×

মেলা

কাননবালা দেবী

ছিলেন মাটির কাছাকাছি

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ছিলেন মাটির কাছাকাছি

কাননবালা দেবী

   

সুচিত্রা সেনের চলচ্চিত্র জীবন কাহিনির নীলনকশা যেন কাননবালা এঁকেছিলেন অনেক আগেই। দুজনের খ্যাতি, ক্যারিয়ার গ্রাফ অনেকটাই এক। কাননের সংগ্রাম যদিও ছিল অনেক বেশি শক্ত। আবার সুচিত্রার ভাঙা সংসারে চিরভরসার জননী ছিলেন সুচিত্রার কাননদি। সুচিত্রা অন্তরালে সরে যাওয়ার আদেশও অনেকটাই কাননের থেকে পান। ১৯৯২ সালের প্রথম দিকে অসুস্থ হয়ে কিংবদন্তি কানন দেবী যখন হাসপাতালে তখন অন্তরালের সুচিত্রা সেন কানন দেবীকে দেখতে গিয়েছিলেন। এতটাই হৃদ্যতা ছিল দুজনের।

কিন্তু তফাৎ দুজনের আন্তরিকতায়। সুচিত্রা স্টারডম ছেড়ে কোনোদিনও বেরোননি। তৎকালীন ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই সুচিত্রা সান্নিধ্য পাননি। ইন্ডাস্ট্রির ম্যাডাম তিনি। তার আগে কেউ ম্যাডাম ছিলেন না। সুচিত্রা ‘দেবী’তে রূপান্তরিত হতে চাননি। যদিও ‘দেবী চৌধুরানী’ তিনিই। আজীবন প্রণয়িণী রিনা ব্রাউন। তার তেজ দম্ভ রহস্যই তার দর্প কখনো আবার খুব আপনভোলা মুডের অপর নাম ম্যাডাম সেন। প্রথম গল্প থেকেই বুঝতে পারবেন কানন দেবী মহাতারকা হয়েও স্টারডমের বালাই করতেন না। এখানেই কাননের মহত্ব। তিনি একবার স্টুডিও থেকে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কে আনতে গেছিলেন।

তো তখনো শুট চলছে সাবিত্রীর। তো ওই ভদ্রলোককে একটা সোফায় মেকআপ রুমে বসতে দেয়া হয়েছে। ওপরে পাখা ঘুরছে। ভদ্রলোক অপেক্ষা করছেন সাবিত্রী দেবীর জন্য। হঠাৎ এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা ঘরে ঢুকে এলেন। খুব গরমকাল তখন। ঘরে ঢুকে ভদ্রমহিলা বললেন সাবিত্রীর বোনঝির স্বামীকে, ‘বাবা, এই পাখার তলায় একটু বসব? খুব গরম পড়েছে।’ ভদ্রলোক বলেছেন, ‘হ্যাঁ বসুন।’ ভদ্রমহিলা সোফায় বসা দূর, বসে পড়লেন সটান মাটিতে। বাড়ির মা মাসি ঠাকুমারা যেমন মাটিতে বসেই আরাম করেন সেরকমই বসে পড়েছেন। কিছুক্ষণ বাদে ঘরে প্রবেশ শুটিং সেরে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের। বোনঝির স্বামী বললেন ‘চল তোমায় নিতে এসেছি।’ সাবিত্রী সে কথা শুনবেন কি, ওই মাটিতে বসা ভদ্রমহিলাকে দেখে হতবাক!

সাবিত্রী বলে উঠলেন ‘একি কাননদি, তুমি মাটিতে বসে! ওঠ ওঠ।’ ভদ্রলোক তো ওই শুনে দিশাহারা। কি ভুল করলেন! চোখের সামনে মহাতারকা কানন দেবী। চিনতেই পারেননি। তাকে পায়ের কাছে বসতে দিয়েছেন। আসলে রুপালি পর্দার কাননবালা তখন অভিনয় ছেড়ে দিয়েছেন। চেহারাও অনেক পরিবর্তিত। কিন্তু কানন দেবী তখন প্রযোজিকা। দুজনেই লজ্জায় দিশাহারা। কানন দেবী বললেন ‘থাম তোরা বাছা! গরম লাগছিল তাই মাটিতে পাখার তলায় ঠাণ্ডায় বসেছি। মেলা ঝামেলা করিস নে তোরা। বল শুটিং কেমন করলি।’

