বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ট্রাম্পের ‘এক্স বার্তায়’ কৌতূহল

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
সামনে শহীদ নূর হোসেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বঙ্গবন্ধু মেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। ঠিক এর পেছনেই দুদিকে দুজন পোশাক পরিহিত পুলিশ, তারপর দুদিকে সেনাবাহিনীর দুজন সদস্য এবং এদের মাঝখানে দুজন সাধারণ মানুষকে আটকের ছবি। এই ছবিটি কোনো সম্পাদনা করা নয়; বরং ছবিটি এক্সে (সাবেক টুইটার) ‘ডোনাল্ড জে ট্রাম্প’ নামক ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়েছে। পোস্টটিতে দেখা যায়, সেখানে লেখা হয়েছে ট্রাম্পকে সমর্থন করায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বাংলাদেশে। শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ কোন দিকে যাচ্ছে? পাশাপাশি গত শনিবার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে ট্রাম্পের যে ছবি ছিল সেগুলোও জুড়ে দেয়া হয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া শেখ হাসিনার এক ফোন আলাপে এমন একটি কথা ছড়িয়ে পড়েছিল দেশজুড়ে। কিন্তু অদ্ভূতভাবে দেখা যাচ্ছে, শেখ হাসিনার কথামতো সেদিন রাতে সব মিলে গিয়েছে। আর এরপর এই এক্স অ্যাকাউন্টের পোস্টে সেই প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে। তবে সন্দেহেরে জায়গাটি হলো, এটি ট্রাম্পের ব্যাক্তিগত অ্যাকাউন্ট নয়। তবে সেই অ্যাকাউন্টটি ভেরিফায়েড। পাশাপাশি ট্রাম্প সদরদপ্তরের ঠিকানাকেই সেই অ্যাকাউন্টের ঠিকানা দাবি করা হয়েছে সেই অ্যাকাউন্টেই। কিন্তু এই অ্যাকাউন্টে যে পোস্টটি দেখা গেছে তা আবার ট্রাম্পের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে দেখা যায়নি। এর ফলে অ্যাকাউন্ট নিয়ে চলছে ধোঁয়াশা। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, ট্রাম্পের মতো পরিচিত ব্যক্তির নামে ‘ফেইক’ অ্যাকাউন্ট থাকতেই পারে। তবে সেটি ভেরিফায়েড করা ‘এক্সের’ মতো কোম্পানির জন্য মোটেও ভালো ইঙ্গিত নয়। আবার সেই অ্যাকাউন্টের ফলোয়ার সংখ্যাও খুব বেশি নয়। কিন্তু বাংলাদেশে নানা মতামত ও বিভ্রান্তি সৃষ্টিতে সেই অ্যাকাউন্টের ঘোষিত বার্তা বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন অনেকে। পাশাপাশি সদ্য বিজয়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে সরাসরি শেখ হাসিনাকে সমর্থন করছেন স্বাভাবিকভাবে তা কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। কারণ এই অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আদৌ ট্রাম্পের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা তা বর্তমান সময়ের জন্য বড় প্রশ্নে পরিণত হয়েছে।
আরো পড়ুন: মণিপুরে পুলিশের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত ১১
ট্রাম্পের সেই এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে আসা বার্তার জবাব দিয়েছেন নানা মতের মানুষ। এর মধ্যে জন ড্যানিয়েল ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেছেন, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ট্রাম্পবিরোধী অভিযোগগুলো ক্ষমতাচ্যুত শাসকের সমর্থক দ্বারা সাজানো এবং একটি বিভ্রান্তিমূলক প্রচেষ্টার অংশ। তিনি (শেখ হাসিনা) দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকাবিরোধী এবং যার সরকার তার ১৫ বছরে হাজার হাজার মানুষকে হত্যার জন্য দায়ী ছিল। বাংলাদেশের জনগণ এখন সংস্কার চায় যা নির্বাচনের মাধ্যমে শেষ হবে এবং দেশকে আরো মহান করে তুলবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হিন্দুত্বের প্রচারে না পড়ার জন্যও তিনি অনুরোধ করেছেন এক্সের সেই বার্তার জবাবে।
এদিকে, সেদিনের আওয়ামী লীগের ডাকা কর্মসূচি উপলক্ষে বাংলাদেশে ট্রাম্প সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে- এমন এক শিরোনামে খবর প্রকাশ করে ভারতীয় সম্প্রচার মাধ্যম ‘ইন্ডিয়াটুডে’। সেই খবরের বিষয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং জানায়, ভারতীয় সংবাদপত্র ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে আক্রমণাত্মকভাবে ভুল তথ্য প্রচার করছে। প্রেস উইং জানায়, ভারতীয় সংবাদপত্র ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে আক্রমণাত্মকভাবে ভুল তথ্য প্রচার করছে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়নি এবং তাদের ওপর কোনো দমন অভিযানের ঘটনাও ঘটেনি।
এর আগে গত রবিবার রাজধানীতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনার অভিযোগে দেশে গণহত্যা, দুর্নীতি ও কোটি কোটি ডলার পাচারের জন্য অভিযুক্ত এবং গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কয়েক ডজন নেতাকর্মী, কর্মকর্তা ও সদস্যকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রেস উইং জানায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাসিনা তার সমর্থকদের ডোনাল্ড ট্রাম্পের পোস্টার বহন করার এবং গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়ার কারণে তারা সেগুলো বহন করছিল। আটকরা পুলিশকে বলেছে, তারা মার্কিন রাজনীতি অনুসরণ করে না, শুধু হাসিনার নির্দেশে ট্রাম্পের পোস্টার বহন করেছিল। আগস্টে অভূতপূর্ব বিপ্লবের পর শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে কিছু ভারতীয় সংবাদপত্র ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে আক্রমণাত্মকভাবে ভুল তথ্য প্রচার করছে। তারা বিপ্লবোত্তর দিনগুলোতে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কথিত সহিংসতার ঘটনাগুলোকে ব্যাপকভাবে অতিরঞ্জিত করেছে। রবিবার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের গ্রেপ্তারের ঘটনাও তারা একইভাবে অতিরঞ্জিত করেছে।