আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়াতে হবে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২০, ০৭:২৩ পিএম
গ্যাং কালচার সামাজিক ও জাতীয় উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে কিশোর-তরুণরা বিভিন্ন গ্যাংয়ের মাধ্যমে অপরাধ করছে। একেক গ্যাং একেক এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে আছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কিশোর সন্ত্রাস নতুন একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে আবিভর্‚ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই কালচার থেকে উত্তরণে প্রশাসনের জোরালো ভ‚মিকা দরকার। গত ৩ আগস্ট সড়কে মারামারির ঘটনায় ‘টিকটক অপু’ নামে এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। মারধরের ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হলেও তার বিরুদ্ধে কিশোর গ্যাং তৈরির প্রচেষ্টা খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। অপুর মতো অসংখ্য কিশোর অপরাধী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাড়া-মহল্লায় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরোনোর আগেই এসব কিশোর বেপরোয়া হয়ে উঠছে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ঢাকার উত্তরা, ধানমন্ডি, তেজগাঁও, কাফরুল, মোহাম্মদপুর, তুরাগ, নিউমার্কেট ও গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকায় সক্রিয় গ্রুপগুলো। চট্টগ্রামেও সক্রিয়তার খবর রয়েছে। তারা দলবেঁধে মাদক সেবন করার পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় নারীদের উত্ত্যক্ত, কট‚ক্তি, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাইক ও কার রেসিং তাদের এক প্রকার ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের তথ্য মতে, গত ১০ বছরে রাজধানীর আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই কিশোর অপরাধীদের হাতে ঘটেছে। এটি খুবই ভয়ঙ্কর তথ্য। চট্টগ্রাম মহানগরীতেও অর্ধশত কিশোর গ্যাং দখলবাজি ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে বলে খবর রয়েছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে কিংবা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনুচর হিসেবে কাজ করছে অনেক কিশোর। প্রশ্ন হচ্ছে, যে বয়সে নিজেকে গড়ে তোলা ও পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার কথা, সে বয়সে ছেলেমেয়েদের এমন অপরাধে জড়ানোর কারণ কী? বিশেষজ্ঞদের মতে, শিথিল পারিবারিক বন্ধন, মা-বাবার সন্তানকে সময় না দেয়া, সামাজিক অবক্ষয়, স্বল্প বয়সে স্মার্টফোনসহ উন্নত প্রযুক্তি উপকরণের নাগাল পাওয়া, সঙ্গদোষ ইত্যাদি কারণে কিশোরদের অপরাধে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এছাড়া কিশোরদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা দেয়া, যৌক্তিকতা বিচার না করেই সব আবদার পূরণ করা এবং সন্তান কী করছে সে বিষয় পর্যবেক্ষণ না করায় অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে বলে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কিশোর অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর পদক্ষেপে যেতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের। কিশোররা যেন অপরাধে জড়াতে না পারে এবং কেউ তাদের অসৎ কাজে ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। এ জন্য সবার আগে পরিবার তথা মা-বাবাকে এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানরা কী করে, কার সঙ্গে সময় কাটায়- এসব খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানদের অযৌক্তিক আবদার পূরণ করার আগে ভাবতে হবে। স্কুল কারিকুলামের বাইরে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আকৃষ্ট করা এবং যুক্ত করার সুযোগ বাড়াতে হবে। কিশোর অপরাধ রুখতে ছিন্নমূল শিশু-কিশোরদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। যারা ইতোমধ্যে অপরাধ চক্রে জড়িয়ে গেছে, তাদের জন্য উপযুক্ত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।