বিজেপির বিড়লা হলেন ভারতের স্পিকার

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ভারতের অষ্টাদশ লোকসভার প্রত্যাশিতভাবেই স্পিকার হয়েছেন রাজস্থানের কোটা-বুন্দি কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত বিজেপি প্রার্থী ওম বিড়লা। সর্বশেষ লোকসভার স্পিকারও তিনিই ছিলেন, যদিও ২০১৯ সালে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন সর্বসম্মতভাবে। এবার জিতলেন ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে। গতকাল বুধবার বিরোধী প্রার্থী সুরেশকে কণ্ঠভোটে হারিয়েছেন তিনি।
প্রথা অনুযায়ী স্পিকার নির্বাচন এবার সর্বসম্মতভাবে হয়নি। ডেপুটি স্পিকারের পদ বিরোধীদের দেয়া হবে- সরকার সেই আশ্বাস না দেয়ায় বিরোধীরা এই নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছিলেন। কিন্তু লক্ষণীয়, কণ্ঠভোটের পর বিরোধীরা ‘ডিভিশন’ দাবি করেননি। অর্থাৎ কোন পক্ষে কতজনের সমর্থন রয়েছে, তা জানতে কাগজে ভোট দেয়ার দাবি জানাননি। ফলে কণ্ঠভোটেই ওম বিড়লাকে জয়ী ঘোষণা করেন প্রোটেম (অস্থায়ী) স্পিকার ভর্তৃহরি মহতাব।
এরপরই দেখা যায় সেই দৃশ্য, ভারতীয় রাজনীতির রেষারেষিতে যা ক্রমে বিরল হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও সংসদীয়মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর সঙ্গে বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীও চলে যান ওম বিড়লার আসনের কাছে। সবাই সদ্য নির্বাচিত স্পিকারকে অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে করমর্দন করেন এবারের লোকসভায় বিরোধী নেতার দায়িত্ব নেয়া রাহুল গান্ধী। তারপর প্রথা অনুযায়ী তিনজনে বিড়লাকে পৌঁছে দেন স্পিকারের আসনে। যদিও এই রাজনৈতিক শিষ্টাচার আগের দিন মঙ্গলবার কিন্তু লোকসভায় দেখা যায়নি। শপথ গ্রহণের পর সংসদীয় রীতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী মোদি বিরোধী বেঞ্চে গিয়ে তাদের অভিনন্দন জানাননি।
মোদি ও রাহুলের হাত মেলানোর ছবি এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে। অনেক তিক্ততার মধ্য দিয়ে এই দুই নেতা সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে নিজ নিজ দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। প্রচারণার সময় একে অপরের সমালোচনায় সোচ্চার ছিলেন বিজেপি ও কংগ্রেসের দুই জনপ্রিয় নেতা।
মঙ্গলবার রাতেই কংগ্রেস ঘোষণা করে, রাহুল গান্ধী হবেন বিরোধী নেতা। সেই দায়িত্ব রাহুলের পোশাকেও পরিবর্তন ঘটায়। ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা শুরুর সময় থেকে এতদিন ধরে যিনি সাদা টি-শার্ট ও ট্রাউজার্স ছাড়া অন্য কোনো পোশাক পরেননি, বিরোধী নেতার দায়িত্ব নিয়ে তিনি সাদা পাঞ্জাবি ও পাজামা পরে লোকসভায় ঢোকেন।
লোকসভায় রাহুল স্পিকারকে অভিনন্দিত করে নিরপেক্ষতা ও ইতিকর্তব্য মনে করিয়ে দেন। রাহুলের পাশাপাশি অন্য বিরোধী নেতারাও সবাই একে একে তাকে বুঝিয়ে দেন, প্রথম ইনিংসে তিনি যেভাবে সভা পরিচালনা করেছিলেন, তা বিরোধীদের হতাশ করেছিল। সভার মর্যাদাহানি হয়েছিল। গণতন্ত্রের প্রতি সুবিচার হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী মোদি স্পিকারকে অভিনন্দন জানিয়ে সভার পরিচালক হিসেবে তার সাফল্যের কাহিনী বর্ণনা করেন। কীভাবে কোভিডকালে তিনি সভা চালু রেখেছিলেন, অন্য সময়ের তুলনায় কীভাবে গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি বিল পাস করিয়েছেন, সেসব কথা প্রধানমন্ত্রী তাকে মনে করিয়ে দেন।
মোদির সেসব কথার রাশ টেনে রাহুল বলেন, এই সভা দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। কত দক্ষতার সঙ্গে সভা পরিচালিত হচ্ছে, সেটা বড় কথা নয়। আসল কথা দেশবাসীকে স্বরক্ষেপণ করতে দেয়া হচ্ছে কিনা। বিরোধী কণ্ঠ রোধ করে সভা চালানো দক্ষতার পরিচয় নয়।
কংগ্রেস নেতা বলেন, এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশবাসী বুঝিয়েছে, তারা চায় বিরোধীরা দক্ষতার সঙ্গে সংসদে সংবিধান রক্ষা করুক। এ সভায় যেন জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়, আমরা সেটা যেন করতে পারি, সে জন্য আপনার সঙ্গে সহযোগিতায় আমরা প্রস্তুত। শুধু চাই, আমাদের বলতে দেয়ার মধ্য দিয়ে আপনি সংবিধান রক্ষা করুন।
রাহুলের বেঁধে দেয়া এই সুরেই একে একে কথা বলেন সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, তৃণমূল কংগ্রেসের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিএমকের টি আর বালু, এনসিপির (শরদ পাওয়ার) সুপ্রিয়া সুলে ও শিবসেনার (উদ্ধব) নেতারা।
অখিলেশ স্পিকারকে মনে করিয়ে দেন, নিরপেক্ষতা এই পদের সবচেয়ে বড় গৌরব। নিরপেক্ষ থেকে নিজের দক্ষতায় সরকার চালানো স্পিকারের কাজ। তিনি যেন অন্য কারো (প্রধানমন্ত্রী) ইশারায় চালিত না হন। বিরোধীরা যেন বৈষম্যের শিকার না হন।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এ দেশের গণতন্ত্রের ভিত। দেশের একতা এর ওপরেই নির্ভরশীল। তা যেন রক্ষিত হয়। সেটা নিশ্চিত করা স্পিকারের দায়িত্ব। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সভার কর্মক্ষমতার বড়াই করেছেন। অথচ তা করতে গিয়ে একদিনে ১৫০ সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বিনা আলোচনায় পাস করানো হয়েছিল একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ বিল। এটা কাম্য হতে পারে না।