সিলেটে ভয়াবহ লোডশেডিং ফুঁসে উঠছে মানুষ

খালেদ আহমদ, সিলেট থেকে
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি : সংগৃহীত
তীব্র গরমের সঙ্গে ঘনঘন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিলেটের জনজীবন। দাবদাহের কারণে এমনিতেই হাঁসফাঁস অবস্থা এর মধ্যে দিনের মতো রাতেও লোডশেডিং দুর্ভোগের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসাবাণিজ্যে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বন্ধ হতে চলেছে ছোট-বড় কলকারাখানা।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হওয়া ও মানুষের কাজকর্ম স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড গরমে লোডশেডিং শুরু হওয়ায় বিশেষ করে প্রবীণ ও শিশুদের দুর্ভোগ চরমে। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে জনমনে বাড়ছে ক্ষোভ। আল্টিমেটাম দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নতির দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিসিক শিল্পনগরী গোটাটিকরের শিল্প মালিক সমিতির নেতারা। তবুও সহসাই বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি নিয়ে কোনো সুখবর দিতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। উল্টো তাপমাত্রা বাড়লে লোডশেডিং বাড়ার শঙ্কার কথা জানাচ্ছেন তারা। একমাত্র বৃষ্টিপাত বাড়লে তাপমাত্রা কমবে এতে কমবে বিদ্যুতের চাহিদা। সেদিকেই তাকিয়ে আছে জনসাধারণ। এদিকে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসাবাণিজ্যে ধস নামায় গত সপ্তাহে রাজপথে নামার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলা শাখা, সিলেট মহানগর ও জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের নেতারা এ আল্টিমেটাম দেন। তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলা শাখার মহাসচিব ও সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন, যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল হাদী পাবেল, সাংগঠনিক সচিব নিয়াজ মো. আজিজুল করিমসহ নেতারা বিবৃতিতে বলেন, সিলেটে অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন। আধা ঘণ্টা পরপর লোডশেডিংয়ের কারণে প্রভাব পড়ছে ব্যবসাবাণিজ্যে। আমাদের ব্যবসায় মূল আকর্ষণ হলো ক্রেতা। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে ক্রেতাও আসে না মার্কেটে। এতে করে আমাদের ব্যবসাতেও লোকসান হচ্ছে। এমতাবস্থায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ব্যবসায়ীদের। তারা বলেন, সিলেট বিভাগে ১৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও পুরো বিভাগের ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে মারাত্মক বৈষম্যের সম্মুখীন হচ্ছে সিলেটবাসী। সিলেটবাসীর প্রতি এরকম বৈষম্য বন্ধ করতে হবে। সিলেটে সর্বনি¤œ বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে হবে। অবিলম্বে সিলেটে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হলে ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে করে নেতারা বলেন, প্রয়োজনে বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করা হবে। এতে করে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা এড়াতে অবিলম্বে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে হবে।
এদিকে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে বিপাকে পড়েছেন বিসিক শিল্পনগরীর উদ্যোক্তারা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদনে নেমেছে ধস। এভাবে
চলতে থাকলে উৎপাদন বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতির স্বাভাবিক করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান তারা। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সিলেট বিভাগে পিডিবির বিদ্যুৎ চাহিদা ছিল ২১৭ মেগাওয়াট। বরাদ্দ দেয়া হয় ১৬০ মেগাওয়াট। ৫৭ মেগাওয়াট ঘাটতি থাকায় বিভাগে ২৭ শতাংশ লোডশেডিং করতে হয়েছে। এছাড়া সিলেট জেলায় ১৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ৯০ মেগাওয়াট। ৪১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতির জন্য জেলায় ২৯ শতাংশ লোডশেডিং করতে হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সিলেটের প্রধান প্রকৌশল আব্দুল কাদির বলেন, লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। জাতীয় গ্রিড থেকে লোডশেডিং ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয় বিধায় আমাদের কিছু করার নেই। গত মঙ্গলবার বিদ্যুৎ বিভাগের একটি অভ্যন্তরীণ সভা হয়েছে। ওই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিলেটের বিদ্যুতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি কেন্দ্রকে জানানো হবে। এরপর করণীয় কেন্দ্র থেকেই ঠিক করা হবে।