বিশ্ব জলাভূমি দিবস ২০২৫
জলাভূমি হোক 'জীবন্ত সত্তা'

রাসেল আহমদ, মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৪৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
জীববৈচিত্র্য, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও খাদ্যনিরাপত্তার জন্য জলাভূমির ভূমিকা অপরিসীম। জলাভূমির গুরুত্ব অনুধাবন করে ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ইরানের রামসার শহরে পরিবেশবাদী সম্মেলনে জলাভূমির টেকসই ব্যবহার ও সংরক্ষণের জন্য একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি সই হয়। রামসার কনভেনশন হলো বিশ্বব্যাপী জলীয় পরিবেশ রক্ষার একটি সম্মিলিত প্রয়াস। ১৯৭৫ সালে রামসার কনভেনশন চুক্তি কার্যকর হয়। এখন পর্যন্ত ১৭২টি দেশ এ চুক্তি অনুমোদন করেছে এবং পৃথিবীর ২৫৬,১৯২,৩৫৬ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ২,৪৭১টি স্থান আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। রামসার কনভেনশনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে ইউনেস্কো।১৯৯২ সালে বাংলাদেশ রামসার কনভেনশন চুক্তিতে সই করে।
আজ ২ ফেব্রুয়ারি রামসার কনভেনশনের ৫৪ বছর পূর্ণ হলো। এ সময়ে কেমন আছে জলের জীবন এ দেশের মাছ, পাখি, গাছগাছালিসহ অসংখ্য প্রাণ? নৈসর্গিক জলাভূমিকে মানুষ রেখেছে কেমন?
জলাভূমি কি?
বাংলাদেশের জলাভূমি হাওর, বাঁওড়, বিল ও ঝিল নিয়ে গঠিত। ভূকম্পের ফলে সৃষ্ট বিশাল গামলা আকৃতির জলাশয়কে বলে হাওর। বাঁওড় হলো পুরোনো নদীর গতিপথ পরিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্ট জলাশয়। পুরোনো নদীর গতিপথের ধার ঘেঁষে সৃষ্ট জলাধারই বিল। নদীর পরিত্যক্ত খাতকে ঝিল বলে।
হারিয়ে যাচ্ছে জলাভূমি : বিশেষ করে দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের জলাভূমিগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। উজানে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ে খনিজসম্পদ উত্তোলনে অপরিকল্পিত খননের ফলে বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে বেড়েছে মাটি ও বর্জ্যের পরিমান।এসব মাটি ও বর্জ্য এসে হাওরের তলদেশ ক্রমশ ভরাট করছে।২০০৮ সালে পাহাড় ধ্বসে ঢলের সাথে আসা বালু—পাথরে ভরাট হয়ে গেছে টাঙ্গুয়ার হাওরে পানি বয়ে আনা পাহাড়ি খাল 'নয়াছড়া' ও হাওরের 'পঁচাশোল বিল'। প্রতি বছর নতুন নতুন এলাকা ভরাট হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি বালু—পাথরে।এভাবে হারিয়ে যাচ্ছে জলাভূমি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ক্রমেই টাঙ্গুয়ার হাওরেরও বড় একটি অংশ ভরাট হয়ে যাবে। এছাড়া পাহাড়ের খনিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক বর্জ্য ঢলের সাথে নেমে আসে হাওরে। এতে হাওরের কৃষিতে পড়ছে বিরূপ প্রভাব,মাছসহ জলজ প্রাণের করছে বিনাশ ।
বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বলছে, জলাভূমিগুলো দেশের মোট জমির দুই-তৃতীয়াংশ নিয়ে গঠিত। জলাভূমির আয়তন কমে এখন ৪৫ দশমিক ৮৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র প্লাবনভূমিতে প্রায় ২১ লাখ হেক্টর জলাভূমি ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলনিষ্কাশন ও সেচে’ হারিয়ে গেছে।
