ডরিনের আকুতি
বাবাকে শেষবার ছুঁয়ে দেখতে চাই

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের পরিবারে শোকের মাতম চলছে। তার বাড়িজুড়ে এখনো হাজারো মানুষের ভিড়। নেতাকর্মীদের মধ্যে কারা কেন খুন করল, লাশ কোথায়- এমন অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এর মধ্যে সকালে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরেন আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। তাকে সান্তনা জানাতে যাওয়া লোকজন কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বাবার লাশের অপক্ষোয় থাকা ডরিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ভূষণ রোডস্থ বাড়িতে সাংবাদিকদের বলেন, আমি বাবাকে শেষবারের মতন ছুঁয়ে দেখতে চাই। কতটা কষ্ট পেয়েছে, বাবাকে দেখে একটু বুঝতে চাই। একজন মানুষকে কী করে এমনভাবে মারতে পারে! এভাবে বাবাকে কেটে কেটে টুকরো করা হয়েছে, জীবনেও ভুলতে পারব না।’
ডরিন বলেন, ওপরে যদি আল্লাহ থাকে, তাহলে আমার বিশ্বাস তিনি বিচার করবেন। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য অনেক দিন ধরেই তারা পরিকল্পনা করেছেন। তারা সাজিয়ে-গুছিয়ে নিয়েই এই ধরনের বড় একটা অপরাধ ঘটিয়েছেন। সুষ্ঠু তদন্ত করেন, কারা আছেন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যাদের নাম এসেছে, তাদের বিদেশ থেকে নিয়ে আসার কথা জানিয়ে ডরিন বলেন, কান টানলে মাথা আসবে। যদি তাদের ওপরেও কেউ থেকে থাকেন, তার নামটিও খতিয়ে দেখেন।
কান্না জড়িতকণ্ঠে ডরিন বলেন, বাবা কতটা কষ্ট পেয়েছে তাকে দেখে একটু বুঝতে চাই। একজন মানুষ মানুষকে এমনভাবে কী করে মারতে পারে? ইসলামে আছে, মৃতদেহকে আস্তে আস্তে গোসল করাও, আস্তে আস্তে কাপড় পরাও, যেন ব্যথা না পায়। আর এভাবে আমার বাবাকে কেটে কেটে টুকরো করা হয়েছে, জীবনেও ভুলতে পারব না।’
মুমতারিন ফেরদৌস বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে ফোনে বলেছেন ‘ধৈর্য ধরতে হবে। ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে। ধৈর্য ধর, আমি সঙ্গে আছি’। তিনি আমাকে বলেছেন, ‘তুমি তোমার বাবার সন্ধান চেয়েছিলে, স্পেশাল ফোর্স পাঠিয়ে আমি তোমার বাবাকে খুঁজে দিয়েছি। আমি আর কী করব বল? আমি খুঁজে দিয়েছি, পুলিশ তদন্ত করছে, প্রতিবেদন এলে পদক্ষেপ নেব।’ ডরিন বলেন, আমি ভারতের ভিসা পেয়েছি। তবে ডিবি অফিস থেকে আমাকে বলেছে, যখন প্রয়োজন হবে তখন ভারতে যেতে হবে।
গতকাল সকালে এমপি আনোয়ারুল আজিম আনানের বাড়ির সামনে আসেন তার ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। তাকে ঘিরে রাখেন শত শত নেতাকর্মী। প্রিয় নেতার মরদেহের খোঁজ পাওয়া গেল কিনা তার খবর জানতে চান তারা। তাকে সান্ত¡না দেন নেতাকর্মীরা।
কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী বলেন, কলকাতায় মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত হওয়ার দুই দিন পার হলেও এখনো মরদেহ উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ নিয়ে আমাদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। শেষবারের মতো প্রিয় নেতাকে দেখতে চাই। তার লাশের এক টুকরো মাংস হলেও সেটাকে নেতা মনে করে জানাজা করতে চাই। তার হত্যার সঙ্গে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার চিকিৎসার জন্য দর্শনার গেদে বন্দর দিয়ে ভারতের কলকাতায় যান। ২২ মে তার মৃত্যুর বিষয় জানাজানি হয়। এ ঘটনায় ঢাকায় তিনজন ও কলকাতায় একজন গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে আছে।