×

রাজশাহী

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে 'জয় শ্রী-রাম,' 'আল্লাহু আকবার' স্লোগান; কী হয়েছিল?

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ পিএম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে 'জয় শ্রী-রাম,' 'আল্লাহু আকবার' স্লোগান; কী হয়েছিল?

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে দুই দিন ধরে এমন লোকসমাগম ছিল বিজিবির পাশে। ছবি : সংগৃহীত

   

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের একটি অংশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে তিন দিন ধরে একরকম টানাপড়েন বা উত্তেজনার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং নওগাঁ জেলা সংলগ্ন সীমান্তের ভারতের দিকের অংশে বেড়া নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশ অংশ থেকে বাধা দেয়া হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তের বাংলাদেশ-ভারত দুই দিকেই গ্রামের মানুষজন জড়ো হয় সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে। দুই দিকেরই বেশকিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা গেছে, বাংলাদেশ অংশে বেশি সংখ্যক লোকজন জড়ো হয়েছে, অন্যদিকে ভারত অংশে কিছু মানুষকে লাঠি রামদা, কাস্তের মতো অস্ত্র হাতে 'বান্দে মাতরম' স্লোগান দিতেও দেখা যায়। যদিও বিবিসি স্বাধীনভাবে এ ভিডিও যাচাই করতে পারেনি।

কী ঘটেছিল সেখানে?

ঘটনার সূত্রপাত হয় সোমবারে। চৌকা সীমান্তের অপর পারে ভারতের মালদহ জেলার বৈষ্ণবনগর থানার সুকদেবপুর এলাকায় বেড়া নির্মাণের তৎপরতা দেখা যায়।

সীমান্তের ১২০০ গজের মতো অংশে কোনো কাঁটাতারের বেড়া ছিল না এবং সেই বেড়া তৈরির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ভারতের অভ্যন্তরে ১০০ গজ ভেতরে মাটি খোঁড়া হচ্ছিল বলে জানান ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া। বিজিবি থেকে এনিয়ে বাধা দিয়ে সাময়িকভাবে কাজ থামানো হয়।

নিয়ম অনুযায়ী সীমান্ত লাইন থেকে দেড়শ গজের মধ্যে কিছু করা হলে সেটা অপর পাশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সঠিক নিয়ম মেনে অবহিত করতে হয় যেটা এক্ষেত্রে ভারতের বিএসএফ বাংলাদেশের বিজিবিকে জানায়নি বলে জানান লে. কর্নেল কিবরিয়া।

আরো পড়ুন : বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নজিরবিহীন কাণ্ড

সোমবার দুই দেশের বাহিনীর পতাকা-বৈঠক হলেও মঙ্গলবারে আবারো নির্মাণকাজ শুরু হয়। মঙ্গলবারেও দুই পক্ষের বৈঠক হয় এবং তারপরও বুধবারে আবারো একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হয়।

এনিয়ে স্থানীয় দুজন সাংবাদিক বিবিসি বাংলাকে জানান, মূলত মঙ্গলবার ও বুধবারে ব্যাপকহারে মানুষের জমায়েত বেড়ে যায় এবং একরকম উত্তেজনার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ভারতের দিকেও বিএসএফের সঙ্গে সেখানকার স্থানীয় লোকজনও ছিল।

বাংলাদেশের অংশের মানুষ ভারতের উদ্দেশে এবং ভারতীয় অংশের মানুষ বাংলাদেশের উদ্দেশে স্লোগান দেন বলে জানান বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন। পাবলিক পাবলিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে, এসো, সামনাসামনি হও, দুঘণ্টার মধ্যে দখল করে নিবো, বলছিলেন মি. আমিন।

