জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে দেশ সাজাবে বিএনপি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৫৪ পিএম

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। ছবি: ভোরের কাগজ
আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নানা প্রশ্নে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মতানৈক্য দেখা গেলেও এক আলোচনা সভায় ঐক্য ধরে রাখার কথাই বললেন দল দুটির নেতারা। জামায়াত আয়োজিত এই আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, তারা পুরনো মিত্র দলটিকে সঙ্গে নিয়েই চলবেন।
কিছু প্রশ্নে অমিল থাকলেও আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে এক থাকার ওপর জোর দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুল সালামও।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিদায় বেলায় ‘লগি-বৈঠার তাণ্ডব’ স্মরণে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জামায়াত।
১৯৯৯ সাল থেকে জোটবদ্ধ বিএনপি ও জামায়াত ২০০১ সালে একসঙ্গে সরকার গঠন করে। ২০০৬ সালের অক্টোবরে ওই সরকারের বিদায়ের সময় তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সম্ভাব্য প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে প্রশ্ন তুলে আন্দোলনে নামে আওয়ামী লীগ।
সেই বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ব্যাপক সংঘাত ঘটে, তাতে নিহত হয় কয়েকজন। সেই সহিংসতার ধারায় কয়েকমাস পরই জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল, তার দুই বছর দেশ শাসন করে সেনা নিয়ন্ত্রিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারপর নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় যায় আওয়ামী লীগ। তাদের দেড় দশকের শাসনের অবসান ঘটে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে।
আরো পড়ুন: দোসর তো অনেকেই আছে রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে এত ব্যস্ত কেন
২০২২ সাল থেকে বিএনপি ও জামায়াতের আনুষ্ঠানিক কোনো জোট না থাকলেও যুগপৎভাবে নানা কর্মসূচিতে তারা ছিল। তবে সরকার পতনের পর নির্বাচনের সময়কাল, নির্বাচন পদ্ধতি এবং রাষ্ট্রপতিকে রাখা-না রাখা নিয়ে দুই দলের মধ্যে বিভেদ দেখা যাচ্ছে।
বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানালে জামায়াত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আরো সময় দেয়ার কথা বলে। তার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, যারা ভোটে জিততে পারবে না, তারা এসব কথা বলে।
বিএনপি নির্বাচনের প্রচলিত পদ্ধতির পক্ষে হলেও জামায়াত সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চাইছে। জামায়াত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সরাতে চাইলেও বিএনপি তার বিরোধিতা করছে। ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে গত শনিবার জামায়াতে ইসলামীর সভায় যোগ দেন বিএনপি নেতারা।
এরমধ্যেই জামায়াতের সভায় গিয়ে মির্জা আব্বাস ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ পুনরায় ফেরার চেষ্টা চালাবে বলে সতর্ক করে দুই দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভারত চলে গেলেও তার দোসররা এখনও রয়ে গেছেন। ওই দোসরদের রেখে দেশ এগোতে পারে না। ওরা ষড়যন্ত্র করছে। আওয়ামী লীগ কখনো ছেড়ে দেবে না, ষড়যন্ত্র চলছে। আজকে এই থিওরি আসে, পরশু ওই থিওরি আসে। এ থিওরি আবার দুর্ভাগ্যবশত আমাদের মুখ থেকে বের হয়।
আরো পড়ুন: আ.লীগবিহীন দেশ গড়তে হবে: মির্জা আব্বাস
তবে জামায়াত ও বিএনপি একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে আর আওয়ামী লীগ আসতে পারবে না। দেশের স্বার্থে দুই দলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জামায়াত ও বিএনপি মিলে একসঙ্গে দেশ সাজাব।
বিগত দিনের নানা মতানৈক্য দূরে সরিয়ে রাখার আহ্বান জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিগত দিনে কোনো এক সময় হয়ত আমরা একসঙ্গে হতে পারিনি। কোনো এক সময় হয়ত একসঙ্গে হয়ে আওয়ামী লীগকে তাড়িয়েছিলাম। আমরা আগামী দিনে সব সময়ের জন্য, দেখি চেষ্টা করে পারি কি না, একসঙ্গে হয়ে এই দেশটাকে আবারো সুন্দর করে পুনর্গঠিত করতে পারি কি না?’
বিএনপি নেতা আব্দুস সালামও ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে বলেন, বিভিন্ন কারণে জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে অমিল থাকতে পারে। কিন্তু ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে এক হতে হবে। নির্বাচনের আগে ও পরে দুই দল ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ফ্যাসিবাদকে প্রতিহত করতে জামায়াত ও বিএনপির ঐক্য জোরদার করতে হবে। আর যাতে বাংলাদেশে ১৪ দলীয় জোট রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত হতে না পারে, সেজন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। তিনিও ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে সবাইকে সজাগ থাকার কথা বলেন।