কোটা আন্দোলনের সুযোগে সক্রিয় ছিনতাই ও টানা পার্টি

আজিজুর রহমান জিদনী
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চলা অস্থির পরিবেশের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ছিনতাই ও টানা পার্টির সদস্যরা। এদের খপ্পরে পড়ে মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খুইয়েছেন অনেক ভুক্তভোগী।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্বৃত্তরা সব সময় বিশেষ পরিস্থিতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ঝামেলা হতে পারে ভেবে এসময় অনেক ভুক্তভোগী পুলিশের শরণাপন্ন হন না। যার ফলে, ভুক্তভোগীর প্রকৃত সংখ্যা উঠে আসে না। র্যাব ও পুলিশ বলছে, মাদক ও ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ দমনে তারা কাজ করছেন। এর মধ্যে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ছিনতাই ও টানা পার্টি বিরোধী অভিযান আরো জোরদার করা হবে।
গত ৩০ জুলাই ইস্কাটনের দৈনিক জনকণ্ঠ ভবনের একটু আগে রিকশায় করে মগবাজার আসার পথে টানা পার্টির খপ্পরে পড়েন নেসারুল হক খোকন নামে এক ব্যক্তি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি মোটরসাইকেলে থাকা দুই ব্যক্তি টান দিয়ে নিয়ে যায়। এছাড়াও কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চলা সহিংসতার সময় পুলিশের গুলি বা আন্দেলনকারীদের হাতে নয়, ছিনতাইকারীদের উপর্যুপরি কোপ ও মারধরে গুরুতর আহত হন পাপ্পু নামে এক অটোরিকশাচালক। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ৫০৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন তিনি।
ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, গরিব মানুষ, গ্যাঞ্জাম হলেও পেটের দায়ে গত ২০ জুলাই অটোরিকশা নিয়ে বের হই। রাত সাড়ে ৮টার দিকে কেরানীগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের সামনে ঝিলমিল এলাকার একটি জায়গায় অটোরিকশা রেখে প্রস্রাব করছিলাম। এর মধ্যেই পেছন থেকে মাথায় বাড়ি। এরপরই শুরু হয় কোপ। পিটিয়ে মাথা ফাটানো ছাড়াও পায়ে এবং পিঠে কুপিয়ে অটোরিকশা নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তিনি বলেন, মাত্র ৬ মাস আগে সেকেন্ড হ্যান্ড অটোরিকশা কিনছি। এইডাই আমার রুজি-রুটি। আমারে কে দেখব।
ভুক্তভোগীর বোন পাপিয়া বলেন, এরই মধ্যে ভাই অন্যের মোবাইল ফোন দিয়ে আমাকে ফোন করে। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভাইকে প্রথমে মিটফোর্ড হাসপাতালে, পরে সেখান থেকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসি।
একই রাতে জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিত সিরাজ নামের এক ব্যক্তি গাড়িতে হাতিরঝিল হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। এসময় তার গাড়ি থামায় বেশ কয়েকজন। সিরাজ জানতে চান- তারা কোটা আন্দোলনকারী নাকি ছাত্রলীগ। তারা বলে, আমরা চাঁদাবাজ। টাকা না দিলে গাড়ি ভেঙে ফেলা হবে। তখন ২ হাজার টাকা নিয়ে তারা চলে যায়।
গত ১৯ জুলাই ইমরান হোসেন নামে এক ব্যক্তি রামপুরা বনশ্রী এলাকায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। এ সময় তার স্যামসাং মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে র্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস ভোরের কাগজকে বলেন, কোটাবিরোধী অন্দোলনের মধ্যেও অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র্যাব কাজ করছে। প্রতিদিনই আমরা মাদকবিরোধীসহ অন্যান্য ঘটনায় অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করছি। ছিনতাই ও টানা পার্টির সদস্যদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান আরো বাড়ানো হবে।
মাওলানা ভাসানি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক বলেন, দুর্বৃত্তরা সব সময় বিশেষ পরিস্থিতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে থাকে। কোটা সহিংসতার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানসহ নিরাপত্তার কাজে বেশি ব্যস্ত থাকার সুযোগকে কাজে লাগায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় অনেক ভুক্তভোগীই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হন না।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবির) অতিরিক্ত কমিশনার মহা. আশরাফুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, দু-একদিন হলো আমি দায়িত্ব নিয়েছি। এ বিষয়টি আমার এখনো জানা নেই। তবে বিষয়টি ডিবি কাজ করবে।