ঢাকার ম্যানহোলে বিপত্তির শঙ্কা

মুহাম্মদ রুহুল আমিন
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ সড়কের ম্যানহোলে এখন ঢাকনা নেই। রাজধানীর মূল সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার প্রায় প্রতিটি অলি-গলিরই এ সমস্যা। দেখা গেছে, ম্যানহোলের অনেক ঢাকনা ভাঙা, চুরিও হয়েছে বেশির ভাগ। ম্যানহোলে ঢাকনা আছে কিনা- তা দেখারও কেউ নেই। ঢাকনাবিহীন এসব ম্যানহোলে ঘটছে দুর্ঘটনা, আহত হচ্ছেন পথচারীদের কেউ কেউ। ম্যানহোলের ঢাকনা চুরির বিষয়টি পুরনো হলেও গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তা কয়েক গুণ বেড়েছে। এর সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে না, কারণ ঢাকায় বর্তমানে মেয়র-কাউন্সিলর বলতে কোনো জনপ্রতিনিধি নেই।
জানা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রায় ৮০ হাজার ম্যানহোল রয়েছে। ম্যানহোলে ঢাকনা না থাকার মূল কারণ হচ্ছে ভারী যানবাহন। এসব যানবাহনের চাকার অতিরিক্ত চাপে কারণে ম্যানহোলের ঢাকনা ভেঙে যায়। এছাড়া প্রতি বছর ম্যানহোল পরিস্কার করার সময়ও ভেঙে যায় অনেক ঢাকনা। ভবঘুরে, টোকাই, মাদকাসক্ত ও ছিনতাইকারীরা অনেক ঢাকনা চুরি করে নিয়ে বিক্রি করে। নতুন করে ঢাকনা লাগানো হলেও কিছুদিন পর আবার একই সমস্যা দেখা যায়। প্রতি বছর এসব সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে বেশ হিমশিম পোহাতে হয় সিটি করপোরেশনকে।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও অলি-গলি ঘুরে দেখা গেছে, শান্তিনগর থেকে মালিবাগ বা কাকরাইল যেতে মূল সড়ক ও ফুটপাতে বেশ কয়েকটি স্থানে ম্যানহোলের ঢাকনা নেই। মৌচাক মার্কেট থেকে মগবাজার, মগবাজার থেকে মধুবাগ, বাংলামোটর থেকে হাতিরঝিল, মীরবাগ হয়ে রামপুরা বাজার সড়কেও একই চিত্র। মালিবাগ আবুল হোটেল থেকে তালতলা মার্কেট পর্যন্ত সড়ক, তালতলা থেকে খিলগাঁও, গোড়ান টেম্পুস্ট্যান্ড সড়ক, সিপাহীবাগ সড়ক, তিলপাড়া সড়ক, বাসাবো টেম্পুস্ট্যান্ড, মাদারটেক থেকে বনশ্রী যাওয়ার সড়কের অনেক এলাকায় ম্যানহোলের ঢাকনা নেই। সতর্কতা সংকেত হিসেবে কিছু কিছু স্থানে বাঁশ দিয়ে তাতে লাল কাপড় বেঁধে দেয়া হয়েছে। গর্ত পাশ কাটিয়ে গাড়ি ও রিকশা-ভ্যান চলাচলের কারণে সড়কে ধীরগতি। কখনো তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।
একই ঘটনা পুরান ঢাকার ওয়ারী, টিপু সুলতান রোড, কাপ্তান বাজার, বংশাল, সূত্রাপুর, ধুপখোলা, ধোলাইখাল, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কামরঙ্গীরচর, পল্টন, কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, ফকিরাপুল, আরামবাগ, গোপীবাগ, স্বামীবাগ, দয়াগঞ্জসহ অনেক এলাকায়। মেরুল বাড্ডা থানার সামনের সড়ক থেকে বৈঠাখালী বাজার যাওয়ার সড়কেও বেশকিছু ম্যানহোলে ঢাকনা নেই। একই চিত্র দেখা গেছে কমলাপুর ও মতিঝিল এলাকার অলি-গলিতে। মিরপুর, কাফরুল, মোহাম্মদপুর, আদাবর এলাকার সড়ক ও অলি-গলিতেও ঢাকনাবিহীন ও ভাঙাচোরা ম্যানহোল চোখে পড়ে।
আরো পড়ুন: ডিএনসিসির তিন কর্মকর্তাকে বদলি
স্থানীয়রা জানান, সব সময়ই কোনো না কোনো এলাকার রাস্তায় ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল দেখা যায়। আগে তা দ্রুতই সমাধান হতো। কারণ আমরা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে যে কোনো সমস্যা খুব সহজেই জানাতাম। তারাও দ্রুত পদক্ষেপ নিতেন। কিন্তু এখন তো আর ওয়ার্ড কাউন্সিল নেই, তাই সমস্যা সহজে কাউকে জানাতে পারছি না। সিটি করপোরেশনের লোকজনেরও তো দেখা নেই।
শান্তিনগর-কাকরাইল সড়কে ৩-৪টি স্থানে ম্যানহোলের ঢাকনা নেই। কর্ণফুলি মার্কেটের কিছু সামনে ম্যানহোলে ঢাকনা না থাকায় স্থানীয়রা শুকনো বাঁশের মাথায় লাল কাপড় বেঁধে দিয়েছেন। এই পথ দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করেন রেজাউল করিম। তিনি জানান, ২০ দিনের বেশি হলো ম্যানহোলে কোনো ঢাকনা নেই। প্রথমে ঢাকনাটি ভাঙা অবস্থায় দেখা গেছে। এরপর সেটি চুরি হয়ে গেছে। অথচ এটি মূল সড়ক হলেও সিটি করপোরেশনের কোনো দায় আমরা দেখছি না।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রকৌশল বিভাগের একজন কর্মকর্তা ভোরের কাগজ বলেন, প্রতিনিয়তই ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি হয়ে যাচ্ছে। এমনও হয়েছে- ঢাকনা লাগানোর ১০ দিনের মাথায় সেটি চুরি হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। এতে আমাদের আর্থিক ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। আমরা এখন নতুন করে চিন্তা করছি, কোন উপায়ে এই সমস্যা সমাধান করা যায়। আমরা এমন পদ্ধতি বের করার চেষ্টা করছি যেন ম্যানহোলে ঢাকনা লাগানোর পর সেটি আর সহজে কেউ খুলে চুরি করতে না পারে। এটি খুব দ্রুতই আমরা করতে যাচ্ছি।