প্রথম ফাইনালেই অজিদের বাজিমাত

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৩, ১২:২৭ পিএম

আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে গতকাল ভারতকে ২০৯ রানে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে প্রথমবার শিরোপার লড়াইয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া। ভারত এই নিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুই আসরে দুটি ফাইনাল খেললেও একবারও সফলতা পায়নি। শিরোপা ঘরে তোলার পথে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্রথম ইনিংসে ১৬৩ রান করা ট্রাভিস হেড ম্যাচসেরা খেলোয়াড় হয়েছেন।
ফাইনাল ম্যাচের চতুর্থ দিনে ভারতের সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেট হারিয়ে ১৬৪ রান। ম্যাচের শেষ দিনে শিরোপার জন্য ভারত দলের প্রয়োজন ছিল ২৮০ রান, আর অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ৭ উইকেট। তাই রোমাঞ্চকর একটি ম্যাচই আশা করছিলেন সবাই। তবে শেষ দিনে তেমন কিছুই হয়নি, ভারত নিজেদের ইনিংস কেবল এক সেশন টিকিয়ে রাখতে পারে। অন্যদিকে দাপুটে জয় ছিনিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় আসরে লাল বলের মুকুট মাথায় তোলে অস্ট্রেলিয়া।
২৮০ রানের তাড়ায় শেষ দিনের ব্যাটিংয়ে ভারত প্রথমেই হারায় দলের তারকা ব্যাটার বিরাট কোহলিকে। চতুর্থ দিনে টিকে থাকার আশা জাগালেও কোহলি শেষ দিনের শুরুতেই বোল্যান্ডের অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে দাঁড়ানো স্মিথের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। আগের দিনের অপরাজিত ৪৪ রানের সঙ্গে তিনি কেবল ৫ রান যোগ করতে সক্ষম হন। তার উইকেটের মধ্য দিয়ে ভাঙে ৮৬ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি।
একই ওভারে ডাক মেরে সাজঘরের পথ ধরেন রবীন্দ্র জাদেজা। তার উইকেটের মধ্য দিয়ে মাত্র ১৭৯ রানেই ৫ ব্যাটারকে হারায় ভারত দল। এর মধ্যেই শিরোপা জয়ের পথে চাপে পড়ে ভারত। আর শিরোপা থেকে মাত্র ৫ উইকেটের দূরত্বে থেকে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা জাগিয়ে তোলে প্যাট কামিন্সের দল। জাদেজা মাঠ ছাড়ার পর শিকর ভারতকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরার চেষ্টা চালান প্রথম ইনিংসে ৮৯ রান করা অজিঙ্কা রাহানে। তাকে ফেরাতে অজি বোলারদের অপেক্ষা করতে হয় ৫৭তম ওভার পর্যন্ত।
মিচেল স্টার্কের করা ওভারে রাহানে ডিফেন্স করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হয়ে আউট হন। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে ভারতের স্কোরবোর্ডে ৪৬ রান যোগ হয়। শারদুলও প্রথম ইনিংসে রাহানের সঙ্গে জুটি বেঁধে লড়াইটা জমিয়ে তুলেছিলেন। গতকালও তার কাছে বড় ইনিংসই আশা করছিল ভারতীয়রা। তবে সবার আশায় পানি ঢেলে রানের খাতা না খুলেই সাজঘরমুখী হন শারদুল ঠাকুর। এরপর ১ রানে বিদায় নেন উমেশ যাদব। ৬২তম ওভারে ২৩ রান করা শিকর ভারতকে হারানোর পর ভারতের ইনিংস আর বড় হয়নি। মোহাম্মদ শামি আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ব্যাট চালিয়ে ৮ বলে ১৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। আর শেষ ব্যাটার হিসেবে মোহাম্মদ সিরাজ ৬ বলে ১ রান করে আউট হন। এর মধ্য দিয়ে ২৮০ রানের পথে ৭০ রান করেই অল আউট হয় ভারত। এই নিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম দুই আসরের ফাইনালেই হারের তেতো স্বাদ পেল ভারত। প্রথম আসরে তাদের ৮ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নিউজিল্যান্ড।
সাদা পোশাকের শিরোপা জয়ের পর অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স বলেন, ‘আমরা টস হারলেও এটার সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিয়েছি। টস জিতলে আমরা অবশ্যই ভারতীয়দের ব্যাটিংয়ে পাঠাতাম। প্রথম দিকে একে একে উইকেট হারানোর পর ট্রাভিস হেড ও স্মিথ যেভাবে হাল ধরেছেন, তা আমাদের শ্বাসরুদ্ধকর শুরুর পর আরাম দিয়েছে।
কয়েক বছর আগে অ্যাশেজ দিয়ে শুরু করার পর পুরো ক্যাম্পেইনজুড়ে হেড দুর্দান্ত ছিলেন। সে শুধু বোলারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তার কারণে বোলরারা ভাবতে থাকে কীভাবে উইকেট না নিয়ে রান কম খরচ করা যায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রথম দিনে আমরা হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। সবশেষে এখন মনে হচ্ছে, আমরাই শীর্ষে আছি। সর্বসাকুল্যে হিসাব করলে আমরা সত্যিই ভালো খেলেছি। যদিও দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা আরো ভালো করতে পারতাম। আমরা ব্যাটিং আরো কিছুক্ষণ চালিয়ে গেলে হারার শঙ্কা কম থাকত। ভারত যথেষ্ট কাছাকাছি এসেছে। আমরা আরো কিছুক্ষণ ব্যাটিংয়ে থাকলে আরো বড় ব্যবধানে জিততে পারতাম। তবে বেশির ভাগ অংশেই খেলার নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতেই ছিল।’
দলের সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে কামিন্স যোগ করেন, ‘বোল্যান্ড আমার প্রিয় খেলোয়াড়। তিনি যথেষ্ট ভালো খেলেছেন। দলের প্রত্যেকেই নিজেদের ভূমিকা ভালোভাবে পালন করেছে। তাই সবাইকেই আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। এবার দলের সবাই একটি লম্বা বিরতি পাবে। এই বিরতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসন্ন অ্যাশেজে মনোযোগ দেয়ার আগে আমরা এই বিরতিতে ভালোভাবে শিরোপা উদযাপন করব। টেস্ট ক্রিকেট আমাদের প্রিয় ফরম্যাট, আমরা টেস্ট দেখেই বড় হয়েছি। এই ফরম্যাট ক্রিকেটারদের চ্যালেঞ্জ করে। জয়ের পর টেস্ট ফরম্যাটেই যে কোনো ক্রিকেটার সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্টি পায়। আমরা খেলতে ভালোবাসি।’