শীতে নাকাল লালমনিরহাটের জনজীবন, ভোগান্তিতে হতদরিদ্ররা

রবিউল ইসলাম বাবুল, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:২৩ পিএম

দুইদিন ধরে সূর্যের দেখা মিলেনি। ছবি : ভোরের কাগজ
শীতে কাঁপছে উত্তর জনপদের জেলা লালমনিরহাট। দুইদিন ধরে সূর্যের দেখা মিলেনি উত্তর জনপদের জেলার কোথাও। ঘন কুয়াশা আর প্রচণ্ড ঠান্ডায় মুখ থুবড়ে পরেছে লালমনিরহাট জেলার জনজীবন।
উত্তর জনপদের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে প্রতিবছর এ জেলায় তীব্র কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডা বেশি পড়ে। গত দুদিন দিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় শীতের তীব্রতা আরো বেড়েছে। এতে খেটে-খাওয়া দিন মজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে।
এদিকে জেলার সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে পড়েছে তিস্তা পাড়ের অসহায় নদীভাঙ্গা হতদরিদ্র ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের কর্মজীবী মানুষ। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাহিরে বেরোচ্ছেন না। কনকনে ঠান্ডা শীতের দাপটে শহর ও গ্রামাঞ্চলসহ চর এলাকার বহু দরিদ্র অসহায় মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।
বৃহস্পতিবার (২২ জানুয়ারি) লালমনিরহাট জেলার পাঁচ উপজেলার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। দিনে রাতে ঘন কুয়াশা এবং হিমেল হাওয়ায় জনজীবন নাকাল হয়ে পড়েছে। কুয়াশা ও পশ্চিমা বাতাসের কারণে বোরো বীজতলা ও আলুর আবাদ নিয়ে কৃষকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে কৃষি দপ্তরের সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় রবি মৌসুমে রবি শস্যর ঠান্ডা জনতি বালাই নিয়ে বিপাকে পরেছে কৃষক। কনকনে ঠান্ডার কারণে দরিদ্র শীতার্ত মানুষের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে ।
আরো পড়ুন : দেখা নেই সূর্যের, শীতে বিপর্যস্ত দিনাজপুরের জনজীবন
বুধবার (২৩ জানুয়ারি) লালমনিরহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ডিগ্রি ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি। লালমনিরহাট আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে লালমনিরহাটে শীতের দাপট খুব বেশি অনুভূত না হলেও গত দুই দিনে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। লালমনিরহাটসহ আশপাশের এলাকায় তাপমাত্রা এখন ১০ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে।
এদিকে তীব্র ও ঠান্ডা শীতের কারণে নিম্ন আয়ের খেটে-খাওয়া মানুষগুলোর কাজের অভাব দেখা দিয়েছে। খেটে-খাওয়া মানুষেরা ঠিকমত নিজেদের শ্রম বিক্রি করতে না পেরে বেকায়দায় পরেছেন তারা। ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডার কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ক্রেতা-বিক্রেতাও কমে গেছে। রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল করছে ধীর গতিতে। দূরপাল্লার যানবাহনগুলো দিনের বেলা হেড লাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে।
শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছিন্নমূল মানুষ ও খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। সকালে সদর উপজেলার মোগোল হাটের আটো রিকশা চালক আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে আলোচনা হলে তিনি বলেন, যে ঠান্ডা শীত এখন বেলা ১২টা বাজে এ পর্যন্ত কোনো যাত্রী পেলাম না। রিকশা চালিয়ে টাকা আয় করতে না পারলে পরিবার না খেয়ে থাকবে।
পাটগ্রামের রুবেল মিয়া জানান, দিন দিন কুয়াশার সঙ্গে ঠান্ডার মাত্রা বেশি অনুভূত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকেই উত্তরের ঠান্ডা বাতাস আর কনকনে শীতে জনজীবনে অনেকটা ভোগান্তি বেড়েছে। গরীর অসহায় দিন মজুর প্রচণ্ড ঠান্ডায় কাজে যেতে না পেরে অনেকটা দিশেহারা। শীত নিবারণের জন্য মোটা গরম কাপড় পরতে হচ্ছে তবুও ঠান্ডা নিবারণ হচ্ছে না। সন্ধ্যা থেকেই এখন গায়ে মোটা জামা কাপড়ে পরেও শীত নিবারণ সম্ভব হয় না। রাতে ঠান্ডায় দুঃস্থ অসহায় মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। শীত বস্ত্র না থাকায় তাদের প্রতি রাতে কষ্টে কাটাতে হচ্ছে। রাতে ও সকাল হলে বাড়ির সামনে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টায় ব্যস্ত থাকেন বয়োঃবৃদ্ধ, যুবক, শিশু শ্রমজীবী মানুষ।
হাতিবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া কৃষক আলী বলেন, আগের থেকে অনেক বেশি ঠান্ডা পড়েছে। শীত অনেক কষ্টে আছি সকালে কাজে গেলে প্রচুর ঠান্ডা লাগে, কাজ করতে খুবই কষ্ট হয়। দিনের বেলাতে সূর্যের দেখা নাই। সন্ধ্যার পর থেকে ঠান্ডা বাড়ে। সকালে কাজে যেতে পারি না ঠান্ডায় কারণে। রাতে কনকনে ঠান্ডায় কম্বলের অভাবে ঘুমাতে পারি না।
কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরাহবি এলাকার দোকান ব্যবসায়ীর বলেন, প্রতিদিন সকালে দোকান খুলি। এখন প্রচণ্ড ঠান্ডা, কষ্ট হলেও জীবন জীবিকার তাগিদে ব্যবসার কাজ করতে হয়। আজ আগের থেকে বেশি ঠান্ডা পড়েছে। হাত পা টন টন করছে, কাস্টমার নেই। এই ঠান্ডায় তেমন কেউ বাহিরে বের হয় না, তাই বেঁচাবিক্রি নেই। এভাবে চলতে থাকলে দোকান ব্যবসা লাটে উঠবে।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, শীতজনিত রোগের কারণে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়েছে। কনকনে শীতে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিশু ও বৃদ্ধরা। শ্বাসকষ্ট জনিত বিভিন্ন রোগে বয়োবৃদ্ধ ও নিউমোনিয়া-ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
আরো পড়ুন : তাপমাত্রা নিয়ে আবহাওয়া অফিসের নতুন তথ্য
লালমনিরহাট জেলা আবহাওয়াবিদ এর সঙ্গে মুঠোফোনে আলোচনা হলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, জানুয়ারি মাসে এই অঞ্চলে একাধিক শৈত্যপ্রবাহের শঙ্কা রয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক রকিব হায়দার ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারি বরাদ্দ এসেছে প্রয়োজনের তুলনায় কম। আমরা এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে এ জেলায় ১৬ হাজার পিচ কম্বল ও নগদ ৩২ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। আমরা পাঁচ উপজেলায় ইতোমধ্যে বিভাজন করে দিয়েছি। সরকারের সহযোগিতার পাশাপাশি শীতার্ত মানুষের পাঁশে লালমনিরহাট জেলার সকল বিত্তবান, এনজিও প্রধান, ব্যাংক কর্মকর্তাদেরকে আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলো এগিয়ে এলে শীতার্ত মানুষগুলোর কষ্ট লাঘব হবে।