রামসার সাইটভূক্ত সংরক্ষিত জলাভূমির জীব-বৈচিত্র্যও রয়েছে হুমকিতে: বাংলাদেশের সুন্দরবন ১৯৯২ সালে রামসার অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। যদিও মানবসৃষ্ট মারাত্মক হুমকিতে সুন্দরবন ও তার জীববৈচিত্র্য।
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর ২০০০ সালে রামসার অঞ্চল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।এক সময়ে ২৫০ প্রজাতির পাখি, ১৪১ প্রজাতির মাছ , ১৫০ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং বিভিন্ন প্রকারের জলজ উদ্ভিদসহ হিজল, করচ, বরুণ, নলখাগড়াসহ নানা প্রকারের প্রাণীর অভয়ারণ্য ছিল। সময়ের পরিক্রমায় বিলুপ্তের পথে হাওরে এসব জীববৈচিত্র্য। সরকার টাঙ্গুয়ার হাওর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনগণ ও বিভিন্ন অংশীজনের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা নিয়ে সুফল পেলেও বিভিন্ন মানবসৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাব ঠেকানো যাচ্ছে না।
টাঙ্গুয়ার হাওরে অসাধু চক্র কর্তৃক নিষিদ্ধ জাল ও ইলেকট্রিক ডিভাইস দিয়ে অবাধে মা মাছ শিকার, ফাঁদ পেতে পাখি হত্যা, হিজল-করছ গাছ কেটে উজাড়, ইঞ্জিনচালিত নৌকায় অবাধ বিচরণ ও যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা এসব নানা কারণে দিন দিন বিপর্যয়ের মুখে প্রকৃতির লীলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর। টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। বরং পর্যটন বিকাশের নামে সংরক্ষিত এলাকায় সরকারের গৃহীত উদ্যোগ নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
দেশের মিঠাপানির মাছের অন্যতম বৃহৎ প্রজননকেন্দ্র টাঙ্গুয়ার হাওরে ৮৩ প্রজাতির দেশি মাছ হারিয়ে গেছে বা বিলুপ্তির পথে। সম্প্রতি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ম্যারিটাইম ইউনিভার্সিটির প্রকাশিত গবেষণায় টাঙ্গুয়ার হাওরে দেশি মাছের প্রজাতি কমে যাওয়ার এ বিষয়টি উঠে এসেছে। গবেষণা থেকে জানা গেছে- বাচা, কাজলি, বাতাসি, লাল খলশে, চুচিয়া, ঢেলা, মলা, মহাশোল, গাংমাগুর, চিতল, রিঠার মতো দেশি মাছগুলোর কিছু একেবারেই জেলেদের জালে উঠছে না। আর কিছু প্রজাতির মাছ জালে উঠলেও তার সংখ্যা খুব কম। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের দেশি মাছ রক্ষায় সরকারকে এখানে অবৈধ ও অতিরিক্ত মাছ শিকারের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে হাওরের অবশিষ্ট মাছের দ্রুত বিলুপ্তির আশঙ্কা রয়েছে। 'বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি স্ট্যাটাস অব ফিশ জেনেটিক রিসোর্সেস অ্যাট টাঙ্গুয়ার হাওর ওয়েটল্যান্ড ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, আগে এ হাওর থেকে স্থানীয় জেলেরা ১৪১ প্রজাতির মাছ ধরতেন, তা কমে এখন ৫৮-তে নেমে এসেছে। এর মধ্যে ১৬ প্রজাতির মাছ (২৮ শতাংশ) সহজলভ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ১৮ প্রজাতির মাছ (৩১ দশমিক ০৮ শতাংশ) মোটামুটি পাওয়া যায়। ১২ প্রজাতির মাছ (২০ দশমিক ৬৮ শতাংশ) খুব কম পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। আর ১২ প্রজাতির মাছ (২০ দশমিক ৬৮ শতাংশ) একেবারেই বিরল। পরিমাণে কম পাওয়া এবং বিরল প্রজাতির মাছগুলোকে সংকটাপন্ন হিসেবে ধরা হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ মাছগুলো আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে।
