'পোস্টমর্টেম করা দেখলে কেউ আত্মহত্যার চিন্তাও করতো না'

সাব্বির বিন এনাম (কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ)
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪, ১২:৪৫ এএম

ছবি: সংগৃহীত
মানুষ যদি সচরাচর কখনো পোস্টমর্টেম (অটোপসি) কিভাবে করা হয় তা দেখতো তাহলে কখনই হয়তো আত্মহত্যার কথা চিন্তাও করতো না। অন্তত পক্ষে জীবন নিয়ে দশবার ভাবতো। আমার জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো অটোপসি দেখার সুযোগ হয়েছিলো। অনেক এক্সাইটমেন্ট নিয়ে গিয়েছিলাম দেখতে। গা ছমছম করা সেই হৃদয়বিদারক দৃশ্যের ধারা বর্ণনাই এখন করতে যাচ্ছি।
সময়টা ঠিক কবে তা সঠিকভাবে মনে নেই। তবে তখন ডুম ঘরে (লাশ ঘর) তিনটা লাশ ছিলো। প্রথমটি ২৩ বছর বয়সী মেয়ের ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যার কেস। অপরটি ৩০ বছর বয়সী মহিলার বিষ খেয়ে আত্মহত্যার ও তৃতীয়টি ৩০-৩২ বছর বয়সী পুরুষকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার কেস।
অটোপসি রুমে যাওয়ার পর দেখলাম প্রথমেই ডোম মামা ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করা ২৩ বছর বয়সী মেয়েটার গায়ের সব জামা কাপর কেটে খুলে ফেলে। আহা...আজ সেই পর্দা, লজ্জা, সম্ভ্রম সবই যেন অসহায়। তারপরেই গলা থেকে নাভির নিচ পর্যন্ত একটানে দুইভাগ করে দেয়। আমরা সাধারণত কুরবানির গরুকেও অনেক যত্ন সহকারে কাটি। কিন্তু এখানে মেয়েটার দুইপাশের চামড়া টেনে ছিঁড়ে ফেললো ডোম। এর পর পাজরের কার্টিলেজটা অর্থাৎ বুকের উপরিভাগের মাঝখানে হাড়ের জোড়াটা নাইফের একটানে কেটে ফেললো। বেরিয়ে এলো ভেতরের সব অর্গান। পরে মেয়েটার পেটে বাচ্চা ছিলো কিনা তা চেক করলো।
এর পরের দৃশ্যটা ছিলো বর্ণনাতীত। দেখলাম মাথার পেছনে নাইফ দিয়ে চিরে ফেললো ওই ডুম। পরোক্ষনে নারিকেলের ছোবড়া ছোলার মত টেনে মাথার চামড়াটা কপাল পর্যন্ত ছোলে খুলিটা কুপিয়ে ভাঙছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আমার শরীরটা কেমন যেন করছিলো। তখন গরুর হাড্ডি কুপানোর কথা মনে পরে যাচ্ছিলো আমার।
ঠিক একই ভাবে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করা মহিলাটাকেও স্টমাক, লিভার, কিডনি, ব্রেন কেটে বের করে ফরেনসিকের এর জন্য পাঠিয়ে দিলো ডুম।
আর মার্ডার কেসের ওই তৃতীয় লাশটি তো চোখের দেখাতেই মার্ডার কেস। তাও কাটাকাটি করতে হলো ডুমের।
এসব লোমহর্ষক কর্মযজ্ঞ শেষে আবার বস্তা সেলাইয়ের এর মত কাটা লাশগুলোর নিচ থেকে উপর পর্যন্ত সেলাই করে খালাস।
পরোক্ষনেই শুনলাম বাথরুমে নাকি আরেকটা নতুন লাশ আসছে। সেটাকে আনতে চলে গেলো ডুম মামারা।
এসব দেখা শেষে মাথায় নানা ধরণের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো। ভাবছিলাম কোথায় গেলো এত সম্ভ্রম এত দাম্ভিকতা? বার বার একটা কথাই মনে হচ্ছিলো যে মরে গেলে শরীরটার যেন আর একপয়সারও মূল্য নেই।
এমনটা এই মনে করে ভাবছিলাম যে, বেচে থাকতে হয়তো ওই দুইটা মহিলার দিকে কেউ তাকানোর সাহসও পেত না। কিন্তু এখন নিথর দেহ বিবস্ত্র অবস্থায় লাশ ঘরে পরে আছে।
আত্মহত্যার পরে তার শরীরটার সাথে কি করা হয় যদি কেউ কখনো দেখতো তাহলে হয়তো দেশে আত্মহত্যার পরিমাণ অনেকটা কমে যেতো।
অবশ্য মানুষের বডির মূল্য আর কত? মারা গেলে পশুরাও খায় না। এখন মনে হচ্ছে আখেরাতটাই আসল। এই দুনিয়ায় আমরা শুধু ব্যাটারি চালিত একটা শরীর।
আত্মা ছাড়া যেমন শরীরের কোনো মূল্য নেই, ঠিক তেমনই বাপ-দাদার টাকা না থাকলে ডেডবডিটারও কোনো সম্মান নেই।