×

পুরনো খবর

৪৮ বছরের বাংলাদেশ গৌরবের নতুন অধ্যায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:০৭ পিএম

৪৮ বছরের বাংলাদেশ গৌরবের নতুন অধ্যায়
   

‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার, সারা বিশ্বের বিস্ময়, তুমি আমার অহংকার।’ লাল-সবুজ পতাকাবাহী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিজয়ের পর প্রায় ৫ দশক হতে চলেছে। ১৬ কোটি জনতা এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। কমেছে অতিদারিদ্র্যের হার। অর্থনীতির দিক থেকে বাংলাদেশ এখন ৪৩তম অবস্থানে। মহাকাশেও উড়ছে বিজয় নিশান। দ্রুতগতিতে এগুচ্ছে মেট্রোরেল, গভীর সমুদ্রবন্দর, টানেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ উন্নয়নের মহাপরিকল্পনার কাজ। সেই সঙ্গে অব্যাহত রয়েছে দল, সরকার ও প্রশাসনে আত্মশুদ্ধির অভিযান। দুর্নীতি-মাদক-সন্ত্রাস-ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতি। ৪৮ বছরে প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তি অনেক। তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে দুর্নীতিমুক্তির চ্যালেঞ্জকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে গত এক দশকে বড় সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ ‘বহুমাত্রিক’ দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ প্রতিবেদন ‘বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই)-২০১৯’ এ এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে ‘বহুমাত্রিক’ দরিদ্র বলতে বোঝানো হয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মানদ-ে একটি পরিবারের সার্বিক পরিস্থিতি। এ তিনটি বিষয়ে ১০টি সূচক রয়েছে। যদি কোনো পরিবারে ১০টি সূচকের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ঘাটতি থাকে, তাহলে তাকে বহুমাত্রিক দরিদ্র বা গরিব বলে বিবেচনা করা হবে। স্বাস্থ্য সূচকের মধ্যে রয়েছে পুষ্টি, শিশুমৃত্যু। মানসম্পন্ন জীবনযাত্রার মধ্যে রয়েছে উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন, নিরাপদ পানি, বিদ্যুৎ ও সম্পদের মালিকানা। আর শিক্ষার মধ্যে রয়েছে স্কুলে উপস্থিতি ও প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে ঠিকই তবে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা শিক্ষার পরিমাণগত অর্জন বাড়াতে সক্ষম হয়েছি কিন্তু গুণগত মানের ক্ষেত্রে এখনো কোথাও কোথাও সক্ষমতা অর্জন করতে পারিনি। গুণগত শিক্ষার দিকে আমাদের নজর বাড়ানো প্রয়োজন।

এদিকে অর্থনীতির আকারের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশে^ ৪৩তম। আর ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় বিশ্বের ৩৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। এই উন্নয়ন এখন বিশ্বস্বীকৃত। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর সামনে রেখে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার কর্মসূচি ‘রূপকল্প-২১’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে।

বাংলাদেশের এই অর্জনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পাশাপাশি ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের মর্যাদায় পৌঁছাতে একটি ভিশন দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে বাংলাদেশ। এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকায় নির্মাণ করছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। মহাকাশে ঠিকানা পেয়েছে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম ১৩০ তলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগও নিয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল নির্মাণ ও একসঙ্গে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ৪৮ বছর আগের উদ্যোক্তাশূন্য বাংলাদেশে এখন লাখো উদ্যোক্তা। দারিদ্র্যের হার ৮৮ শতাংশ থেকে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে নেমেছে। আমদানির পরিমাণ ২২৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা থেকে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৮১ হাজার ৫৫২ কোটি টাকায়। ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ২৬০ কোটি টাকা, বর্তমানে দুই লাখ ৮২ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। ৮০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স ৪৭ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৭৭ কোটি ডলারে। দুই কোটি ডলারের রিজার্ভ এখন ৩ হাজার ৩৩৭ কোটি ডলার। স্বাধীনতার পর প্রথম অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ, এখন ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ।

এদিকে পিপলস এন্ড পলিটিক্স বিশ্বের পাঁচ সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে চিহ্নিত করেছে, যাদের দুর্নীতি স্পর্শ করেনি, বিদেশে কোনো ব্যাংক একাউন্ট নেই; উল্লেখ করার মতো কোনো সম্পদ নেই। সেই ৫ জন সরকারপ্রধানের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, দেশের বাইরে আঞ্চলিক এবং বিশ্বে নেতৃত্বের ভূমিকার কারণে বাংলাদেশকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাশীল করেছে। জাতিসংঘ, জি-সেভেনের মতো আসরে বিশেষ মর্যাদা এ কারণেই। দারিদ্র্যহ্রাস, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণ, আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ প্রভৃতি কারণেই বাংলাদেশ বিশ্ব পরিমণ্ডলে স্বাতন্ত্র্য অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়া এবং সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে বিশ্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশ।

বিজয়ের ৪৮ বছরে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মোট ৪১টি মামলায় সাজা হয়েছে ৯৫ জনের। সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়েছে ৬৮ জনের।

অন্যদিকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহার করে সরকারি সেবা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি দেশের প্রতিটি উপজেলা ইন্টারনেটের আওতায় আনা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ৮১ লাখ। বিদ্যুৎ ব্যবহারভোগীর সংখ্যা ৯৮ শতাংশ। স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বর্তমান সরকার হাঁটছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান ভোরের কাগজকে বলেন, সরকার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। রূপকল্প-২০৪১ এর আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে।

এদিকে পাঁচ দশক পরে এসেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. শান্তনু মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্যের অভাব প্রকট। হিংসা এবং প্রতিহিংসা মারাত্মক। এটা একটি কঠিন অবস্থা আমাদের জন্য। জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য হওয়া প্রয়োজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App