ডেডলাইন ৫ আগস্ট
যা ঘটেছে রাজধানীতে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
কারফিউ ঘোষণার পর রবিবার রাত থেকে দেশজুড়ে ছিল থমথমে পরিবেশ। বৈষম্যবিরাধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিকে ঘিরে সহিংসতায় আশঙ্কায় গতকাল সোমবার সকাল থেকেই উৎকণ্ঠা ছিল জনমনে। তাই রাস্তায় মানুষের উপস্থিতিও ছিল কম। পুলিশ, সেনা সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন মোড়ে অবস্থানের পাশাপাশি নিয়মিত টহল অব্যাহত রাখে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কারফিউ উপেক্ষা করে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির ডাকে সাড়া দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জড়ো হতে থাকে মানুষ। রাজধানীর প্রবেশ পথেও বাড়তে থাকে জনতা।
এর মধ্যে রাজধানীর বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বাড্ডা থানায় আক্রমণ করলে জনরোষ থেকে বাঁচতে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে বেশ কয়েকজন হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ব্রডব্যান্ড সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা আবার চালু করা হয়। দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার উত্তরার আজমপুর থেকে রাজল²ী পর্যন্ত মূল সড়কে হাজার হাজার আন্দোলনকারী মিছিল নিয়ে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়। দুপুর ১টায় শাহবাগ অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। বেলা ১টার পর উত্তরা, রামপুরাসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সেখানে আসতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাঁধা দিলেও সেটি উপেক্ষা করে শাহবাগে অবস্থান নেন তারা।
সকাল পর্যন্ত ধীরগতিতে চললেও দুপুর ১টার দিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। সেনাপ্রধানের ভাষণ পর্যন্ত সংঘাত-সহিংসতা পরিহার করে সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান অনুরোধ জানানো হয়। দুপুর ২টায় ভাষণ দেয়ার কথা থাকলেও পরে সেটি পিছিয়ে ৩টায় হবে বলে জানানো হয়। এর মধ্যে বর্তমান সংকট নিরসনে দেশের সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন সেনাপ্রধান। ফলে বেলা ৩টায় সেনাপ্রধানের নির্ধারিত জাতির উদ্দেশে ভাষণ আরো কিছুটা পিছিয়ে যায়। রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র দিয়ে দুপুর আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যান। এ সময় তার ছোট বোন শেখ রেহানা সঙ্গে ছিলেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে দুপুর আড়াইটায় শাহবাগে সেনাবাহিনীর সদস্যদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের উল্লাসে ফেটে পড়েন। শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর গণভবন প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন আন্দোলনকারীরা। নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যারিকেড ভেঙে বেলা ৩টার দিকে তারা গণভনে ঢুকে পড়েন। অনেকেই গণভবনের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর করেন। মাছ, মুরগি, হাঁস, ছাগল, খরগোশ, চেয়ার, টেবিল, টিভি, কম্বলসহ বেশকিছু জিনিসপত্র নিয়ে বের হতে দেখা যায় বেশ কয়েকজনকে। সোয়া ৩টার দিকে সংসদ ভবনে ঢুকে পড়ে হাজারো মানুষ।
বেলা ৪টার দিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন সেনাপ্রধান। ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে বলে জানান তিনি। সোমবার রাতের মধ্যেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে তিনি জানান। এর আগে
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সরকার
গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করতে ৭টার দিকে তিন বাহিনীর প্রধানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা যান গণভবনে।