নারী-পুরুষ সমতা নিশ্চিত করতে অভিন্ন পারিবারিক আইন জরুরি
   

গণমাধ্যমগুলোতে প্রতিদিনই উঠে আসছে নারীর প্রতি সহিংস ঘটনা। নানা বৈষম্যের চিত্র। এসব নির্যাতন ও বৈষম্যের কারণ বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবার অন্যতম কারণ পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক ক্ষমতা কাঠামোয় নারীর দুর্বল অবস্থান। অভিন্ন পারিবারিক আইন না থাকায় সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

তারা বলছেন, দেশে প্রচলিত পারিবারিক আইনগুলো ধর্মীয় আইন ও প্রথার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে নারীর বিয়ে, বিয়ে বিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, সন্তানের অভিভাবকত্ব বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে। যা নাগরিক হিসেবে মৌলিক অধিকার লাভের পরিপন্থি। এই পারিবারিক আইন রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে ধর্মভিত্তিক বিভাজন আনছে, যা শুধু নারী-পুরুষ নয়, নারীতে নারীতে বিভাজন সৃষ্টি করছে।

পারিবারিক আইনে বিভাজন থাকার কারণে একই দেশের নাগরিক সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। এটা সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্র ও নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ (সিডও) সনদের পরিপন্থি। সব ক্ষেত্রে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন জরুরি বলে মনে করেন তারা।

সংবিধানের উদাহরণ টেনে আইনজীবীরা বলেন, সংবিধানে নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সংবিধানের মৌলিক অধিকারে অন্তর্ভুক্ত ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী’, ২৮(২) বলা হয়েছে, ‘কেবল ধর্ম বর্ণ বা নারী-পুরুষের জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না।’ ২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সম-অধিকারের সঙ্গে অসামঞ্জস্যমূলক সব আইন বাতিল হবে এবং রাষ্ট্র অসামঞ্জস্যমূলক কোনো আইন প্রণয়ন করবে না। কিন্তু বাস্তবে তা এখনো হয়নি।

অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব সম্পর্কে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম জানান, ১৯৯৩ সাল থেকে বৈষম্যপূর্ণ পারিবারিক আইন নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে মহিলা পরিষদ। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, নারীর ওপর নির্যাতন যে নিছক নারী ইস্যু নয়, বিষয়টি মানবাধিকার ইস্যু, জেন্ডার সমতার ইস্যু, তা উপলব্ধি করতে হবে। জনজীবন ও ব্যক্তিজীবনের সব ক্ষেত্রে সমতা প্রতিষ্ঠিত না হলে নারীর নাগরিক অধিকার তথা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। সে কারণে আজ জরুরি হয়ে উঠেছে অভিন্ন পারিবারিক আইন গ্রহণ ও বাস্তবায়ন।

এ প্রসঙ্গে ভোরের কাগজকে মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য নিরসনে উত্তরাধিকার ও পারিবারিক ক্ষেত্রে শরিয়াহ আইন পরিবর্তন দরকার। এক্ষেত্রে যদি প্রশ্ন আসে, দেশের মোট জনসংখ্যার অধিকাংশই মুসলমান। এখানে শরিয়াহ আইনের বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। সেক্ষেত্রে আমি বলবো, শরিয়াহর অনেক কিছুতেই পরিবর্তন হয়েছে। যেমন- নারী তালাকের অধিকার পেয়েছে, হিল্লা বিয়েকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদি তাই হয় তাহলে এক্ষেত্রে অসুবিধা কী? পারিবারিক আইনটা অভিন্ন-ই হোক। এটা সবার জন্য সমান। কেউ যদি মনে করেন, তিনি এই আইনের সুবিধা নিবেন না, তাহলে তিনি তা নেবেন না।

নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠায় কাঠামোগত, রাজনৈতিক ও আইনি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে মনে করেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সালমা আলী। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনিও অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ের তাগিদ দেন। এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে অভিন্ন পারিবারিক আইন গবেষক ড. ফস্টিনা পেরেরা বলেছিলেন, অভিন্ন পারিবারিক আইন বলতে আমরা শুধু মুসলিম বা হিন্দু না, সবার কথা বলা হচ্ছে। অভিন্ন পারিবারিক আইন শুধু মানবাধিকার আন্দোলন নয়, বরং এটা রাষ্ট্রের এগিয়ে যাবার প্রশ্ন। এই আইন প্রণয়নে রাষ্ট্রকে প্রথম এগিয়ে আসতে হবে। কারণ সংবিধানে সাম্য ও সমতার ভিত্তিতে এগিয়ে যাবার কথা বলা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ শুরু : নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আজ ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ। ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশে ১৬ দিনব্যাপী এই পক্ষ পালনে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। ‘পারিবারিক আইনে সমতা আনি, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পক্ষকালব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে মহিলা পরিষদ। আজ সোমবার বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে র‌্যালি করবে সংগঠনটি। এছাড়া পক্ষকালব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে পোস্টার, লিফলেট, বিতরণ, স্টেকহোল্ডার ও তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, সংবাদ সম্মেলন।

প্রসঙ্গত, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ১৯৮১ সালে লাতিন আমেরিকায় নারীদের এক সম্মেলনে ২৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলন দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘ দিবসটি পালনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর। বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ১৯৯৭ সাল থেকে এই দিবস ও পক্ষ পালন করছে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস উদ?যাপন কমিটি।

টাইমলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App