‘মার্চ ফর জাস্টিস’
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বিভিন্ন জেলায় পুলিশের সংঘর্ষ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: ভোরের কাগজ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ছিল গতকাল বুধবার। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সিলেট অফিস ও প্রতিবেদক/প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সিলেট : বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শাবিপ্রবির প্রধান গেইটে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। এরপর বেলা সাড়ে ১২টায় শাবিপ্রবির গেট থেকে মিছিল সহকারে সিলেট নগরীর দিকে আসেন শিক্ষার্থীরা। নগরীর সুবিদবাজার এলাকায় আসার পর প্রথমে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন তারা। পরে বাধা ডিঙিয়ে যাওয়ার সময় সিলেট প্রেসক্লাব এলাকা পাড়ি দেয়ার সময় পেছন থেকে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় তাদের। এ সময় শিক্ষার্থীরাও ইটপাটকেল ছোড়েন। সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকরারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ সময় পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। পরে পুলিশ কাঁদানের গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়েছে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় তারা।
রাজশাহী : শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসূচি ঘিরে রাজশাহীতে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। দুপুর ২টার দিক নগরীর মহিষবাথান এলাকায় ফাঁকা গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। এরপর ঘটনাস্থল ও এর আশপাশের এলাকা থেকে ২৪ জনকে আটক করা হয়।
এ বিষয়ে আরএমপির রাজপাড়া থানার ওসি রফিকুল হক বলেন, আমাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ছোড়া হয় ৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি। এরপর ঘটনাস্থল থেকে আমরা ৫ শিক্ষার্থীকে থানায় নিয়েছি। ওসি বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়ে গতকাল বুধবারও রাজপথে নেমেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। তবে এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
গাজীপুর : কয়েক দফা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে গাজীপুর শহরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। পরে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় কয়েকজন আটক করা হয়েছে বলে ছাত্ররা অভিযোগ করেন। দুপুরে আন্দোলনকারীরা গাজীপুর শহরের বড় মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষিপ্ত মিছিল বের করে। মিছিলটি শিববাড়ি দিকে অগ্রসর হলে বিভিন্ন দিক থেকে আন্দোলনকারীরা যোগ দেন। শিক্ষার্থীরা জানান, কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমাদের শহরের মধ্যে অবস্থানের কথা ছিল। তবে পুলিশের চেকপোস্ট থাকায় সেটি আমরা করতে পারিনি। গ্রেপ্তারের ভয়ে ডিসি অফিসের পশ্চিম দিকে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীরা এদিকের মিছিলে অংশ নিতে পারেনি। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) গোয়েন্দা শাখার উপকমিশনার নাজির আহমেদ খান জানান, শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে মহাসড়কে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়। তবে কাউকে আটক করা হয়নি।
বরিশাল : জেলায় শিক্ষার্থীদের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের লাঠির আঘাতে ৬ সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। এ ঘটনার পর সড়ক থেকে দুই ছাত্রীসহ ১১ জনকে পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়েছে। পুলিশের দাবি শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে শিবিরের কিছু কর্মী অংশ নেয়ায় তাদের আটক করা হয়েছে। আর শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা রাষ্ট্রবিরোধী কিংবা কোনো ধরনের সংঘাতে ছিল না। তারপরও বিনা উসকানিতে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে এবং সহপাঠীদের ধরে নিয়ে গেছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা দিকে নগরীর সদর রোড ও ফজলুল হক অ্যাভিনিউ এলাকাজুড়ে এ ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে আসা শিক্ষক বিপ্লব দাস বলেন, শিক্ষার্থীরা সদর রোড থেকে আদালত পাড়ায় আসার সময় পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে। অথচ শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের গোলযোগ করেনি।
ঘটনাস্থলে থাকা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, বিরোধী ছাত্রসংগঠনের কিছু নেতা রাস্তা অবরোধ করেছিল। কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এটার সামনেও অবরোধ করেছিল। তারা পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা করে, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে তাদের উঠিয়ে দিয়েছি। বেশ কয়েকজনকে আটক করেছি।
খুলনা : দুপুর থেকে মহানগরীর রয়েল মোড় এলাকায় আন্দোলন কর্মসূচি পালন করার লক্ষ্যে একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা রয়েল মোড় এলাকায় অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বহিরাগত দুর্বৃত্তরা ঢুকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশ তাদের ওপর টিয়ারশেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সাতরাস্তার মোড়ে থাকা পুলিশের দুটি গাড়ি পিছু হটলেও দুপুর সোয়া ২টার দিকে আবারও পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় খুলনা নগরী প্রধান সড়ক ও মোড়গুলো। এ সময় পুলিশ সেখান থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরবর্তীতে পুলিশ নগরীর শান্তিধাম মোড়, রয়েল মোড়, সাতরাস্তা মোড়, ফুল মার্কেটসহ সব এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।
ঠাকুরগাঁও : শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জ করার ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। দুপুরে পৌরসভার প্রধান ফটকের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা জানান, কর্মসূচি পালন করার জন্য সকাল ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও শহরের টাঙ্গন নদীর তীরে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ অপরাজেয়-৭১ এ সবাই জড়ো হতে থাকে। এরপর সেখান থেকে শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে জেলা জজ কার্যালয়ের দিকে রওনা হয়। পথে আর্ট গ্যালারি এলাকায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের বাধা দেয়। পুলিশের সেই বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যেতে থাকে। এরপর পুলিশ ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মূল ফটকের সামনের সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে শিক্ষার্থীদের পথরোধ করার চেষ্টা করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।
যশোর : পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এছাড়া ছয় শিক্ষার্থীকে পুলিশ মিছিল থেকে ধাওয়া করে আটক করেছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে এবং শহরের ধর্মতলায় এ ঘটনা ঘটে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোরের সমন্বয়ক রাশেদ খান বলেন, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি পুলিশের বাধার মুখে পড়েছে। বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। বাধা দিয়ে আটক করে আমাদের আন্দোলন প্রতিহত করা যাবে না। যশোর কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কাউকে আটক করা হয়নি। শহরের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।