৪শ কোটি টাকার মালিক
আলোচিত পিয়ন জাহাঙ্গীরের সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি : সংগৃহীত
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী (পিয়ন) ৪শ কোটি টাকার মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলমের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কমিশনের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংস্থাটির জনসংযোগ দপ্তর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত ১৪ জুলাই চীন সফর নিয়ে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমার বাসার পিয়ন ছিল, সেও নাকি ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। শেখ হাসিনার ওই বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে জানা যায়, সেই পিয়নের নাম জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীর। তার বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল থানার খিলপাড়া ইউনিয়নে। বাবা মৃত রহমত উল্ল্যাহ।
জানা গেছে- শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকাকালে সুধা সদনে কাজ করতেন জাহাঙ্গীর। সেখানে আসা অতিথিদের পানি এগিয়ে দিতেন তিনি। ফলে তার নাম হয় ‘পানি জাহাঙ্গীর’। পরে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলে তার ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন তিনি।
তবে সরকারপ্রধানের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিতেন জাহাঙ্গীর। ঘুরতেন লাইসেন্সকৃত পিস্তল নিয়ে। নানা তদবির করে তিনি কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। নোয়াখালী ও ঢাকায় গড়েছেন বিপুল সম্পদ। এসব অভিযোগে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তাতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কোনো সম্পর্ক নেই। তার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নিতে বলা হয়।
এক পর্যায়ে রাজনীতির মাঠে নামেন জাহাঙ্গীর। চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ বাগিয়ে নেন। পরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য মনোনয়ন তোলেন। সেটি না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। তবে পরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
রাজধানীতে একাধিক প্লট-ফ্ল্যাট রয়েছে জাহাঙ্গীরের। ধানমন্ডিতে তার স্ত্রীর নামে আড়াই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট আছে। নোয়াখালীর মাইজদী শহরের হরি নারায়ণপুরে জাহাঙ্গীরের আট তলা বাড়ি রয়েছে। সেটিও তার স্ত্রীর নামে। সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য বিপুল অর্থ খরচ করেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে বিশাল বহর নিয়ে করতেন সভা-সমাবেশ।
বিভিন্ন সময়ে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নিজের এলাকায় দাওয়াত করে নিয়ে যান জাহাঙ্গীর। যাতায়াতের জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। ধানমন্ডিতে আলিশান ফ্ল্যাট ছাড়া মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেটে তার দুটি দোকান রয়েছে।
মিরপুরে সাত তলা ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জাহাঙ্গীরের। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় কৃষি খাত থেকে প্রতি বছর ৪ লাখ টাকা, বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে সাড়ে ১১ লাখ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে ৯ লাখ টাকা, চাকরি থেকে ৬ লাখ এবং অন্যান্য উৎস থেকে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা আয়ের তথ্য জানান তিনি। সব মিলিয়ে বছরে তার প্রায় ৫০ লাখ টাকার আয়ের কথা জানানো হয়।