সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি পর্তুগালে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস

হাফিজ আল আসাদ, পর্তুগালের লিসবোন থেকে
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪৩ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বহির্বিশ্বের দূতাবাসগুলোতে রাষ্ট্রদূত এবং বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগ পেয়ে দেশে দেশে যারা দলীয় এজেন্ট বাস্তবায়নসহ অবৈধ সরকারের অন্যায় আদেশ পালন করে আসছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পরই সেইসব দেশের রাষ্টদূতসহ কর্মকর্তাদের রদবদলসহ নিয়োগ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় পর্তুগালে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সেবা এবং নানান অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত রেজিনা আহমেদকে অপসারণ করে নতুন রাষ্ট্রদূত হিসাবে তিন বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে ড. এম মাহফুজুল হককে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট দ্বিতীয় সচিব হিসাবে নিয়োগ পাওয়া আলমগীর আহমেদ দলীয় এজেন্ট এবং দূতাবাসকে একপ্রকার দলীয় কার্যালয় বানিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় এজেন্ট বাস্তবায়ন করাসহ নানান কর্মকাণ্ড করে সরকারের একনিষ্ঠ হিতাকাঙ্ক্ষী হিসাবে প্রথম সচিবে পদন্নোতি পান এবং তার পদন্নোতির পরপরই দূতাবাসের চিত্র বদলে যায়। গড়ে উঠে ভেতরে বাহিরে অবৈধ সিন্ডিকেট। আলমগীর হোসাইন ২০২১ সালে অফিস সহকারী হিসেবে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিয়োগ পাওয়া মনিরুজ্জামান মনিরের নেতৃত্বে ভিতরে গড়ে উঠে দূতাবাসের সিন্ডিকেট।
এবং দূতাবাসের বাহিরে পর্তুগাল আওয়ামী লীগ সভাপতি জহিরুল আলম জসিম ও জাকির হোসেনসহ কতিপয় গ্যাংয়ের হাতে চলে যায় আরেকটি সিন্ডিকেট। যারা বড় অংকের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সত্যায়ন দূতাবাস সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সহজেই করে দিতেন।
আরো পড়ুন: নিউইয়র্কে শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী রেমিট্যান্স ফেয়ার
২০২১ সালে অফিস সহকারী হিসেবে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিয়োগ পাওয়া মনিরুজ্জামান মনির বর্তমানে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহকারী কনস্যুলার অফিসার হিসাবে কর্মরত আছেন। অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, গত তিন বছরে প্রবাসীদের কাছ থেকে অবৈধ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন মনিরুজ্জামান মনির। টাকা ছাড়া কোন কথাই বলেন না। দূতাবাসে সেবা নিতে আসা প্রবাসীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা এটা তার নিত্যদিনের অভ্যাস। হারানো পাসপোর্ট বা রিনিউ পাসপোর্ট করতে গেলে তাদের সিন্ডিকেট হয়ে না গেলে অনেক অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। সিন্ডিকেটের বড় আয় হলো বাংলাদেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স এক্সচেঞ্জ।
অভিযোগ রয়েছে জন প্রতি ১০০০ ইউরো থেকে ১৫০০ ইউরো দিলেই বাংলাদেশী পাসপোর্ট কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই সিন্ডিকেটের কাছ থেকে পাওয়া যায়। যেখানে পর্তুগালের একজন মানুষের বেসিক বেতন ৮২০ ইউরো। নিয়ম অনুযায়ী যার পাসপোর্ট সে নিজে এম্বাসিতে এসেই রিসিভ করতে হবে। কিন্তু মনির সিন্ডিকেটের হাতে টাকা দিলেই নিমেষেই সেই সব নিয়ম বদলে যায়।
পর্তুগালে প্রায় ৫০ হাজার প্রবাসীর বসবাস। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কাজে তাদের যেতে হয় দূতাবাসে। আর এসব সিন্ডিকেটের কারণেই দূতাবাসে সেবা নিতে আসা সাধারণ প্রবাসীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সবার আশা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রবাসীদের সমস্যাগুলো অগ্রাধিকার দিয়ে দেখবে। এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মনিরুজ্জামান মনিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, কিছু মানুষ উদ্দেশ্য পরিণতভাবে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলেছে ।