আমরা শেখ হাসিনার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারি: জহির উদ্দিন স্বপন

গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৫ পিএম

বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা সফরকালে দিনভর বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ এম. জহির উদ্দিন স্বপন
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ জননেতা এম. জহির উদ্দিন স্বপন বলেছেন, সংবিধান যদি নীরব থাকে তাহলে দেশে কি পরিস্থিতি হয় তা আমরা শেখ হাসিনার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারি। রাষ্ট্র যখন কোনো দলের হাতিয়ারে পরিনত হয় তখন একজন রক্ত মাংসের মানুষ কেমন দৈত্য দানবে রুপান্তরিত হয় তাও আমরা শেখ হাসিনার কাছ থেকে প্রমাণ পেতে পারি।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) তিনি তার নিজ নির্বাচনী এলাকা বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা সফরকালে দিনভর বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন।
জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, আমরা এটাও প্রমাণ পেতে পারি যে দেশের সমস্ত পুলিশ বাহিনীকে একটা দলের অস্ত্রে পরিনত করলে পরে সেই দলের কি পরিনতি হয়, পুলিশ প্রশাসন এবং বাহিনীর কি পরিনতি হয় এবং শেষ পর্যন্ত দেশ নিয়ে কতো ভোগান্তির মধ্যে পরতে হয় তাও কিন্তু আমরা দেখছি।
রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে রওনা হয়ে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি গৌরনদীতে এসে পৌঁছান। এরপর তিনি উপজেলা সদরের উত্তর বিজয়পুর গ্রামে প্রয়াত বিএনপি নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অহিদুল হক খানের কবর জিয়ারত করেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত করে তাদের খোঁজখবর নেন।
আরো পড়ুন: খালেদা জিয়ার মানহানি মামলা খারিজ
এরপর দুপুর ১২টায় তিনি গৌরনদী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ও উপজেলার সব মন্দির কমিটির নেতাদের সঙ্গে উপজেলা অডিটরিয়ামে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।
ওই সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি আরো বলেন, পুলিশ ছাড়াতো দেশ চলেনা। সামরিক বাহিনী ছাড়া পৃথিবীতে বেশ কয়েকটি দেশ আছে। কারণ তারা জানে যে তাদের যুদ্ধ করতে হবেনা। আমাদেরও যদি যুদ্ধ করা না লাগত, যদি যুদ্ধের প্রয়োজন না থাকতো তা হলে আমরাও চিন্তা করতাম যে আমাদের সামরিক বাহিনীর ভেতরে হাজার হাজার কোটি টাকা, লক্ষ লক্ষ কোটি আমরা কেন খরচ করবো।
কিন্তু পুলিশ ছাড়া এই রাষ্ট্র চলবে না। পুলিশের সেবা হচ্ছে একেবারে অক্সিজেনের মত। আমি যেমন অক্সিজেন ছাড়া নিশ্বাস নিতে পারি না। তেমনি একটি রাষ্ট্র পুলিশের সেবা ছাড়া চলতে পারেনা। শেখ হাসিনার সবচাইতে বড় অপরাধ এ রকম পুলিশের মত একটি প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানকে সে কলুষিত করেছে, দলীয়করণ করেছে, দলীয় হাতিয়ারে রুপান্তরিত করেছে। এই বাহিনীকে ব্যবহার করে গুম করা হয়েছে, এই বাহিনীকে ব্যবহার করে খুন করা হয়েছে, এই বাহিনীকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেখেছি সংখ্যা গুরু যারা থাকে তারা ধরেই নেয় সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করলে তো কোন ক্ষতি হবেনা। আমরা তো সংখ্যাগরিষ্ট। এ জন্যই কিন্তু রুল অব মেজরিটি আর গণতন্ত্র দুটো কিন্তু এক জিনিস না। রুল অব মেজরিটি মানে হইতেছে যার সংখ্যা বেশি সে যা খুশি তাই করবে। আর গণতন্ত্র কিন্তু তা না। গণতন্ত্র হচ্ছে নির্বাচন তুমি যে ভাবেই হও না কেন অধিকার এবং সেবাটা সবাইকে সমান ভাবে দিতে হবে। যদি হিন্দু ভাইরা, বা বৈদ্য ভাইরা, বা খ্রীষ্টান ভাইরা অথবা মুসলমান ভাইরা কোন একটা দলকে ভোট নাও দেয়, কিন্তু সেই দল যদি মেজরিটিতে জেতে। সংবিধান অনুয়ায়ী সে কিন্তু সরকার গঠন করবে।
আরো পড়ুন: মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত
কিন্তু সরকার গঠন করার পরে সে যদি জানেও যে অমুক সংখ্যালঘুরা আমাকে ভোট দেয় নাই। তারপরও তাকে সে সেবা দিতে বাধ্য। যদি সে না দেয় তা হলে সংবিধান লঙ্ঘন করার অভিযোগে তাকে আমরা বিচারের আওতায় আনতে পারবো। সংবিধান যদি নিরব থাকে তাহলে দেশে কি পরিস্থিতি হয় তা আমরা শেখ হাসিনার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারি।
গৌরনদী উপজেলা পুজা উদযাপন কমিটির সাবেক সভাপতি মনোজ কুমার গোমস্তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই মত বিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- গৌরনদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ সরোয়ার আলম বিপ্লব, গৌরনদী মডেল থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইউনুস মিয়া, গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরীফ জহির সাজ্জাদ হান্নান, বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম কাজল, গৌরনদী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মো. জাকির হোসেন শরীফ, সদস্য সচিব মো. ফরিদ মিয়া।
বক্তব্য রাখেন- উপজেলা পুজা উদযাপন কমিটির নব নির্বাচিত সভাপতি দুলাল চন্দ্র রায় দুলু, সাধারণ সম্পাদক মানিক লাল আচার্য্য, ইউনিয়ন পুজা উদযাপন কমিটির পক্ষে অপু রায়, অপুর্ব চক্রবর্তি অসিম, হরেন সরকার, প্রেমানন্দ ঘরামী, শান্তনু ঘোষ, অভিজিৎ ভট্রাচাজ্য শ্রীকৃষ্ণ চক্রবর্তি, সংকর দাস প্রমুখ। এরপর দুপুর সোয়া ২টায় তিনি সদ্য প্রয়াত বিএনপি নেতা ও সাবেক পৌর কমিশনার মো. হোসাইন তুষারের কবর জিয়ারত করেন ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত করে তাদের সদস্যদের খোঁজখবর নেন।