দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার পলিসি স্টাডিজ (ক্যাবস) ১০টি পরামর্শ দিয়েছে। রবি ফসল উৎপাদন বাড়ানো, ক্ষুদ্র কৃষকদের সহায়তা ও স্বল্প সুদের ঋণ দেয়া এবং ফিশারিজ সেক্টরে প্রণোদনা দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বক্তারা।

গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বন্যাত্তোর কৃষি ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা। ক্যাবস এই বৈঠকের আয়োজন করে। সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার পলিসি স্টাডিজের চেয়ারম্যান কৃষি অর্থনীতিবিদ ও কলামিস্ট ড. মুহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফিরোজ মাহমুদ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোশাররফ হোসেন, ডিএইর সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মামুনুর রশিদ, পিকেএসএফর ডিএমডি ড. ফজলে রাব্বি সাদেক প্রমুখ।

বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, যে বন্যা হয়েছে তা স্বাভাবিক বন্যা নয়। ওই অঞ্চলের মানুষ আগে কখনো এ রকম বন্যা দেখেনি। গোমতী নদী একটি পাহাড়ি নদী। পাহাড়ি ঢলের পানি এসে বন্যা হলেও তা মেঘনা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যায়। খুব বেশি ক্ষতিসাধন করতে পারে না। তবে এবার বেশি ক্ষতি হয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় আমাদের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থাপনা নিতে হবে। প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে কৃষি খাতে রবি ফসল উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। যারা ক্ষুদ্র কৃষক তাদের দিকে বিশেষ নজর দিয়ে সহায়তা ও স্বল্প সুদের ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। ফিশারিজ সেক্টরেও প্রণোদনা দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। এসব কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে। বন্যায় মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, দূষণ ধুয়ে যাওয়ায় মাটির গুনাগুণ বৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে রবি ফসল উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। বন্যাপরবর্তী রোগবালাই থেকে নিরাপদ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ১০টি পরামর্শ তুলে ধরেন সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার পলিসি স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ড. মুহাম্মদ রুহুল আমিন।

এগুলো হলো :

১. বন্যাকবলিত এলাকার কৃষি ফসলের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি বিশেষ করে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরে রোপা আমনের বীজতলা, রোপিত আমন এবং দণ্ডায়মান আউশ ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি নিরূপণ করে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন কাজ শুরু করতে হবে।

২. আগাম শীতকালীন শাকসবজি, ডাল ফসল, তেল ফসলসহ অঞ্চল উপযোগী ফসল চাষের পরিকল্পনা ও কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে হবে।

৩. বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের আওতাভুক্ত নিজস্ব উঁচু জমিতে নাবী জাতের আমনের বীজতলা, পলি ব্যাগে অথবা বেডে বিভিন্ন সবজি, চারা উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বিএডিসি, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের উপকরণ মানসম্পন্ন বীজ, সার, বালাইনাশক ইত্যাদি সরবরাহ ও ব্যবহারের দিকনির্দেশনাসহ জরুরি পুনর্বাসন কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে।

৫. মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬. অসুস্থ গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির জরুরি চিকিৎসসেবা এবং খাদ্য সরবরাহ স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরগুলোর মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।

৭. বন্যাদুর্গত এলাকায় রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, আবাসন তৈরি ও মেরামত সংক্রান্ত পুনর্বাসন কাজে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে দ্রুত পুনর্বাসন ও মেরামতের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৮. স্বাস্থ্যসেবা, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশবিষয়ক কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে দ্রুত পুনর্বাসন ও সেবা দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।

৯. কৃষকদের শস্যঋণের/কৃষিঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে ঋণগ্রস্তদের ঋণ মওকুফ অথবা ঋণের কিস্তি মওকুফ করতে হবে।

১০. খুব দ্রুত শস্য বিমা/কৃষি বিমা চালু করতে হবে।