নজরুল ইসালাম
দেশের ব্যাংকগুলো ‘লাল বাতির জ্বালানোর অবস্থায়’

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৪, ০৫:৩৬ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
ক্ষমতাসীনদের লুটপাটে দেশের ব্যাংকগুলো ‘লাল বাতির জ্বালানোর অবস্থায়’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেছেন, আজকে ব্যাংকগুলো লুট হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোতে রঙ দিচ্ছে, কোনটা সবুজ, কোনটা হলুদ, কোনটা লাল। লাল মানে লালবাতি জ্বালানোর অবস্থা হয়ে গেছে। লুট করে নিয়েছে তার মালিকরা। যাকে তাকে ঋণ দিয়ে ফোকলা করে ফেলেছে ব্যাংকগুলোকে।
সোমবার (২৭ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই অভিযোগ করেন। আর সেই মালিকদের বাঁচানোর জন্য সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে কিংবা লাভজনক ব্যাংকের সঙ্গে সেগুলোকে মিলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা করছে।”
নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রতিনিয়ত টাকার মূল্য কমে যাচ্ছে, মাত্র কয়েকদিন আগে এক যোগে এক ডলারের বিপরীতে টাকার দাম সাত টাকা কমানো হয়েছে। ইতিহাসে কখনো এতো বড় মূল্যহ্রাস ঘটে নাই বাংলাদেশী টাকার। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এক’শ পচিশ টাকা লাগছে এখন একটা ডলার কিনতে। আমাদের দেশের ঋণের পরিমাণ হয়ে গেছে এক’শ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তারপরও এই ঋণ। আমার-আপনার এই ঋণ…. আমি ও আপনি ভোগ করতে পারি নাই। এটা মাত্র হাতে গোনা কিছু লোক ভোগ করেছে, ভোগ করে তারা কোটিপতি হয়েছে, বিদেশে কোটিপতি হয়েছে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, দেশের যখন এসব সমস্যা, যখন উপকুলীয় এলাকাগুলোতে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেয়া হয়েছে আমরা পত্রিকায় দেখলাম ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের মধ্যে দেশ তখন দেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে যিনি বসে আছেন তাকে আমরা বলতে শুনলাম এখন আমাদের একমাত্র কাজ হলো একটা খারাপ শব্দ ব্যবহার করে তারেককে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসব।
আরো পড়ুন: ‘সরকার খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে’
ভাবুন, দেশ যখন দুর্যোগের মুখে তখন দেশের মানুষকে বাঁচানো প্রধান কাজ নয়, জনগণের সম্পদ রক্ষা প্রধান কাজ নয়। আমরা সবাই জানি যে, প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। জনগণকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দুর্ভোগ থেকে বাঁচানো সরকারের প্রধান কাজ না। কারণ সরকারের প্রশ্রয়ভুক্ত সিন্ডিকেট এবং দুর্নীতিবাজ মানুষরা দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটছে; এটা তাদের জন্য সমস্যা না। আপনি অসন্তুষ্ট হবেন তাতে সরকারের কিচ্ছু আসে যায় না। এই সরকারের ভোটের কোনো প্রয়োজন নাই।”
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, জেলা সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, মহানগর দক্ষিণের বিএনপির সদস্য ইশরাক হোসেন, যুব দলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরবসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে এই মানববন্ধন হয়।
‘প্রধানমন্ত্রীর রাগ’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, জনগণ বসে নাই। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মূল রাগের কারণটাই এই যে, তারেক রহমান গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করেছেন, জোরদার করেছেন। ইতিহাসে প্রথম বারের মতো ডানপন্থি, বামপন্থি, সমাজতন্ত্রী, ইসলামী দল সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকারের বিরুদ্ধে এমন এক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন যে আন্দোলনের ফলে ১০% লোকও ভোট দিতে যায়নি সরকারকে। এই হলো রাগ।
যার জন্য এই ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস, দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি, টাকার অবমূল্যায়ন, ব্যাংকলুট, রাষ্ট্রীয় দেনা বৃদ্ধি, দুর্নীতি, অনাচার, মানবাধিকার হরণের কারণে দেশের সাবেক সেনা প্রধান, সাবেক পুলিশ প্রধান তারা আন্তর্জাতিক স্যাংশনের মুখে পড়ার পরেও সেগুলোর কোনটাই প্রধান কাজ নয়। একমাত্র কাজ তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি দেয়া।
আরো পড়ুন: সরকার বিপদে আছে: দুদু
তিনি বলেন, ‘আমি অবাক হয়ে যাই, আওয়ামী লীগ কি করে ভুলে যায় তাদের নিজেদের ইতিহাস। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের সময়ে আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাদেরই পাকিস্তানিরা বন্দি করে রেখেছিলো। কিন্তু গণঅভ্যুত্থান ঠেকানো যায় নাই। মাওলানা ভাসানীসহ নেতারা নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সেই গণঅভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব খানকে পদত্যাগ করতে হয়েছে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে হয়েছে, সত্তরে নির্বাচন দিতে হয়েছে, সেই নির্বাচনে বিজয় হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়ও এসেছে।
মানেটা কি দাঁড়ালো? বিরোধী দলকে এবং তাদের নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করে রেখে, তাদের শাস্তি দিয়ে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ঠেকানো যায় না। কারণ লড়াই সংগ্রাম করে জনগণ বিজয় হয় এবং যাদের ওপর অত্যাচার করা হয় তারাই আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ইতিহাস বার বার এটা প্রমাণ করেছে আগামী দিনেও প্রমাণ করবে ইনশাল্লাহ।
তারেক রহমান গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন সফল করেই ‘বীরের বেশে’ দেশে আসবে বলে মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম খান।
ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ মিন্টু, ঢাকা জেলার তজিমউদ্দিন প্রমুখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।