ভারতের অংশে তোলা কিছু ছবি ও ভিডিও বিবিসিকে পাঠান বাংলাদেশি অংশের স্থানীয় সাংবাদিক মো. কাওসার আহমেদ। সেখানে অনেকর হাতে রামদা দেখা গেলেও একরকম হাস্যরসাত্মক পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়। যেমন- একজন রামদা শানাচ্ছেন বাংলাদেশ থেকে কেউ এলে কাটার জন্য শান দিচ্ছেন বলে হাসতে হাসতে জানান। আরেকজন কাঁধে বস্তা নিয়ে মশকরাচ্ছলে ভিডিওতে বলছেন, বোম, বোম, বোম, ফুটিয়ে দেব বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশ অংশের মানুষের মধ্যে অবশ্য উৎসাহ উদ্দীপনার পাশাপাশি উৎকণ্ঠাও ছিল বলে জানান কাওসার আহমেদ। তিনি বলেন, অপরপাশ থেকে 'বন্দে মাতারাম' 'জয় শ্রীরাম' এমন স্লোগান দেয়া হচ্ছিল, তখন এপারের মানুষ 'নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার' বলে জবাব দেয়।

এখানে বাংলাদেশ অংশে সীমান্ত ঘেঁষে যেসব কৃষকদের জমি রয়েছে তাদের মধ্যে শঙ্কার জায়গাটা বেশি।

ওরা যদি মেরে লাশটা তারবেড়ায় ঝুলিয়ে দিয়ে যদি বলে তার কাটছিল, আমাদের কিচ্ছু বলার নাই, একজন এলাকাবাসীকে উদ্ধৃত করে বলেন কাওসার আহমেদ। এছাড়া অনেকে গোলাগুলি হতে পারে এমন শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন।

সবশেষ সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের সৌজন্য সাক্ষাতের পর বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে এবং এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। বৃহস্পতিবার আর নির্মাণকাজ চালানো হয়নি বলে জানান ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া।

সাংবাদিক কাওসার আহমেদ অবশ্য বলেন, বৃহস্পতিবার বিভিন্ন এলাকা থেকে সীমান্তের সেই অংশ দেখতে উৎসুক মানুষ আসছেন।

আরো পড়ুন : মৃত্যুর দুই দিন পর বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত দিলো বিএসএফ

বিজিবির বেশ কয়েকজন জানান, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী শূন্য রেখা বরাবর দুই দেশের অন্তত দেড়শ গজের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হলে দুই দিকের সম্মতির প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ-ভারতের ১৯৭৫ সালের নীতিমালা অনুযায়ী সীমান্ত লাইন নির্ধারিত হওয়ার পর লাইনের উভয় পাশে ১৫০ গজের মধ্যে কোনো পক্ষই স্থায়ী বা অস্থায়ী সীমান্ত রক্ষী বা সশস্ত্র কর্মী রাখবে না এবং উভয় পাশে ১৫০ গজের মধ্যে (মোট ৩০০ গজ এলাকায়) কোনো প্রতিরক্ষামূলক কাঠামো, যেমন পরিখা বা অন্যকিছু থাকলে সেগুলো ধ্বংস বা ভরাট করতে হবে।

বিএসএফ-বিজিবি যা বলছে

বিএসএফের একজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলার কলকাতা প্রতিনিধিকে জানান, বেড়া নির্মাণের কাজটি আগে থেকে অনুমোদন সাপেক্ষেই করা হয়েছে।

মঙ্গলবারে বিএসএফের সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি এবং মুখপাত্র এন কে পাণ্ডে বিবিসিসহ পশ্চিমবঙ্গের সাংবাদিকদের জানান, তেমন কোনো সমস্যার কিছু না, আমাদের বেড়া নির্মাণের কাজ চলছে, যেটায় অপর পাশ থেকে আপত্তি জানানো হয়েছিল যার জবাব দেয়া হয়েছে, কাজের অগ্রগতি চলছে।

যদিও বৃহস্পতিবারে আর নির্মাণকাজ আর চালু করা হয়নি বলে জানানো হচ্ছে বিজিবির দিক থেকে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে বারে বারে কাজ থামিয়েও আবার কেন চালু করা হলো, অথবা বিএসএফ যে অনুমোদনের কথা বলছে তা থাকলে সমস্যা হলো কেন?

