×

প্রথম পাতা

তারল্য সংকট

এটিএম বুথে বুথে ঘুরে টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এটিএম বুথে বুথে ঘুরে টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহক

ছবি: সংগৃহীত

   

চলমান পরিস্থিতিতে রাজধানীর বেশির ভাগ এটিএম ও ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিনে (সিআরএম) টাকা নেই। কিছু কিছু বুথ বন্ধ রয়েছে। টাকার জন্য বুথে বুথে ঘুরছেন কার্ডধারীরা, কিন্তু টাকা তুলতে পারছেন না। এদিকে ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের নগদ ২ লাখ টাকার বেশি উত্তোলনের অনুমতি না দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে গত বৃহস্পতিবার একটি হিসাব থেকে এক লাখের বেশি নগদ টাকা উত্তোলন করা যাবে না বলেও নির্দেশনা দেয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত শুধু ওই দিনের জন্য প্রযোজ্য ছিল। তবে যে কোনো পরিমাণ টাকা অন্য হিসাবে স্থানান্তর ও ডিজিটাল লেনদেন করতে পারবেন গ্রাহক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে চলতি সপ্তাহে ব্যাংক থেকে ২ লাখ টাকার বেশি নগদ উত্তোলন করা যাবে না। সিদ্ধান্তটি শুধু চলতি সপ্তাহের জন্য প্রযোজ্য হবে। সন্দেহজনক লেনদেন বন্ধ রাখতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে দেশজুড়ে যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তাতে ব্যাংকের সব শাখা খোলেনি। এছাড়া আতঙ্কিত হয়ে বেশির ভাগ গ্রাহক টাকা তুলে নিচ্ছেন। এতে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো আরো সংকটে পড়েছে। পাশাপাশি দেশজুড়ে পুলিশ সক্রিয় না থাকায় ডাকাতের ভয়ে অনেক ব্যাংক তাদের বুথে টাকা রাখতে চাইছে না। সব মিলিয়ে নগদ টাকার সংকটে পড়েছে মানুষ।

গতকাল রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, খিলগাঁও, মৌচাক, মালিবাগ, কমলাপুর, মতিঝিলের কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাতে গোনা কিছু এটিএম বুথ খোলা রয়েছে। এসব এলাকার সাউথইস্ট ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংকসহ বেশ কিছু ব্যাংকের এটিএম সেবা বন্ধ পাওয়া যায়। আবার কিছু বুথ খোলা থাকলেও বুথে টাকা না থাকায় গ্রাহকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

যদিও বিভিন্ন ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘদিন ব্যাংকিং কার্যক্রমে অচলাবস্থা নেমেছিল। তখন এটিএম বুথই ছিল ভরসা। তাই বুথে গচ্ছিত টাকা শেষ হয়ে গেছে। আবার অনেক এটিএম বুথে ক্ষয়-ক্ষতি এবং নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করায় বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, বন্ধ থাকা বেশির ভাগ ব্যাংকের বুথের নিরাপত্তাকর্মীদেরও পাওয়া যায়নি। যাদের পাওয়া গেছে তারা জানিয়েছেন, নিরাপত্তার অভাবে বুথে টাকা সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। যদিও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংকসহ অল্প কিছু ব্যাংকের এটিএম বুথ খোলা রয়েছে। মৌচাক মার্কেটের বিপরীতে সাউথইস্ট ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী শহিদুল বলেন, যতক্ষণ-না নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্বাভাবিক হচ্ছে ততক্ষণ আমাদের সেবা ঠিকমতো দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

রাজধানীর কমলাপুর এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম। জরুরি প্রয়োজনে শনিবার টাকা তুলতে গিয়ে ৫০টির বেশি এটিএম বুথে গিয়ে বিমুখ হয়েছেন। হেঁটে ও রিকশায় কমলাপুর, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, পল্টন এলাকার বিভিন্ন এটিএম বুথে গেছেন তিনি। এভাবে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ঘুরেও টাকা তুলতে পারেননি। নিজ ব্যাংকের বুথে টাকা না পেয়ে আরো ৯টি ব্যাংকের এটিএম বুথে গেছেন সাউথইস্ট ব্যাংকের এ গ্রাহক। বেশির ভাগ এটিএম বুথেই লেখা ‘আউট অব সার্ভিস’। কোথাও কোথাও যান্ত্রিক ত্রুটি বা কারিগরি ত্রুটির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছে ব্যাংক।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এটিএমে টাকা পৌঁছে থাকে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তৃতীয় পক্ষের এই সেবা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে এটিএমে টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। তাই দেশজুড়ে বেশির ভাগ ব্যাংকের এটিএম সেবা বন্ধ। যতটা না টাকার সংকট, তার চেয়ে বেশি নিরাপত্তার আশঙ্কায় ব্যাংকগুলো তাদের এটিএম কার্যক্রম কমিয়ে দিয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে টাকা পরিবহনের ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না অনেক ব্যাংক ও এটিএমে অর্থ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও চাহিদা অনুযায়ী নগদ টাকা পাওয়া যাচ্ছে না।

ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান সিকিউরেক্স লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা বলেন, আজ (রবিবার) আমরা এক টাকাও সরবরাহ করতে পরিনি। আমাদের ভল্টে আর টাকা নেই। বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা ও বাংলাদেশ ব্যাংকও টাকা দিচ্ছে না। স্বাভাবিক সময়ে আমাদের কোম্পানি প্রতিদিন ২৫০ কোটি টাকা সরবরাহ করলেও আজ কোনো টাকাই দিতে পারিনি। নগদ টাকার সংকট ও নিরাপত্তার ঝুঁকিও এর অন্যতম কারণ।

জানতে চাইলে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, কয়েকদিন ধরে নিরাপত্তাহীনতার কারণে তৃতীয় পক্ষের এই সেবা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে অনেক ব্যাংকের এটিএমে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দেয়া সম্ভব হয়নি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

বুথ থেকে টাকা তুলতে এসে ফেরত যাওয়া একজন গ্রাহক শফিকুর রহমান বলেন, পাঁচটি বুথ ঘুরে এখানে এসেছি। কিন্তু এখানেও আমার ব্যাংকের বুথ বন্ধ। এরই মধ্যে ২০০ টাকা রিকশা ভাড়া খরচ হলো। টাকা তুলতে পারলাম না। এখন হয় বিকাশ অথবা নগদে টাকা অ্যাড মানি করতে হবে অথবা অন্য ব্যাংকের শাখায় যেতে হবে। কিন্তু অন্য ব্যাংকেও পাব কিনা সংশয়ে আছি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাস শেষে দেশে বিভিন্ন ব্যাংকের মোট এটিএমের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৪২৮টি। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে ৯ হাজার ৪০৯টি আর গ্রামাঞ্চলে ৪ হাজার ১৯টি। এটিএম ছাড়া সিআরএমের (ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন) মাধ্যমেও নগদ টাকা উত্তোলন করা যায়। দেশের বেসরকারি খাতের ব্র্যাক, সিটি, ঢাকা ব্যাংকসহ অনেক ব্যাংক এখন এটিএমের বদলে সিআরএমের প্রতি ঝুঁকছে। সিআরএমে টাকা উত্তোলনের পাশাপাশি নগদ জমারও সুযোগ রয়েছে। এ কারণে ধীরে ধীরে সিআরএমের সংখ্যা বাড়ছে। গত মে মাস শেষে দেশে সিআরএমের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৫০টি। এসব সিআরএমের বেশির ভাগই শহরাঞ্চলে, ৩ হাজার ৯৮৫টি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App