×

রাজনীতি

কোটা বিরোধীদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৬:২১ পিএম

কোটা বিরোধীদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’

জোনায়েদ সাকি

   

সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক এবং কোটা বিরোধীদের চলমান দুই আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করেছে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’।

শুক্রবার (৫ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে মঞ্চের সমন্বয়কারী গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান জোনায়েদ সাকি এই ঘোষণার কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘সরকার এক মরণ খেলায় নেমেছে। মানুষকে বন্দি করার জন্য হত্যা করছে, গুম করছে, দেশ ধবংস করছে… ক্ষমতা তারা ছাড়বে না। এই যে ছাত্র-ছাত্রীরা নেমেছে কোঠা সংস্কারের জন্য, এই যে শিক্ষকরা আন্দোলনে নেমেছেন। এসব আন্দোলন ফুঁসে উঠছে বলে এখন আবার ছাত্রলীগের গুন্ডা বাহিনী, হেলমেট বাহিনী হলে হলে পাহারাদার বসিয়েছে এবং আন্দোলনটাকে দমনপীড়ন করে ধবংস করতে চাইছে।

‘‘আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, সমস্ত আন্দোলন আমাদের। এই ছাত্রদের আন্দোলনে বিরোধী দল কোনো ষড়যন্ত্র করছে না। আমরা পরিস্কারভাবে ছাত্রদের আন্দোলনকে সমর্থন জানাই, শিক্ষকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানাই। এই শিক্ষক আমাদের, এই ছাত্র আমাদের, এই শ্রমিক আমাদের, এই দেশের কৃষক আমাদের, এই দেশের জনগন আমাদের… তাদের প্রতিটি আন্দোলনে আমরা আছি, থাকব।”

সাকি বলেন, ‘‘এই সব আন্দোলন একসূত্রে গঠিত হয় আপনার (শেখ হাসিনা) মসনদ, আপনার গদি তার তখতে- তাউস গলায় গামছা বেধে আপনাদেরকে নামিয়ে দেবো… সেই দিন আসছে। নতুন করে প্রস্তুতি নিন।

‘‘সমস্ত বিরোধী দলকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করে গণআন্দোলন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই আমরা সরকারের পতন ঘটাব তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। গণতন্ত্র মঞ্চ লড়বে সেই লড়াইয়ে আপনারা যোগ দেবেন।”

আরো পড়ুন: সিলেট জেলা বিএনপির ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ

গণতন্ত্র মঞ্চের সব নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সম্পাদিত দেশের স্বার্থ বিরোধী বিভিন্ন সমঝোতা স্মারকের প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল পুরানা পল্টনের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

‘এই সরকারের সঙ্গে কোনো আপোষ নয়’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘সরকারের একটাই লক্ষ্য ক্ষমতায় থাকবে যেকোনো ভাবে। গুন্ডাবাহিনী লাগবে… আওয়ামী গুন্ডা দিয়ে চলে না। অতএব পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনী বানাচ্ছে। সেজন্যই বেনজীর (সাবেক পুলিশ প্রধান) একের পর এক সম্পত্তি দখল করেছে…হিন্দু-মুসলমান মানে নাই…দেখেনি কেউ এতোগুলো বছর ধরে… তখন চুপচাপ ছিলেন। এখন ভদ্রতা করেন, ফোরটোয়েন্টি করেন, সংসদের মধ্যে বক্তৃতা করে বলেন, আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ চাই, কোনো দুর্নীতি আমি সহ্য করব না।”

‘‘এসব কিছুর প্রেক্ষিতে আমরা একটাই কথা বলতে চাই, আমরা অনেক দিন ধরে বলছি, এই সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনো আপোষ হবে না। এই সরকারকে আমরা কোনো পারমিশন দেয়া, তাদেরকে কোনো অনুমোদন দেবো না। এই সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে।”

তিনি বলেন, ‘‘মাঝে-মধ্যে অনেকে বলেন, অনেক দিন ধরে লড়াই করছেন পারলেন না তো। আমি বলি, কাল পারিনি, আজ পারব, আজ পারিনি, কাল পারব… লড়াইটা চলবে যতদিন পর্যন্ত তাদের পরাস্ত করতে না পারি।”