তারপর হাসি আড্ডা গল্প। মধুরেণ সমাপয়েৎ। এটাই হলো কানন দেবীর আন্তরিকতা, অচেনা মানুষকেও আপন করে নেয়া। স্টারডম ঝেরে ফেলে বাস্তবের মাসিমা পিসিমা হয়ে ওঠা। ভাবুন কাননবালার মতো সুপারস্টার মাটিতে এসে বসছেন। যেটা স্বপ্নাতীত। যে আন্তরিকতা আজকালকার কোনো সিরিয়ালের অভিনেত্রীরাও দেখান না। কেউ পারবে এটা করতে কোনো জগতে? নাহ। কিন্তু কানন যে ‘দেবী’। হয়তো ওই মাটি ধরিত্রী-মাতাকে সম্মান দিয়েছিলেন বলেই কানন, দেবী হতে পেরেছিলেন।

যার কাছে সুচিত্রা-সাবিত্রী কিংবা সুপ্রিয়া-উত্তম কুমার সবাই আশ্রয় পেতেন ভরসা, নির্ভরতা পেতেন। কাননও তো জনককন্যা সীতা, যিনি মাটির সন্তান। বহু লালসা-কামনা, শোষণ-নিপীড়ন থেকে উত্তীর্ণ মহাতারকা কাননবালা থেকে কানন দেবীতে যার উত্তরণ। তবু সেই ধরিত্রীমাতাই যেন তার আশ্রয়স্থল। শূন্য থেকে শুরু করে শত কোটিতে পৌঁছোন তবু মাটিতে পা রেখে চলতে ভুলে যাননি। কানন এর আন্তরিকতার আরেকটা গল্প বলি। শ্রীমতী পিকচার্স, কাননের প্রোডাকশন হাউসে হঠাৎ একদিন এক ভদ্রলোক হাজির। এসেই আবদার, ‘টাটকা চুনো মাছের ঝোল খাব।’ অনেক খোঁজের পরে মাছ মিলল। আর তা কাটতে বসলেন কানন দেবী। মাছ কেটে, রেঁধেবেড়ে ভদ্রলোককে তৃপ্তি করে খাওয়ালেন কানন দেবী।

ম্যানিকিওর, পেডিকিওর দরকার পড়েনি, অথচ কানন বাংলা ছবির প্রথম আইকনিক গø্যামার গার্ল। যে পিতৃপরিচয়হীন বালিকা কাননকে একদিন সমাজ দুমুঠো অন্ন খেতে দেয়নি সেই বালিকাই বড় হয়ে শীর্ষস্থানীয় রূপে বহু দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন অন্নপূর্ণার মতো। সেবার কাননের সূর্যনগরের পাড়ায় সরস্বতী পূজার খানাপিনা। পাড়ার লোকের ভোজের মাঝে হঠাৎ একদল বেপাড়ার ভিখিরি এসে হাজির। পাড়ার পূজার হর্তাকর্তারা তো তাদের তাড়িয়ে দিতে এই মারে কি সেই মারে! রুখে দাঁড়ালেন পূজার চিফ গেস্ট কানন দেবী। বললেন ‘আমি বেঁচে থাকতে কোনো লোক যেন অভুক্ত না থাকে। ওদের বসিয়ে খাবার দেয়ার ব্যবস্থা কর।

খাবার তো বাড়তি আছেই। দরকার হলে ওদের কিছু বেঁধে দিয়েও দাও। ওদের খাওয়া শেষ হলেই আমি খাব। ততক্ষণ আমার উপবাস চলবে। এত বড় কথা কানন দেবী বলার পর আর কার বুকের কত পাটা যে ভিখিরিদের অভুক্ত রাখে! সব দরিদ্র-ভোজন শেষে নিজে খেতে বসলেন কানন দেবী। সত্যি তিনি দেবী। দেবী কেউ উপাধি নিয়ে হন, কেউ সম্পত্তির জোরে হন, কেউ খ্যাতির জোরে হন। কাননের এই সবকটি ছিল। কিন্তু কানন দেবীতে উত্তীর্ণ হন আন্তরিকতা, স্নেহ আর মমত্ববোধের জোরে। কাননকে বাংলাছবির ফার্স্ট গø্যামার গার্ল বলা হতো, কিন্তু গø্যামারেই ভেসে যাননি তিনি। নিজেকে একজন সেলফ মেড উয়োম্যান হিসেবে গড়ে তুলেছেন, সমাজের অনন্যা হয়েছেন। এমন নারী সবার চোখে গডমাদারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App