বাংলাদেশে আইন প্রয়োগে নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের আহ্বান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪২ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যেন তাদের কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখে এবং রাজনৈতিক সহিংসতায় অভিযুক্ত করার ক্ষেত্রে আইনের শাসনের প্রতি সম্মান জানায়, তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
এইচআরডব্লিউ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) এইচআরডব্লিউর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।
এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও বিক্ষোভের অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের আগস্টে আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিপীড়ক সরকার। ওই আন্দোলন দমন করতে গিয়ে পুলিশ, বর্ডার গার্ড (বিজিবি), র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িয়ে পড়েছিল।
এইচআরডব্লিউ বলেছে, নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার নিরাপত্তা খাত সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের’ জন্য সরকার সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে মোতায়েন করেছে। অভিযানে প্রায় ২ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের সমর্থক।
এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, দশকের পর দশক ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো নিপীড়নের পর বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি করা উচিত হবে না এবং নিরপেক্ষ আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচার গুলি এবং গণহারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের মতো ঘটনা রয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে একটি ‘বিশৃঙ্খল চিত্র’ তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে ‘জাতীয় ক্ষত সারিয়ে তোলার জন্য জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার জরুরি’।
এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৭ ফেব্রুয়ারি সমর্থকের উদ্দেশে ভারত থেকে বক্তৃতা দেয়ার ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। ওই ঘোষণা ঘিরে সাম্প্রতিক সংঘাত শুরু হয়। যেসব শিক্ষার্থীসহ অন্যরা শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলেন, তারাই আবার বিক্ষোভ শুরু করেন। শেখ হাসিনার পরিবার ও দলের সদস্যদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। বিক্ষোভকারীরা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িও গুঁড়িয়ে দেন।
বিবৃতি অনুযায়ী, এর এক দিন বাদে ৮ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের পর অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা দেয়, ‘পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট’ ব্যক্তিদের এই অভিযানের লক্ষ্যবস্তু করা হবে। ওই ব্যক্তিদের ‘ডেভিল’ বা ‘শয়তান’ বলে আখ্যা দেয়া হয়।
এইচআরডব্লিউ বলেছে, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও বিক্ষোভের অধিকার আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত একটি মৌলিক অধিকার। অন্তর্বর্তী সরকারকে এই অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। এমনকি সাবেক কর্তৃত্ববাদী সরকারের সমর্থকেরাও যদি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেন, তার স্বীকৃতি দেয়া উচিত সরকারের।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ড অনুযায়ী, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর উচিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও বিক্ষোভের অধিকারকে রক্ষা করা এবং এই অধিকারকে এগিয়ে নেয়া। একই সঙ্গে সমাবেশ ও বিক্ষোভ ঘিরে বলপ্রয়োগের আগে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে যতটা সম্ভব অহিংস পথ অবলম্বন করতে হবে।
ড. ইউনূসের সরকারের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, আগামী মার্চে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি প্রস্তাব আনার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। ওই প্রস্তাবে কারিগরি সহায়তা, আরো তদন্ত, পর্যবেক্ষণ এবং জাতিসংঘভিত্তিক মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের দিয়ে প্রতিবেদন তৈরির জন্য অনুরোধ করা যেতে পারে।
মীনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের দমনপীড়নের কারণে বাংলাদেশের জনগণ ক্ষুব্ধ। ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি তাদের প্রাপ্য। তবে এটা অধিকারের প্রতি সম্মান রেখেই করতে হবে। ‘মব’ (উচ্ছৃঙ্খল জনতা) সহিংসতাসহ সব ধরনের অপরাধের সাজা দিতে হবে। তবে সরকার যখন বিরোধীদের ‘ডেভিল’ হিসেবে আখ্যা দেয়, তখন তা নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহারের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।