এ বিষয়ে বিজিবি রাজশাহী ব্যাটালিয়নের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. ইমরান ইবনে আব্দুর রউফ জানান, এখানে অনুমোদন নিয়ে থাকলেও এক্ষেত্রে যে প্রটোকল বা নিয়মনীতি পালনের কথা সেগুলো মানা হয়নি। যারা মাঠে কাজ করেন তাদের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না এবং সাধারণত এমন সিদ্ধান্তগুলো উপর পর্যায় থেকে আসতে হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কর্নেল রউফ বলেন, প্রথম দফায় মনে করেন কোম্পানি লেভেলে হয়েছে, আমি জানি এটা সমাধান হবে না। তারপর ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লেভেলে হলো, ওখানেও সমাধান হলো না। তারপর সন্ধ্যায় আমার সঙ্গে সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে হলো। ওখানেও শেষ কথা এমন ছিল যে আমরা দুই পক্ষই অর্ডারবাউন্ড, আমাদের উপর থেকে যে আদেশটা আসবে আমরা সেটাই করব। এই মুহূর্তে আমরা উত্তেজনা প্রশমনের জন্য যেটুকু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে, সেটা আমরা দেব।

সাধারণত কাজগুলো এভাবেই হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। পতাকা বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তারা বলছিল ২০১৬ সালে এরকম মিটিং হয়েছিল, অনুমোদন পেয়েছে, আমরা বলেছি ২০২১ সালের আমাদের একটা চিঠি আছে যেখানে আমরা বলেছি অনুমোদন হয়নি, জয়েন্ট সার্ভে করার জন্য, যেটা হয় এটা। এটার কোনো উত্তর দেয়া হয়নি, এখন ২৫ এ এসে বানানো শুরু করে দেয়া এটা কেমন কথা?

নওগাঁর সীমান্তেও অনেকটা একই ধরনের বিষয় হয়েছে যেখানে বিএসএফের দিক থেকে পুরনো অনুমোদনের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশের দিকে বিষয়টি মীমাংসিত না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

নওগাঁয় কী হয়েছিল?

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঘটনার মতো একই সময়ে বুধবার নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার বস্তাবর সীমান্তের ওপারে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে বাধা দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

এনিয়ে নওগাঁর পত্নীতলার ১৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কর্নেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন জানান, নওগাঁর সীমান্তের বেশিরভাগ দিকেই কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও ৬০০ গজের মতো এলাকায় বেড়া নেই। আইন অনুযায়ী এ ধরনের কাঁটাতারের বেড়া সাধারণত শূন্য রেখা থেকে দেড়শ গজের বাইরে হয়।

তবে সেখানে কিছু ঘর-বাড়ির অবস্থান ঠিক রাখতে বিএসফ যেখানে নির্মাণ শুরু করেছে সেসব কিছু জায়গায় দেড়শ গজের ভেতরে চলে আসে বলে বিজিবি থেকে আপত্তি জানানো হয় বলে জানান কর্নেল হোসেন।

আগে থেকে এ বিষয়ে অবহিত না করেই সে এলাকায় গাছপালা কাটার এবং এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি কাটার কাজ শুরু করে দেয়া হয়। বাধা দেয়ার পর অবশ্য সেখানে কাজ বন্ধ করে সেসব মেশিন দেড়শ গজের বাইরে নিয়ে যাওয়ার কথাও জানানো হয়। সেখানে অবশ্য সীমান্তে জমায়েত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।

শুক্রবারে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক হওয়ার কথা, সেক্ষেত্রে সমাধান না হলে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক করা হবে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের বিএসএফের দক্ষিণ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের আইজি এবং বিজিবির দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডারের মধ্যে এক রুটিন অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে।

বৈঠকে সীমান্তে শান্তি এবং সমন্বয় বজায় রাখা, দুই সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা, এমন পরস্পর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিএসএফের তরফ থেকে বলা হচ্ছে।

এছাড়াও সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধ, সীমান্ত এলাকায় চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম, অবৈধ পারাপার বন্ধ করা, এবং কার্যকর সীমান্ত পরিচালনা এবং দুই বাহিনীর সহযোগিতার মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার করার কথাও বলা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App