নিমতলী ট্র্যাজেডি
কোনো উদ্যোগই বাস্তবায়ন হয়নি ১৪ বছরে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সালটা ছিল ২০১০। তারিখ ৩ জুন। ঘড়ির কাটায় রাত তখন ৯টা বাজে। নিমতলীর নবাব কাটারার ৪৩ নম্বর ছয় তলা বাড়িটির নিচতলায় রুনার বিয়ের ‘পানচিনি’ অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। আর সেই বাড়ির নিচতলায় চলছিল রান্নার আয়োজন। তার পাশেই রাসায়নিকের গুদাম। ধারণা করা হয় আগুনের প্রচণ্ড তাপে গুদামে থাকা রাসায়নিকের প্লাস্টিকের ড্রাম গলে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। ঘটনার আকস্মিকতা বোঝার আগেই সর্বগ্রাসী আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। এ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ১২৪ জন। আপনজন হারিয়ে নিঃস্ব হয় কয়েকটি পরিবার।
ঘটনার পর পুরান ঢাকার গিঞ্জি আবাসিক এলাকা থেকে সব ধরনের রাসায়নিক পদার্থের দোকান, গুদাম ও কারখানা অপসারণ করার দাবি ওঠে জোরালোভাবে। ট্র্যাজেডির পর সরকারের পক্ষ থেকে টাস্কফোর্স গঠন, অঙ্গীকার ও পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এত বছরেও কোনো পরিবর্তন আসেনি ওই এলাকায়। আশপাশে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে আরো অনেক ভবন। পুরান ঢাকার নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের ওই ভবনটির সামনে নিহতদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। ভয়াল সেই দিনের কথা স্মরণ করে এখনো গুমরে কেঁদে ওঠেন নিমতলীবাসী।
ঘটনার পর স্বজন হারানো রুনা, রত্না ও আসমার বিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের স্বামীদেরও চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। এছাড়া তার পক্ষ থেক ৭২টি পরিবারকে এক লাখ করে টাকা দেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল এক মাসের বাজার ও অন্যান্য সহায়তা। এরপর আজো আর কেউ তাদের খোঁজ নেননি। সে ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অধিকাংশই এই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন অন্যত্র।
ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, ওই ঘটনার পর বংশাল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়। তবে কোনো মামলা বা কোনো তদন্ত হয়নি। তাই এত মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিচারের সম্মুখীন করা হয়নি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মনেও রয়েছে আক্ষেপ। নিমতলীর ঘটনার পরও একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে। স্বজন হারানো নিমতলীবাসীদের চাওয়া আর কারোর স্বজন যেন পুড়ে অঙ্গার না হয়; জীবন দিতে না হয়।