আনার হত্যা
উদ্ধার মাংসের টুকরো ও হাড়গোড় ‘পুরুষ মানুষের’

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৪, ০৮:১২ পিএম

আনোয়ারুল আজিম আনার। ছবি : সংগৃহীত
কলকাতার নিউটাউন হাউজিং কমপ্লেক্সের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে গত মাসে উদ্ধার করা দেহাংশ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার খালের কাছ থেকে উদ্ধার করা হাড়গোড় মানুষের (পুরুষ) বলে প্রাথমিক ফরেনসিক রিপোর্টে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ভারতীয় সিআইডির কলকাতা ব্যুরো।
সোমবার (১০ জুন) এ ঘটনায় গঠিত বিশেষ তদন্ত দলের প্রধান কলকাতা সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী বলেছেন, প্রতিবেদন থেকে একটি বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে এগুলো ‘মানুষেরই দেহাবশেষ’ এবং তা ‘পুরুষ মানুষের’।
টাইমস অব ইনডিয়াকে এ সিআইডি কর্মকর্তা বলেছেন, মাংসের টুকরো ও হাড়গুলো এমপি আনারের কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করাতে আদালতের অনুমতি চাইবেন তারা। অনুমতি পেলে আনারের স্বজনদের ডেকে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে এবং তারপর সিদ্ধান্তে আসা যাবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ মে কলকাতার নিউ টাউনের অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ‘সঞ্জিভা গার্ডেনস’ এর ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনারকে। যে ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে হত্যা করা হয়, ঢাকার গোয়েন্দাদের উপস্থিতিতে তার সেপটিক ট্যাংক থেকে কয়েক কেজি মাংসের টুকরো উদ্ধার হয় গত মাসে। রবিবার কলকাতার ভাঙড় এলাকার বাগজোলা খাল থেকে উদ্ধার হয় কিছু হাড়গোড়।
সিআইডির আইজি চতুর্বেদী বলছেন, দুটি স্থান থেকে উদ্ধার হাড়-মাংসের ফরেনসিক রিপোর্ট তারা হাতে পেয়েছেন।
আরো পড়ুন : এমপি আনার হত্যাকাণ্ড : আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টু আটক
প্রথমে আদালতের কাছে ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি নেবে তারা। তারপর আবার আদালতে গিয়ে এমপি আনারের রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়দের কলকাতায় ডেকে পাঠানোর অনুমতি চাইবে এবং তা পেলে ডিএনএ পরীক্ষার পালা শুরু হবে। আনারের আত্মীয়দের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে তার সঙ্গে উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরো ও হাড়গোড়ের ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হবে।
তিনি আরো বলেন, এর জন্য কূটনৈতিক অনুমোদন লাগবে। আমরা আশা করছি, এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন আসবেন এবং তার সঙ্গে ডিএনএ মিলিয়ে দেখাই হবে এর শেষ ধাপ। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে কিছু সময় লেগে যাবে।
এ প্রক্রিয়া চলতে থাকার মধ্যে হত্যায় ব্যবহৃত ‘হাতিয়ার’ বা সরঞ্জাম উদ্ধারে মনোযোগ দেবে সিআইডি।
নেপালে গ্রেপ্তার সিয়াম হোসেনই কলকাতা নিউ মার্কেট থেকে হত্যার সরঞ্জাম জোগাড় করেন। সিআইডি শিগগির তাকে সেখানে নিয়ে যাবে। একটি চাপাতির সন্ধান করছেন তারা, যা দিয়ে দেহটি টুকরো টুকরো করা হয়েছিল।
ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা দিতে ভারতের যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন আনারের পরিবারের সদস্যরা। ইতোমধ্যে তাদের ভিসাও হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে আনারের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ জানান, এর আগে ডিবি আমাদের বলেছিল, মাংসের টুকরোগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা শেষ হলে তারা আমাদের জানাবে। এরপর আমরা উনার (আনার) মেয়েসহ (ডরিন) ডিএনএ টেস্টের জন্য কলকাতায় যাব। ঢাকার ডিবি থেকে ফরেনসিক রিপোর্টের বিষয়ে আমাদের এখনো কিছু জানায়নি।
আরো পড়ুন : জামিন মেলেনি শিমুল ভূঁইয়া-তানভীরের
গত ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার। তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস কলকাতায় জিডি করার পর দুই দেশে তদন্ত শুরু হয়। এরপর ২২ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এমপি আনারকে কলকাতার এক বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
ভারতীয় পুলিশের দেয়া তথ্যে বাংলাদেশের পুলিশ, তানভীর ভুঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। অন্যদিকে কলকাতার পুলিশ জিহাদ হাওলাদার নামে এক কসাইকে গ্রেপ্তার করে। আর সিয়ামকে গ্রেপ্তার করা হয় কাঠমান্ডুতে। পরে তাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে নেপালের পুলিশ।
পুলিশ বলছে, এমপি আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী তার বাল্যবন্ধু ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ঝিনাইদহের আখতারুজ্জামান শাহীন। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা ওরফে শিমুল।
আনার কলকাতায় যাওয়ার পরদিন বৈঠক করার জন্য আখতারুজ্জামান শাহীনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানেই আসামিরা তাকে হত্যা করে। শাহীনের সহকারী সিয়ামও এ ঘটনায় ‘জড়িত’ এবং হত্যাকাণ্ডের পর তিনি নেপালে গিয়ে আত্মগোপন করেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
আনার হত্যাকাণ্ডের খবরের দিনই তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন শেরেবাংলা নগর থানায় তার বাবাকে খুনের উদ্দেশে অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে কলকাতায় দায়ের করা হয় হত্যা মামলা।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, এই হত্যাকাণ্ডটি ভারতও তদন্ত করছে, আমাদের পুলিশও তদন্ত করছে। তদন্তের বিষয়ে দুই দেশ একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। যেখানে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে সেখানে তদন্ত হবে। আবার বাংলাদেশের আইনে আছে, বিদেশে যদি কোনো বাংলাদেশি অপরাধ করে থাকে সেই অপরাধীকে বাংলাদেশে এনেও বিচার করা যাবে।
এ মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে গত ১ জুন নেপাল যান ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ। ৪ জুন বিকালে দেশে ফিরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম। এই মামলায় আমাদের ও ভারতের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। দুই দেশের তদন্ত কর্মকর্তারা কাজ করছেন এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে। আমরা তাদের সঙ্গে বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদান করছি।
“সিয়ামকে ভারতের পুলিশের কাছে দিলে আমাদের তদন্তে কোনো সমস্যা হবে না। মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের ঘনিষ্ঠ ও কাছের মানুষ সিয়াম। সিয়ামকে যদি ভারতীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় তাহলে আলামত উদ্ধারের ক্ষেত্রে সে ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে। আমরাও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারব।”
ডরিনের মামলাতেই ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবুকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। হত্যার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে বাবুর কাছে আনারের লাশের ছবি পাঠানো হয়েছিল বলে তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে।