পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত
চোখের দৃষ্টিভঙ্গি নকলকারী এআই চোখ ক্যামেরা
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫০ পিএম

চোখের দৃষ্টিভঙ্গি নকলকারী এআই চোখ ক্যামেরা
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো এমন একটি চোখ আকৃতির ক্যামেরা তৈরি করা, যা মানুষের চোখের দৃষ্টিভঙ্গি মনিটর ও নকল করতে সক্ষম। এটি চোখের মুভমেন্ট সঠিকভাবে ট্র্যাক করে রেকর্ড করবে, ফলে ব্যবহারকারী যে দৃশ্য দেখছেন তা নিখুঁতভাবে ধারণ করা সম্ভব হবে। এআই ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্যামেরাটি চোখের গতিবিধি বুঝে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দৃশ্য রেকর্ড করবে, যা তাৎক্ষণিক বা পরবর্তীতে দেখা যাবে।
শক্তি সঞ্চয় ও কার্যকারিতা:
এই ডিভাইসটি তাপমাত্রা-ভিত্তিক শক্তি উৎপাদন (থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর) ব্যবহার করবে, যা শরীরের তাপমাত্রা থেকে শক্তি সংগ্রহ করে ব্যাটারি চার্জের প্রয়োজনীয়তা দূর করবে। এটি অন্যান্য পরিধানযোগ্য ক্যামেরার তুলনায় কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হবে।
উদ্ভাবন প্রক্রিয়া
প্রথমে চোখের মুভমেন্ট সঠিকভাবে রেকর্ড করতে AI প্রযুক্তি এবং চোখ ট্র্যাকিং সেন্সর একত্রিত করা হবে। এরপর, শক্তি সঞ্চয়ের জন্য থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর ব্যবহার করা হবে, যা দীর্ঘ সময় ধরে ডিভাইসটি চালু রাখতে সহায়ক হবে। রেকর্ড করা ভিডিও বা ছবি ক্লাউডে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপলোড হবে, ফলে ব্যবহারকারীকে আলাদাভাবে কিছু করতে হবে না।
প্রধান উদ্দেশ্য
এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো:
• চোখের দৃষ্টিভঙ্গি সঠিকভাবে নকল করা
• ব্যক্তিগত ভিডিও রেকর্ডিং, ডকুমেন্টেশন এবং লাইভ স্ট্রিমিং সহজ করা
• শক্তি সঞ্চয়ের মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার নিশ্চিত করা
• ব্যবহারকারীর জন্য সহজ এবং আরামদায়ক অভিজ্ঞতা প্রদান
• বৈশিষ্ট্য এবং প্রযুক্তি
১. চোখের মুভমেন্ট ট্র্যাকিং:
• ইনফ্রারেড (IR) সেন্সর ব্যবহার করে চোখের পুতলি ও দৃষ্টির গতিবিধি সঠিকভাবে ট্র্যাক করা হবে।
• AI অ্যালগরিদম চোখের মুভমেন্ট বিশ্লেষণ করে ভিডিও রেকর্ড করবে।
২. শক্তি সঞ্চয়:
• থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর (TEG) শরীরের তাপমাত্রা থেকে শক্তি সংগ্রহ করবে।
• প্রয়োজন অনুসারে পিভি প্যানেল যুক্ত করা যেতে পারে।
৩. ডেটা সঞ্চয়ন ও আপলোডিং:
• লো-কস্ট মেমরি কার্ড অথবা ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহৃত হবে।
• ওয়াইফাই বা 5G কানেকটিভিটির মাধ্যমে দ্রুত আপলোড নিশ্চিত করা হবে।
৪. ডিজাইন ও ব্যবহারকারীর আরাম:
• চোখের আকৃতির হালকা ও আরামদায়ক ডিজাইন
• CAD সফটওয়্যার ও থ্রি-ডি প্রিন্টিং ব্যবহার করে প্রোটোটাইপ তৈরি
সম্ভাব্য ব্যবহারকারী এবং বাজার
• ইউটিউবার ও ব্লগার: যারা ইনস্ট্যান্ট কন্টেন্ট তৈরি করতে চান।
• স্পোর্টস ও অ্যাডভেঞ্চার প্রেমী: যাদের ভিউ-পয়েন্ট থেকে ভিডিও রেকর্ডের প্রয়োজন।
• লাইভ স্ট্রিমার ও গেমার: লাইভ স্ট্রিমিং সহজ করার জন্য।
• নিরাপত্তা ও মনিটরিং: ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং পর্যবেক্ষণ কাজে ব্যবহার করা যাবে।
বাজারজাতকরণ এবং সেলস কৌশল
• প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নির্ধারণ এবং প্রাথমিক লঞ্চ প্রাইস কম রাখা।