জীববৈচিত্র্যে ভরপুর হাকালুকি হাওরকে তৃতীয় রামসার অঞ্চল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২৩৮টি স্বতন্ত্র বিলসহ এর আয়তন ১৮ হাজার ৩৮৩ হেক্টর। হাকালুকি হাওরে ১৫০ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ, ৫২৬ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে। শীতকালে প্রায় ২০০ বিরল প্রজাতির অতিথি পাখির সমাগম ঘটে।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিনিধি দল প্রতিবছরের মতো এবারও হাকালুকি হাওরে পরিযায়ী জলচর পাখির জরিপ করেছে। গত ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি দু’দিনব্যাপী চলেছে জরিপের কাজ।
বার্ডস ক্লাবের জরিপ তথ্য অনুযায়ী , এ বছর হাকালুকি হাওরের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ৪৫টি বিলে চালানো গণনায় সর্বমোট ৩৫ হাজার ২৬৮টি পাখি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পিংলা বিলে বিশ্বব্যাপী বিপন্ন বেয়ারের ভূতি হাঁস দুটি, নাগুয়া-লরিবাই বিলে বাংলাদেশের বিরল প্রজাতির বৈকাল তিলিহাঁস একটি, প্রায় সংকটাপন্ন ফুলুরি হাঁস তিনটি, মরচে রংয়া ভূতিহাঁস ১ হাজার ৫৮৮টি, উত্তুরে টিটি ৬টি, সংকটাপন্ন কালো মাথা কাস্তেচরা ৩৯৩টি এবং বিশ্বব্যাপী বিপন্ন পাতি ভূতিহাঁস ৯০৯টি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও পিয়ং হাঁস ৫ হাজার ৫৫২টি, উত্তুরে ল্যাঞ্জ্যা হাঁস ৪ হাজার ২৭২টি এবং এশীয় শামুকখোল ৪ হাজার ২২৮টি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
বেয়ারের ভূতিহাঁস গোটা পৃথিবীতে মহাবিপন্ন প্রজাতি। বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনালের মতে, পৃথিবীতে মাত্র ১৯৩ জোড়া বেয়ারের ভূতিহাঁস টিকে আছে। শীতকালের পরিযায়ন মৌসুমে এ হাঁসটি হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার হাওরে আসে। বেয়ারের হাঁসের মতো আরও প্রায় ২০ জাতের বিভিন্ন প্রজাতির ২-৩ লাখ হাঁস হাওর এলাকার জলাশয়গুলোতে আসতো। পাখিশুমারির তথ্য বলছে, প্রতিবছরই পরিযায়ী পাখিদের বিচরণ কমছে।
জলাভূমির সুরক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নেই: জলাভূমির হালনাগাদ তথ্যও নেই। মোট ৩৭৩টি জলাভূমির আয়তন ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬০ হেক্টর। অধিকাংশ জলাভূমিই সুরক্ষিত নয়। এসব জলাভূমিতে কী পরিমাণ জীববৈচিত্র্য এবং হুমকি রয়েছে, তা–ও অজানা। বেশির ভাগ জলাভূমি সংরক্ষিত না থাকায় আইইউসিএনের গবেষণা অনুযায়ী পরিযায়ী পাখির বিচরণ ক্রমশ সংরক্ষিত এলাকায় সীমিত হয়ে আসছে।
সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রয়োজনে জলাভূমি সরকারিভাবে সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানের কথা বলা হয়েছে। সরকার বিভিন্ন দপ্তর-অধিদপ্তরের সৃষ্টি করলেও কার্যকারিতা দৃশ্যমান নয়। সব জলাভূমি সংরক্ষণ করা গেলে পরিযায়ী পাখি এবং অন্যান্য জীববৈচিত্র্যও নিরাপদ হবে।