‘‘এখানে কোনো ক্ষমা নাই, আপোষ নাই। দুর্নীতিবাজদের চরিত্রহীনদের জরবদখলকারীদের সঙ্গে গণতন্ত্রকামী মানুষেরা আপোষ করবে না। সবার কাছে আমার অনুরোধ লড়াই ছাড়া মুক্তি পাবেন না। বাঁচবার জন্য এই লড়াই আপনাদের সবাইকে করতে হবে।”

‘ট্রানজিটে ইনকাম নাই’

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘দুখের বিষয় হলো এখানে যা কিছু বলেন না কেনো সরকারের কানে তো বাতাস যাবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ট্রানজিট দিয়ে কি অন্যায় করলাম? আমি ওইরকম করে যদি পাল্টা প্রশ্ন করি ট্রানজিট দিয়ে কি পেলেন?”

আরো পড়ুন: আষাঢ়-শ্রাবণ-ভাদ্রে গাছ লাগাতে হবে: কৃষিবিদ সমীর চন্দ

‘‘আগে বলা হয়েছিলো আমাদের… ট্রানজিট দিলে অনেক টাকা-পয়সা পাওয়া যাবে, ওরা (ভারত) মাশুল দেবে, ট্রানজিট ফি দেবে… আমাদের দেশ সেই টাকায় সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক অন্যান্য উন্নত দেশ হয়ে যাবে। বহুবার আমরা জানতে চেয়েছি, এই পর্যন্ত ট্রানজিট খাতে আমাদের ইনকাম কত? জবাব নাই। বাজেটটা পুরো পড়ে দেখেন আমাদের সরকার কত ইনকাম করছে, তার মধ্যে ট্রানজিটের মাশুলের কথা নাই।”

তিনি বলেন, ‘‘এবার যেটা করলো সেটা আপনি আপনার নিজের দেশকে বিপদে ফেললেন। সরকার তো স্বীকার করে না, বলে না। সংসদের মধ্যে বিদেশের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক এটা উপস্থাপনের নিয়ম আছে… আপনারা সেটা উপস্থাপন কখনো করেননি। আমরা পরিপূর্ণভাবে জানিই না, কি কি সম্পাদিত হলো। চুক্তির বিবরণগুলো কি?”

‘‘ভারতের পত্রিকায় ভারতের কোনো এক নেতা লিখেছেন যে, করিডোর বা ট্রানজিট যেটা দেয়া হলো নতুন করে রেলপথ স্থাপনের মধ্য দিয়ে ভারত থেকে সেদেশের ট্রেন সরাসরি এসে বাংলাদেশে ঢুকবে, আবার সেভেন সিস্টারের কাছে ভারতের মধ্যে ঢুকবে… এটা চিকেন নেট…. বুঝে দেখেন, চিকেন নেট ভারতের একমাত্র জায়গায় যেটা দিয়ে সেভেন সিস্টারে যাওয়া যায়.. সেভেন সিস্টারের পর সব কয়টা সিস্টারে বিদ্রোহী … কোনো কোনো বিদ্রোহী এরকম শক্তিশালী যে তারা একদম সরাসরি ভারতের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে আঘাত করে। চিকেন নেটের পাশে ভুদলাম সেখানে ভারত-চীনের বিদ্রোহ হয়েছিলো, তাদের সীমানা, তাদের বাউন্ডারি নিয়ে, জায়গা-জমি নিয়ে সেই বিতর্কের নিষ্পত্তি হয়নি…..। এর কারণে তারা (ভারত) এই জায়গাকে নিরাপদ রাখতে চায়, তাদের সিকিউরিটির সমস্যার জন্য বাংলাদেশ দিয়ে ট্রেন নিয়ে যাচ্ছে তারা।”

‘বাংলাদেশের লাভটা কি’

‘প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) বলছেন, সমঝোতা স্মারকে অসুবিধা কি? এর জবাবে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘‘বাংলাদেশের লাভটা কি? এর আগে আপনি ট্রানজিট দিয়েছেন, করিডোর দিয়েছেন। সেখানে আমি প্রধানমন্ত্রীকে পরিস্কার জিজ্ঞেস করতে চাই যে, আপনি যে ট্রানজিট-করিডোর দিয়েছেন সেখানে বাংলাদেশের লাভের জায়গাটা কি? আমাদের জাতীয় স্বার্থটা কি…. কোনো কিছু বলতে পারবেন।”

