সাবেক ছাত্রনেতাদের ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান
তোপের মুখে কাদের ও ড. আব্দুর রাজ্জাক

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ওবায়দুল কাদের
হট্টগোল আর বাগবিতণ্ডার মধ্য দিয়ে ভণ্ডুল হলো আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাবেক ছাত্র নেতাদের মতবিনিময় সভা। দলীয় কর্মী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়েন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। এ সময় ওবায়দুল কাদেরকে ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ বলেও আওয়াজ দিতে শোনা গেছে। ড. আব্দুর রাজ্জাককে সভাস্থলে দেখে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা চিৎকার দিয়ে ওঠেন, তিনি এখানে কেন? তার ছেলে কেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট করেছেন, সেটিও জানতে চান সাবেক নেতারা।
মূলত, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা ডেকেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এ সভায় ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় না করে সাংবাদিকদের ব্রিফ শুরু করেন তিনি। সাবেক ছাত্রনেতাদের মতবিনিময় সভায় ডেকে আলোচনা না করেই সংবাদ সম্মেলন করায় হট্টগোল শুরু হয়। ব্রিফিংয়ের মাঝেই ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা হট্টগোল করেন।
এসময় ওবায়দুল কাদেরকে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলেও আওয়াজ দিতে শোনা যায়। সাবেক নেতাদের হট্টগোলের কারণে সংবাদ সম্মেলন শেষ না করেই তার অফিসে চলে যান ওবায়দুল কাদের। তখন সাবেক নেতারা স্লোগান দেন। এ সময় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের নিচ তলায় ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন তারা। বের হওয়ার সময়ও হট্টগোলে পড়েন ড. আব্দুর রাজ্জাক।
এ ঘটনার সূত্রপাত সকাল সাড়ে ১০টায়। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাককে সভাস্থলে দেখে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা চিৎকার দিয়ে উঠেন। তিনি এখানে কেন? তার ছেলে কেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট করেছেন? সেটি জানতে চান সাবেক ছাত্রনেতারা। এরপর সোয়া ১১টায় সভাস্থলে আসেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এসেই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন তিনি। এ সময় পেছন থেকে সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেকে সাংবাদিকদের উদ্দেশে গালাগাল করেন। ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করেও বলেন, ডাকছেন আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে। আপনি করছেন সংবাদ সম্মেলন। এরই মধ্যে কিছুক্ষণ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
এর আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত সাবেক ছাত্রনেতাদের উদ্দেশে বলেন, অভিমান ভুলে কোটা আন্দোলনের নামে যারা নারকীয় ধ্বংস চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আওয়ামী লীগ দেখবে মাঠে কারা থাকেন। পার্টি অফিসে বসে থাকতে দেয়া হবে না। ওবায়দুল কাদের বলেন, কাউকে বসিয়ে রাখব না। আমরা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গাতে সাবেক ছাত্র নেতাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করব। সেই কথা আজ জানিয়ে দেয়া হলো।
সেতুমন্ত্রী বলেন, যাকে যেখানে দায়িত্ব দেয়া হবে, মনে রাখতে হবে; এ দায়িত্ব পালনের বিষয়টি আমরা ভবিষ্যতে মূল্যায়ন করব। এটা আমি দলের সভাপতির পক্ষ থেকে আপনাদের বলছি। সংকটে যারা ঝুঁকি নেবেন, তাদের বিষয়ে অবশ্যই আমাদের মূল্যায়ন থাকবে।
তিনি বলেন, আর যারা কোনো কাজ করবে না, শুধু অফিসে এসে প্রটোকল দেবেন- এমন নেতাকর্মীদের আমাদের দরকার নেই। কোনো প্রটোকল দরকার নেই। আমাদের প্রটোকল আমাদের আদর্শ। কোনো ব্যক্তির আওয়ামী লীগ অফিসের জন্য প্রটোকল দেয়ার দরকার নেই। অনুগ্রহ করে আমি এটা মনে করিয়ে দিচ্ছি।
অশুভ শক্তি, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। শেখ হাসিনাই এই মুহূর্তে আমাদের অস্তিত্বের কাণ্ডারি। আগুন সন্ত্রাসের ধ্বংসলীলা আবার শুরু হয়েছে। এই নারকীয় তাণ্ডবের বিরুদ্ধে মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ার আহ্বান জানান তিনি।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনসহ ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।