জলাভূমি নির্ভরশীল জিবন-জীবিকায় চলছে নিদারুণ টানাপোড়ন: জলাভূমি তথা হাওর কৃষক ও মৎস্যজীবীদের জন্য জিবন-জীবিকার বৈচিত্র্যময় ক্ষেত্র। শুধু হাওর অঞ্চলে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ দশমিক ৭২০ লাখ হেক্টর। প্রতিবছর ৫০ লাখ টনের বেশি ধান উৎপাদিত হয়, মূলতই বোরো। আন্তদেশীয় পানি বণ্টনের বৈষম্যমূলক প্রভাবে অসময়ে বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে হাওর অঞ্চল। উচ্চফলনশীল ধানের চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাওরের বাস্তুসংস্থানের সঙ্গে অভিযোজিত দেশি জাত হারিয়ে যাচ্ছে। জলাভূমিগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় ধান উৎপাদনে ভূগর্ভস্থ পানির ওপরও চাপ পড়ছে।
অধিক ফলনের আশায় জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে জলজ প্রাণী ক্ষতির শিকার। এখন ভরা মৌসুমও মাছ পাওয়া যায় কম। জলাভূমির মাছের উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী জীবিকার প্রয়োজনে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাঁধ নির্মাণ করায় এবং জলাভূমি দখল হওয়ায় বাধা পড়েছে পানি নিষ্কাশনে। ফলে জলবদ্ধতা বাড়ছে।
দখল ও ইজারায় মুনাফার থাবা: দিন দিন জলাভূমি দখল হয়ে পড়ছে, বহু জলাভূমি চলে যাচ্ছে ব্যক্তিমালিকানায়। আইনে বলা হয়েছে, উন্মুক্ত জলাধার ইজারা দেওয়া যাবে না। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সংরক্ষিত জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওরেও ইজারাপ্রথা বিদ্যমান। সব বিল ইজারা দেওয়ায় মুনাফার লোভে সব ধরনের আহরণ চলছে।
জলাভূমি বাঁচাতে উদ্যোগ জরুরি: জলাভূমি বাঁচাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। দেশের সব জলাভূমির সংরক্ষণই জরুরি। ভারত থেকে আসা পানি নিয়মিত পরীক্ষা করে বোঝা দরকার খনির বর্জ্য মাছ ও অন্য জীবের কী ক্ষতি করছে। সেটি নিরূপণ করে তার আন্তদেশীয় সমাধান জরুরি।
সবচেয়ে জরুরি, আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে প্রথাগত স্থানীয় জ্ঞানের সম্মিলন। এটি না ঘটলে বিপুল অর্থের অপচয় হবে। স্থানীয় মানুষ সংশ্লিষ্ট বাস্তুসংস্থানেরই অংশ। তাঁদের ঐতিহ্যগত পন্থা ও প্রথাগত জ্ঞান ব্যবহার করলে সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার উভয়ই বাড়বে।
পানিচক্রের দুটো দিক—মজুত ও প্রবাহ। পানির মজুত অস্থায়ী। জলাশয়ের অস্থায়ী মজুতের পরিমাণ নির্ভর করে মানুষের ওপর। প্রাকৃতিক জলাধারের ওপর অত্যাচার, তথা বাঁধ নির্মাণ, ভরাট ও গতিপথ পরিবর্তন অব্যাহত থাকলে পানিচক্রের ভারসাম্য ও ন্যায্যতা নষ্ট হয়। পানির যথাযথ প্রবাহ না থাকলে জীববৈচিত্র্য ও জীবনযাত্রা হুমকিতে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, শুধু প্রকৌশলভিত্তিক সমাধান, তথা বাঁধ নির্মাণ করলেই পানির যথাযথ মজুত বজায় রাখা সম্ভব নয়। বরং জোয়ারাধার থাকলে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশিত হয়ে পলি জোয়ারে ভরাট হয়ে জলবদ্ধতা হয় না।
জলাভূমি হোক জীবন্ত সত্তা: নিঃশব্দে নীরবে জলরাশি মানুষকে অবারিত সম্পদ দিয়েই চলেছে। জলাভূমিকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা সময়ের দাবি। সাগরমাতা থেকে সাগরে তথা পানিচক্রের প্রতিটি স্তরে ন্যায্যতার জন্য নতুন চুক্তি প্রয়োজন। আন্তদেশীয় পানিপ্রবাহের বৈষম্য নিরসন হলে ভাটির পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান টিকতে পারবে। বাঁধ নির্মাণ, দখল বন্ধ করে পানির মজুত ও প্রবাহের ন্যায্য হিস্যায় প্রয়োজন বহুপাক্ষিকতা।