• অফলাইন ও অনলাইন মার্কেটিং: সোশ্যাল মিডিয়া, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এবং ইভেন্ট প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রচারণা।
• অনলাইন মার্কেটপ্লেস বিক্রি: Amazon, eBay, Flipkart, এবং AliExpress-এ উপলব্ধ করা।
ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও সম্ভাবনা
• আরো উন্নত AI অ্যালগরিদম যুক্ত করা
• বিভিন্ন আকার ও ডিজাইনে ডিভাইসটি তৈরি
• বর্ধিত বাস্তবতা (AR) এবং ভার্চুয়াল বাস্তবতা (VR) সমন্বয় করা
• অধিক শক্তি সঞ্চয়ী এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার
এই চোখ আকৃতির ক্যামেরাটি আধুনিক AI প্রযুক্তি এবং শক্তি সঞ্চয়ী বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে তৈরি, যা ব্যক্তিগত ভিডিও রেকর্ডিং, লাইভ স্ট্রিমিং এবং নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি উদ্ভাবনী এবং কার্যকর ডিভাইস হিসাবে ব্যবহৃত হবে।
সম্পূর্ণরূপে চোখের দৃষ্টিভঙ্গি নকলকারী এবং তাপমাত্রা-ভিত্তিক শক্তি সঞ্চয়কারী AI চোখ ক্যামেরা এখনো বাণিজ্যিকভাবে উপলব্ধ নয়, তবে এর কিছু উপাদান এবং প্রযুক্তি পৃথকভাবে ইতোমধ্যে বিদ্যমান এবং গবেষণার অধীনে রয়েছে। যেমন:
১. চোখের মুভমেন্ট ট্র্যাকিং:
• টোবি (Tobii) এবং পিউপিল ল্যাবস (Pupil Labs) ইতোমধ্যেই চোখের মুভমেন্ট ট্র্যাকিং প্রযুক্তি তৈরি করেছে, যা মূলত গবেষণা এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়।
২. চশমার মতো ক্যামেরা:
• রে-ব্যান স্টোরিজ (Ray-Ban Stories) এবং স্ন্যাপচ্যাট স্পেক্টাকলস (Snapchat Spectacles) সানগ্লাস আকৃতির ক্যামেরা বাজারে নিয়ে এসেছে, যা ছবি এবং ভিডিও রেকর্ড করতে সক্ষম। তবে এগুলো AI দ্বারা চোখের দৃষ্টিভঙ্গি ট্র্যাক করতে পারে না।
৩. থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর (TEG):
• তাপমাত্রা-ভিত্তিক শক্তি উৎপাদনের প্রযুক্তি বিদ্যমান এবং কিছু পরিধানযোগ্য ডিভাইসে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে এটি বাণিজ্যিকভাবে সানগ্লাস ক্যামেরায় ব্যবহৃত হয়নি এখনো।
৪ AI ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নকল করা:
• কিছু গবেষণামূলক প্রকল্প এবং প্রোটোটাইপ AI ব্যবহার করে মানুষের চোখের দৃষ্টিভঙ্গি নকল করার চেষ্টা করছে, তবে বাণিজ্যিক পণ্যে এটি এখনও প্রয়োগ করা হয়নি।
সংক্ষেপে, এই প্রযুক্তির বিভিন্ন উপাদান আলাদাভাবে বিদ্যমান এবং গবেষণার অধীনে রয়েছে, কিন্তু পুরোপুরি সংযুক্ত একটি বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে এখনও বাজারে আসেনি। তবে ভবিষ্যতে এটি সম্ভব হতে পারে, কারণ প্রযুক্তি দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।
যখনই বাইরে বের হই, কিছু না কিছু দেখার মতো অবশ্যই থাকে। ইদানীং সেই মুহূর্তগুলো ক্যামেরায় ধরে রাখি—কখনো ছবি তুলি, কখনো ভিডিও করি। তবে মাঝেমধ্যে মনে হয়, চোখ দিয়ে যেভাবে জগতটাকে দেখি, ঠিক সেভাবেই যদি ছবিতে দেখা যেত! এই ভাবনা থেকেই মূলত আইডিয়াটার জন্ম। যদি বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর নতুন প্রজন্মের কেউ আমার চিন্তা এবং তথ্যগুলো ব্যবহার করে নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে পারে, তবে জেনে ভালো লাগবে যে আমার এই ভাবনাটা সার্থক হয়েছিল।
রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন, 📧 Rahman.Mridha@gmail.com