আরো পড়ুন: অনেক ঝড় মোকাবিলা করে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মাথা নত করে নয়

‘‘সরকারের কোনো মন্ত্রীরা, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আপনি কি বলতে পারবেন এই পর্যন্ত ট্রানজিট বা করিডোর দিয়েছেন তাতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে কিভাবে লাভবান হয়েছে, বানিজ্যিকভাবে কিভাবে লাভবান হয়েছে, নিরাপত্তার দিক থেকে কিভাবে লাভবান হয়েছে? কোনোভাবেই বাংলাদেশ লাভবান হয় নাই। আপনার অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমান বলেছেন, ট্রানজিট বা করিডোরের জন্য যদি টাকা চাই সেটা নাকি অসভ্যতা হবে। এই হচ্ছে সরকারের নমুনা। এসবের পরও এবার আপনি ভারতকে বিনা শুল্কে রেল সুবিধা দিয়েছেন। এর বিনিময়ে বাংলাদেশ কি পাবে? এই সরকারকে কি কোনো স্বাধীন দেশের সরকার বলা যাবে না।”

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে অভিন্ন নদীর পানি হিস্যা, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, বানিজ্যের ভারসাম্যহীনতার বিষয়ে কেনো আলোচনা না হওয়ার কঠোর সমালোচনা করে এই বামপন্থি নেতা বলেন, ‘‘এই সরকার বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করছে না, আওয়ামী লীগ এবং বর্তমান সরকার বাস্তবে এখন ভারতীয় স্বার্থে প্রতিনিধিত্ব করছে। তাদের সমঝোতা চুক্তিগুলোতে বাংলাদেশের জনগন গ্রহণ করবে না।”

গত ২২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরকালে দুই দেশের মধ্যে ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে দলিলগুলো বিনিময় করা হয়। দু্‘পক্ষের মধ্যে চুক্তিগুলো হচ্ছে- ‘বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল পার্টনারশিপ’ এবং ‘বাংলাদেশ-ভারত গ্রিন পার্টানারশিপ’।

সমঝোতা স্মারকের মধ্যে রয়েছে- ‘মেরিটাইম কোঅপারেশন’, ‘মহাকাশ সহযোগিতা’, ‘রেলওয়ে কানেক্টিভিটি’, ‘ওশেনোগ্রাফি সহযোগিতা’ এবং ‘মিলিটারি শিক্ষা সহযোগিতা’।

আরো পড়ুন: টিকটকে অ্যাকাউন্ট খুলেছে বিএনপি

এছাড়া তিনটি সমঝোতা স্মারক পূনর্নবায়ন করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- ‘স্বাস্থ্য ও ওষুধ সহযোগিতা’, ‘দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা’ এবং মৎস্য খাতে সহযোগিতা’।

‘সরকারের নতজানু নীতি’

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলার কোনো সরকার নাই। এদেশে আছে অন্য দেশের তাবেদার সরকার। এই যে একজন পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন প্রতিদিন কথা বলেন, বেশিরভাগই হাসি-তামাশার কথা….গতকাল না পরশুদিন আসল কথাটা মুখ দিয়ে বের করে দিয়েছেন। বললেন, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে চীন সফরের কথা বলেছেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চীন যাবেন এটা নিয়ে ভারতের কোনো আপত্তি নেই।”

‘‘আর কিছু বলার দরকার আছে। বাংলাদেশ কি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ? এদেশের প্রধানমন্ত্রী বিদেশে যাবেন অন্য কোনো দেশের অনুমতি লাগবে? কিন্তু শেখ হাসিনার লাগবে, শেখ হাসিনার অনুমতি নিতে হয়… তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চীন যাওয়ার অনুমতি নিয়ে এসেছেন। এই হচ্ছে ৫৩ বছরে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের অবস্থা।”

ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবু ইউসুফ সেলিমের সঞ্চালনায় সমাবেশে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম ও জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব বক্তব্য রাখেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App