উৎসবে মেতেছে প্যারিস

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০১৮, ১০:৩৬ এএম

১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে ফ্রান্স। এর ৮ বছর পর ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে আবারো ফাইনালে ওঠে তারা। সেবার তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ইতালি। কিন্তু ১৯৯৮ সালে নিজ দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ফাইনালে শক্তিশালী ব্রাজিলকে হারাতে পারলেও ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে ইতালির সঙ্গে পেরে ওঠেনি জিনেদিন জিদানরা। জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ওই বিশ্বকাপের ফাইনালে জিয়ানলুইজি বুফনদের কাছে হেরে যাওয়ায় শিরোপা জিততে না পারার হতাশা নিয়েই দেশে ফিরতে হয় ফ্রান্সের ফুটবলারদের। জিদানদের সঙ্গে সেদিন কেঁদেছিল দেশটির সমর্থকরাও। এরপর ১২ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আবারো বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ফ্রান্স।
গত রবিবার রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল জিদানের উত্তরসূরিরা। এবার আর হতাশ হতে হয়নি ফ্রান্স সমর্থকদের। একতরফা আধিপত্য দেখিয়ে ম্যাচটি জিতে নিয়েছে গ্রিজম্যানরা। সে সঙ্গে নিশ্চিত হয়েছে তাদের দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয়। লুজনিয়াকি স্টেডিয়ামে এ দিন গ্রিজম্যানদের শিরোপা জয়ের আনন্দটা কেবল মস্কোতেই বন্দি থাকেনি; সে আনন্দ ছড়িয়ে গেছে সুদূর ফ্রান্স পর্যন্ত। ফ্রান্সে যেন এখন বইছে আনন্দের জোয়ার।
ক্রোয়েশিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচটি দেখতে এ দিন লুজনিয়াকি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন এন্তোনিও মারিয়াঞ্জো নামের এক ফরাসি সমর্থক। প্রিয় দলের শিরোপা জয় দেখে হোটেলে ফেরার পথে তিনি জানান, আমরা জানতাম ওরা পারবে। ওরা আমাদের নিরাশ করেনি। গ্যালারিতে বসে ওদের জয় দেখব বলেই রাশিয়ায় ছুটে এসেছিলাম এবং শিরোপা জয়ের তৃপ্তি নিয়েই এখন দেশে ফিরতে পারব।
তবে আনন্দ উদযাপনে পিছিয়ে নেই পগবা, এমবাপ্পেদের খেলা দেখতে রাশিয়ায় আসতে না পারা ফ্রান্স সমর্থকরাও। নিজ দেশ ফ্রান্সেই প্রিয় দলের শিরোপা জয়ের আনন্দ উদযাপন করেছেন তারা। রেফারি ফাইনাল ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গেই বুনো উল্লাসে মেতে ওঠে ফ্রান্সের জনগণ। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের আকাশ ছেয়ে যায় নানা রংয়ের আলোতে। এ দিন ফ্রান্সের জয় উদযাপনে প্যারিসের সব জনগণ যেন জড়ো হয়েছিল আইফেল টাওয়ারের সামনে। আইফেল টাওয়ারকে সাজানো হয় নীল ও লাল রংয়ে অনেকটা ফ্রান্সের জাতীয় পতাকার মতো করে। ফ্রান্সের জাতীয় পতাকা হাতে হাজার হাজার সমর্থক নেমে আসে রাজপথে। নেচে গেয়ে উদযাপন করে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ। রাস্তার পাশের বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থার পক্ষ থেকে স্থাপন করা স্ক্রিনে ভেসে ওঠে শিরোপাজয়ী ফ্রান্স ফুটবল দলের বীরদের ছবি। এ তালিকায় অধিনায়ক এন্তোনি গ্রিজম্যান থেকে শুরু করে ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে, মিডফিল্ডার পল পগবা, গোলরক্ষক হুগো লরিস কেউই বাদ যাননি।
শুধু প্যারিস নয়, কোচ দিদিয়ের দেশ্যামের শিষ্যদের শিরোপা জয়ের আনন্দে মেতে উঠেছিলেন ফ্রান্সের অন্যান্য শহরের জনগণও। যেন ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পরের মুহূর্তগুলো এখন আবারো ফিরে এসেছে ফ্রান্সে। নিশ্চিতভাবে ফরাসিদের এই আনন্দের রেশ থাকবে আরো বহুদিন। কেননা কঠিন পথ পারি দিয়ে বিশ্ব সেরার মুকুট জয় করেছে তাদের দল। এখন ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রিজম্যান, এমবাপ্পে, পগবা, হুগো লরিসদের বরণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ফরাসিরা।